স্টাফ রিপোর্টার : শিক্ষার নগরীর রাজশাহীতে জনপ্রিয় একটি নাম ইসলামি ব্যাংক নার্সিং কলেজ রাজশাহী। করোনায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এটির পাঠদান স্থগিত ছিল। তবে কলেজ খোলার পরপরই শুরু হয় পরীক্ষা। তারপর পর থেকে এক মাস অতিক্রম করলেও নেয়া হচ্ছে ক্লাস- এমনই দাবি ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজের প্রথম (পুরাতন) বর্ষের শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের দাবি, একটি বছর অনলাইন ক্লাস নিয়ে পার হয়েছে সময়। এমনকি সম্পন্ন হয়েছে প্রথম বর্ষ পরীক্ষাও। তাই তারা চেয়েছিল কলেজ ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারিক ক্লাস। তাতে যদি কিছু হাতে-কলমে শেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, ব্যবহারিক ক্লাস করতে চাওয়ার বিষয়ে কয়েক দফায় যাওয়া হয় অধ্যক্ষের কাছে। কিন্তু অধ্যক্ষ বার বার দেখিয়ে দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে। অধ্যক্ষের কথা শুনে তারা কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিকের কাছে গেলে শিক্ষার্থীদেও গালমন্দ করেন। ক্লাসের ক্যাপ্টেন জুনায়েদ ক্লাসের দাবিটি যৌক্তিক বলায় তাকেও তিনি মা-বাবা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন (প্রশাসনিক কর্মকর্তা)। এসময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে সকলের ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকিও প্রদান করেন এই কর্মকর্তা।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে। এনিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) ভিসি এবং ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের (আইবিএফ) চেয়্যারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে শিক্ষার্থীরা জড়িত কর্মকর্তাকে অবিলম্বে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২ নভেম্বর বিএসসি নার্সিং প্রথম বর্ষের ক্লাস ক্যাপ্টেন জুনায়েদ ক্লাসের সকলের সম্মতিক্রমে পাঠদান চালু ও ল্যাবরেটরিতে ব্যবহারিক ক্লাসের অনুমতি চাইতে অফিসে যান। এসময় তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিক। একপর্যায়ে তার বাবা-মাকে তুলে গালিগালাজ করেন। জুনায়েদের সাথে থাকা সহপাঠীরা এ খবর অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জানালে তারা ক্লাসরুম থেকে অফিসে ছুটে গেলে তিনি তাদেরও ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দেন। তবে ক্লাস নিয়মিতকরণের আশায় তারা কোথাও অভিযোগ দেননি। কিন্তু দীর্ঘ একমাস অপেক্ষার পর তারা আবারও গত ২ ডিসেম্বর সকালে শিক্ষার্থীরা থিউরি ও প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের চালুর দাবিতে অফিসে যায়। পুনরায় তাদের ফিরিয়ে দেন ওই কর্মকর্তা।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, কলেজটিতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিক যোগদানের পর শুরু করেন নানা অনিয়ম। তার নির্দেশনায় কলেজ হোস্টেলে সরবরাহকৃত অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার খেয়ে গতবছর প্রায় ৩০ জন ছাত্রী অসুস্থ হয়ে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু সমস্ত কর্তৃত্ব প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীরের করায়ত হওয়ায় কেউ ওই ঘটনায় মুখ খোলার সাহস করেননি। পরে ছাত্রীদের অনেকে বাধ্য হয়ে হোস্টেল ত্যাগ করেন।
এছাড়াও অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ডিসেম্বরে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হয় কয়েক ব্যাচের মিডটার্ম পরীক্ষা। যার রেজাল্ট এক বছরেও প্রকাশ করা হয়নি। ওই পরীক্ষার কোনো ডকুমেন্ট নেই বলে শিক্ষার্থীদের সাফ জানিয়েন তাদের শেণি শিক্ষক। অথচ প্রায় এক লাখ টাকা পরীক্ষার ফি বাবদ পরিশোধ করেছে শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন পরিচালিত রাজশাহী আইবিএনসিতে বিএসসি বেসিক ও পোস্ট বেসিক এবং ডিপ্লোমা ইন নার্সিং চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ থাকলেও ননটেকনিক্যাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিক সবকিছু দেখভাল করেন। এ কারণে ক্লাস-পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের তার সাথেই যোগাযোগ করতে বলা হয়। মূলত: অধ্যক্ষ পুরোপুরি প্রশাসনিক কর্মকর্তার ওপর নির্ভরশীল। অধ্যক্ষের ওপর তার কর্তৃত্ব রয়েছে। একারণে দাপুটে প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অফিসের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীরাও কেউ ভয়ে কোন কথা বলার সাহস পান না।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, দুর্নীতিবাজ তানভীর সিদ্দিকের কারণে প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। পড়ালেখায় বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ক্লাস বন্ধ থাকায় ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা চিন্তিত। এসব বিবেচনায় তানভীর সিদ্দিককে অবিলম্বে অপসারণের দাবি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের।
এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জুনায়েদ আহম্মেদ (ক্লাস ক্যাপ্টেন) বলেন, ক্লাস না হওয়ায় সবাই আমাকে দরখাস্ত লিখে অধ্যক্ষের কাছে পাঠাই। ম্যাডাম (অধ্যক্ষ) তখন প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীরের কাছে পাঠাই। তখন তিনি কাগজটি ছুড়ে ফেলে দেন এবং সাফ জানিয়ে দেন ক্লাস হবে না। এসময় না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি পরে আমার বাসায় ফোন করে তিনি জানান, আমি নাকি সব বিষয়ে ফেল করেছি এবং পড়াশোনা না করে উৎশৃংখল জীবন-যাপন করি। অথচ, আমার রেজাল্ট সব বিষয়েই ভালো। আর আমি খুব মার্জিত স্বভাবে ছেলে যা আমার বাবা-মা খুব ভালো ভাবেই অবগত।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজশাহী আইবিএনসি‘র প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিক ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাকে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে বা শত্রুতাপূর্বক এসব অভিযোগ দিচ্ছে। আমি যদি দোষী হয়ে থাকি তবে আমার উর্ধ্বতন আমার বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নিবেন আমি তাই মেনে নিবো। এবিষয়ে বেশি কিছু বলার নেই।
এধরণের কোনো ঘটনার কথা জানা নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মোছা. হোসনে আরা খাতুন। তবে শিক্ষক সঙ্কটের কারণে ক্লাস না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা কার বিরুদ্ধে কোথায় অভিযোগ করেছে জানা নেই। তারা অন্তত আমাকে জানাতে পারত। তবে ছোট মানুষ, তাই হয়ত তা এসব না বুঝেই করছে বলে মন্তব্য করেন দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা এই অধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) উপাচার্য (ভিসি) ডা. মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘এমন কোন অভিযোগ আমি পায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোন অভিযোগ যদি হয় তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এবিষয়ে কোন ছাড় হবে না।’
মতিহার বার্তা /এইচ
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.