শিরোনাম :
তরমুজ শুধু খেলে হবে না, গরমে মাখতেও পারেন লজ্জা ঢাকতে শেষমেশ গদি জড়িয়ে ছুটলেন উরফি! ভিডিয়ো ফাঁস হতেই চার দিকে শুরু শোরগোল কাফতান পরা মানেই কি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে সিলমোহর? প্রশ্ন তুললেন পরিণীতি চোপড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে শ্রেণি বৈষম্য করেছে রাবি প্রশাসন! তানোর ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষকের মামলা, তোলপাড় তরুণী সন্ধ্যা রানী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন; সৎ ভাই ও তার বন্ধু গ্রেফতার রাজশাহী বিভাগীয় তায়কোয়ানদো এসোসিয়েশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল- ২০২৪ রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২১ মহানগরীর ছোটবনগ্রামে লোন দেওয়ার নামে প্রতারণা, প্রতারক তাওহীদ খান আটক নৌবাহিনীর প্রধানের সাথে রাসিক মেয়রের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়
রাজশাহী বিএমডিএ’র কোটি কোটি লোপাট, অডিট আপত্তি

রাজশাহী বিএমডিএ’র কোটি কোটি লোপাট, অডিট আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক : নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ভেতরে বর্তমানে চেইন অব কমা- ভেঙ্গে পড়েছে। কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সি-িকেট বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছে। বিপুল অংকের টাকার রয়েছে অডিট আপত্তি। দায়সারা গোছের কোনো কোনো অডিট আপত্তি নিয়েও উঠেছে আপত্তি। বেতন বৃদ্ধি, খাল খনন, কোটেশন, টেন্ডার, বিদ্যুৎ ব্যবহার, ভ্যাট কর্তনসহ নানা কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অডিট টিম অডিট আপত্তি দিলেও একই কাজ করে চলেছেন তারা। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট ও তছরুপাত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এসব অন্যায়-অপকর্মের নাটের গুরুতে পরিণত হয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ সালে অনুমোদিত জনবল অপেক্ষা অতিরিক্ত জনবল নিয়োজিত রেখে বেতন ভাতাদি পরিশোধ করায় কর্তৃপক্ষের ১২ কোটি ৩৯ লাখ নয় হাজার ৩৭৯ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয় রাজশাহীর ২০১৫-১৬ সালের এই হিসাবটি ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত নিরীক্ষা করা হয়। এটি নিরীক্ষা করে বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি অডিট টিম।

এতে অর্গানোগ্রাম, কর্মরত জনবল, আয়-ব্যয় বিবরণী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ড পত্রাদি যাচাই করে নিরীক্ষাকালে অডিট টিম দেখতে পায় যে, বিএমডিএ’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ৭১১টি পদ অনুমোদন পূর্বক কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৭১১টি পদের মধ্যে ৩৬টি কর্মকর্তা ও ৬৭৫টি কর্মচারীর পদ রয়েছে। পরবর্তীতে কিছু পদ কর্মকর্তা (উপ-সহকারী প্রকৌশলী) রুপান্তরিত হওয়ায় মোট কর্মকর্তার পদ দাঁড়ায় ৭৫টি এবং কর্মচারী পদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৩৬টি। উক্ত পদের বিপরীতে ২০১৫-১৬ সালে বিএমডিএ প্রধান কার্যালয় রাজশাহী ও এর আওতাধীন অফিস সমূহে ২৫৪ জন কর্মকর্তা ও ৬৬৯ জন কর্মচারীসহ মোট ৯২৩ জন নিয়োজিত রেখে বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হয়। ফলে অনুমোদিত জনবল অপেক্ষা অতিরিক্ত ১৭৯ জন কর্মকর্তা ও ৩৩ জন কর্মচারীসহ মোট ২১২ জন নিয়োজিত রেখে বেতন ভাতাদি পরিশোধ করায় কর্তপক্ষের উক্ত ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ টাকা এখন পর্যন্ত অনাদায়ী রয়ে গেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।

বিএমডিএ’র নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, উচ্চতর গ্রেডে অতিরিক্ত বেতন-ভাতা গ্রহণ করে পিআরএলে (অবসর) চলে গেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ। বিষয়টি জানাজানি হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরেকটি অংশ পিআরএলে ঝুলে আছেন এবং তারা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। আর বর্তমানে কর্মরত থেকে উচ্চতর গ্রেডে অতিরিক্ত (প্রাপ্যতার চেয়ে বেশি) বেতন-ভাতা গ্রহণ করে চলেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ।

বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের দুটি অডিট টিম বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয় ও রাজশাহী সার্কেলের আওতাধীন ২৩টি এবং প্রধান কার্যালয়ের আওতাধীন রংপুর ও ঠাকুরগাঁও সার্কেলের ৩৩টি দফতর/জোন এর নিরীক্ষা কার্যক্রম চালায়। এরমধ্যে বিএমডিএ’র প্রধান কার্যালয় ও রাজশাহী সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ অফিসার সাইদুর রহমান। আর প্রধান কার্যালয়ের আওতাধীন রংপুর ও ঠাকুরগাঁও সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন অধিফতরের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অডিট টিম ২০১২-১৮ সালের হিসাব নিরীক্ষা করে। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানো হয়। বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের এই দুটি অডিট টিম অডিট করলেও তা নিয়েও আপত্তি উঠেছে। তবে নিরীক্ষাকালে কী পরিমাণ টাকার অডিট আপত্তি উঠে এসেছে সে সম্পর্কে সূত্রটি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে, দায়সারাভাবে এই অডিট করা হয়েছে। এজন্য নূন্যতম ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে অডিট টিমকে উৎকোচ দিতে হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, বিএমডিএ’র বাণিজ্যিক অডিট শাখা পরিচালিত ২০১২-১৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের দায়সারা একটি অডিট করা হয়। আর এই অডিটেই উঠে এসেছে ছয় কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭৯ টাকার অনিয়মের তথ্য। বিএমডিএ’র ২৪টি খাতে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ ও সঠিকভাবে অডিট করা হলে বিভিন্ন খাতসহ বিএমডিএ’তে ওই পাঁচ বছরেই আরো কয়েক কোটি টাকা লোপাটের তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে সূত্রটি দাবি করেছে।

বিএমডিএ’র অডিটে পাঁচ বছরে যেসব অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে- কর্তৃপক্ষের জোন পর্যায়ের ভবনের তৃতীয় তলা সহকারী প্রকৌশলীদের আবাসিক ভবন হিসেবে নির্মাণ করা হলেও তা বরাদ্দ না দিয়ে ফেলে রাখায় সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৩ টাকা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে কর্মকর্তাদের টাইম স্কেলে বেতন নির্ধারণের সময় অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট হিসেবে প্রদানকৃত অর্থ আদায় না করায় সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ৫৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৩৯ টাকা, বাণিজ্যিক হারে ক্রয়কৃত বিদ্যুৎ স্বল্প মূল্যে আবাসিক বাসায় সরবরাহ করায় ক্ষতি তিন লাখ ৩৭ হাজার ১৭ টাকা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিত সহকারী মেকানিকদের ১টি/২টি অগ্রিম বার্ষিক বর্ধিত বেতন প্রদান করায় ক্ষতি আট লাখ ২৬ হাজার ৪৯০টাকা, মেটাল ফাউন্ডারি ইন্ডাস্ট্রিজের বিল থেকে প্রযোজ্য হার অপেক্ষা কম হারে ভ্যাট কর্তন করায় রাজস্ব ক্ষতি তিন লাখ ৪৩ হাজার ৫৫৫ টাকা, বিলম্বে কার্য সম্পাদন করা সত্বেও ঠিকাদারের বিল থেকে বিলম্ব ফি কর্তন না করায় ক্ষতি নয় লাখ ২৪ হাজার ৪৬৩ টাকা। কোটেশনের শর্ত মোতাবেক যোগ্যতা সম্পন্ন দরদাতা না পাওয়া সত্ত্বেও সরকারি বিধিমালা লংঘন করে অযোগ্য ব্যক্তিকে কার্যাদেশ প্রদান করায় ক্ষতি করা হয়েছে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৯৭ টাকা। এভাবে সব মিলিয়ে মোট ২৪টি খাতে ওই পাঁচ বছরে সরকারের ছয় কোটি ৬৯ লাখ ৮৫ হাজার ৫৭৯ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তবে এই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরো কয়েক গুণ বেশি হবে বলে সংস্থাটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী দাবি করেছেন। তাদের দাবি, বিএমডিএর বাণিজ্যিক অডিট শাখা ছাড়াও সরকারি অডিটেও উঠে এসেছে নানা অনিয়মের চিত্র। আবার অডিট কর্মকর্তাদের উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে কখনো কখনো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। একই সঙ্গে দায়সারা অডিটের মাধ্যমে কাউকে কাউকে কিছুটা দায়মুক্তি দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে বলেও অভিযোগ করেন একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।

জানতে চাইলে বাণিজ্যিক অডিট অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অধিফতরের নিরীক্ষা ও হিসাব রক্ষণ অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইদুর রহমান তারা দু’জনই বলেন, এ ধরণের অভিযোগ সঠিক নয়। ভাবমূতি নষ্ট করতে বানোয়াট অভিযোগ করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

এদিকে, বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে রাজশাহী শ্রম আদালতে বর্তমানে একটি ফৌজদারী মামলাটি বিচারাধীন। এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকি-ধামকি দেওয়া, হয়রানি, খারাপ আচরণ করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে বিএমডিএ’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ বলেন, কাজ করতে গেলে অনিয়ম, অডিট আপত্তি উঠবে। আবার সেসব নিষ্পত্তিও হবে। তবে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।

জানতে চাইলে বিএমডিএ’র হিসাব রক্ষণ অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রোকনুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, দুর্নীতি-অনিয়মের বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কথা বলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

বিএমডিএ’র অডিট অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বাসুদেব চন্দ্র মহন্ত বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতর অভিযোগ সঠিক নয়। অডিট টিমকে কোনো উৎকোচ দেওয়া হয়নি। এছাড়া আমরাও কোনো উৎকোচ গ্রহণ করিনি।

মতিহার বার্তা ডট কম  ২৪ আগস্ট  ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply