নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে পাটের দাম কমতে শুরু করেছে। বেশি আবাদ করে সোনালি আঁশে এই অঞ্চলের চাষিরা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
পাট চাষি ও কৃষিবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সরকারিভাবে খাদ্যশস্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক ঘোষনাসহ পাটপণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় কদর বেড়েছে পাটের। গত দুই বছর ভাল দাম পাওয়ায় রাজশাহী অঞ্চলে পাটের সুদিন ফিরে আসতে শুরু করে। ফলে রাজশাহীতে পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবারও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি খরিপ-১ মৌসুমের শুরম্নতে এখানে ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার পাটের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে বলে চাষিরা জানায়। তাদের হিসাব মতে পাটের আবাদ করতে বিঘায় সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
পাট উৎপাদন হয়েছে বিঘায় ৮ থেকে ১০ মন। বর্তমানে চাষিরা হাট-বাজারগুলোতে পাট বিক্রি শুরু করেছেন। গত বছরের চেয়ে এবার পাটের দাম মন প্রতি প্রায় ৫শ’ টাকা কম হওয়ায় চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার মৌসুমের শুরুতে বাজারে প্রতিমন পাট বিক্রি হয়েছে ১৮শ’ থেকে ১৯শ’ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪শ’ টাকা থেকে ১৬শ’ ৫০ টাকায়। কোন কোন এলাকায় এর চেয়েও কম দামে পাট বিক্রি হচ্ছে। গত বছর প্রতিমন পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে ২১শ’ টাকায়।
পাট চাষিরা মনে করেন, মধ্যসত্বভোগী ও বেসরকারি পাটকল মালিকরা সিন্ডিকেট করে পাটের দাম কমিয়েছে। এই সিন্ডিকেট না থাকলে পাটের দাম আরো বেশি হতো।
তাছাড়া সরকার মৌসুমের শুরুতে ধান-চাল-গমের মত পাটেরও দর নির্ধারন করে দিলে চাষিরা পাটের নায্যমূল্য পেত। এজন্য তারা উঠতি মৌসুমে পাটের দর নির্ধারনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পবার কর্নহারের পাট চাষি জাইদুর রহমান জানান, এবার তিনি ৮ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। গতবছর পাটের দাম ভালো থাকায় এলাকার অনেকেই এবার পাট চাষ করেছে। কিন্তু এখন এসে পাটের দাম কমে যাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। এজন্য তারা পাটের নায্যমূল্য প্রাপ্তিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
রাজশাহীর কাটাখালিস্থ সরকারি জুটমিলের একটি সূত্র জানায়, তারা মিলগেটে চাষিদের কাছ থেকে পাট কিনছেন। পাটের কোয়ালিটি অনুযায়ি বিজিএমসি নির্ধারিত তিনটি দর দেয়া হচ্ছে।
এসএমআর-১৭শ’ টাকা, ক্রো- ১৮শ’ টাকা ও ইসি- ২ হাজার টাকা। অথচ রাজশাহীর ৬টি বেসরকারি জুটমিল কর্তৃপক্ষ হাট- বাজারগুলো থেকে এরচেয়ে অনেক কমদামে পাট কিনছে।
রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক সামশুল হক বলেন, চাষিরা গতবারের চেয়ে এবার কম দামে পাট বিক্রি করছে। সরকার ধান-চাল-গমের মত দর নির্ধারনের ব্যবস্থা করলে চাষিরা পাটের ভালো দাম পেত।
রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারন অধিদপ্তর জানায়, এবার রাজশাহীতে পাটের আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৯৮ হেক্টর জমিতে। গত বছর পাটের আবাদ হয়েছিল ১২ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৭ হাজার বিঘা বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
মতিহার বার্তা ডট কম ০১ মেপ্টেম্বর ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.