শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
স্কুলছাত্রী হত্যা : প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ

স্কুলছাত্রী হত্যা : প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ

মতিহার বার্তা ডেস্ক: পঞ্চগড়ের আটোয়ারীতে সাদিয়া সামাদ লিসা নামে এক স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন কিশোরের নামে শুক্রবার রাতেই মামলা করেছেন তার বাবা আব্দুস সামাদ।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় অভিযুক্ত লিসার সহপাঠি সাদ ও নবম শ্রেণির আকাশকে রাতেই গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তবে প্রধান অভিযুক্ত কিশোর সাদ পলাতক রয়েছে।

 শনিবার সকালে গ্রেফতার দুই কিশোরকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়। পুলিশের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামীকাল রোববার শুনানি হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রধান অভিযুক্ত সাদকে গ্রেফতারসহ উপযুক্ত বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে লিসার সহপাঠিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। শনিবার সকালে লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে তারা আটোয়ারী থানার সামনে এই বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা সাদকে গ্রেফতারের তিন দিনের আলটিমেটাম দেয়। অন্যথায় উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুশিয়ারি দেয় তারা।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধায় নিখোঁজের পরদিন ভোরে বাড়ির পাশেই পুকুর থেকে স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনাটি রহস্যজনক বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত কিশোরদের পরিবারসহ স্থানীয় একটি পক্ষ। কারণ ওইদিন রাতে অভিযুক্ত তিন কিশোরকে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দাবি, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা বের করতে হবে।

শুক্রবার সকালে আটোয়ারী উপজেলা শহরের ছোটদাপ এলাকায় বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় লিসার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধায় নিখোঁজ হয় সে। লিসা ওই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আব্দুস সামাদের মেয়ে এবং আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।

নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবার জানায়, লিসাকে প্রতিবেশি সহপাঠি সাদ প্রায় উত্তক্ত করতো এবং প্রেমের প্রস্তাব দিতোত। এতে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে একাধিকবার তাকে নানাভাবে হুমকিও দেয় সাদ। তাকে নিয়ে সম্প্রতি সাদ এবং তার বন্ধু আকাশের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটে। এরপর ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার দুপুরের পর লিসার বাড়িতে এসে সবার সামনে তাকে কিছু একটা করার হুমকি দেয় সাদ। সাদের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় লিসাকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়েছে বলে দাবি স্কুলছাত্রীর পরিবারের।

এদিকে অভিযুক্তদের পরিবার ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, কিশোর আকাশের সাথে লিসার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল। তবে সহপাঠি সাদও লিসাকে পছন্দ করতো। এরই মধ্যে সাদের সাথে লিসাকে কথা বলতে দেখে আকাশ ক্ষেপে যায় এবং সাদকে মারপিট করে। এই মারপিটের ঘটনাটি লিসার বাসায় গিয়ে তার পরিবারকে জানায় সাদ। এ নিয়ে লিসার মার সাথে সাদের মায়ের কথা কাটাকাটিও হয়।

এর আগে আকাশ বাড়ি থেকে লুকিয়ে নিয়ে একটি মোবাইল ফোন লিসাকে ব্যবহারের জন্য দেয় বলে জানা গেছে। বিষয়টি লিসার বাড়িতেও জানাজানি হয়। আকাশ এবং সাদকে নিয়ে এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছিল লিসার পরিবার। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধায় নিখোঁজ হয় লিসা। এ ঘটনার পর লিসাকে খুঁজতে বের হয় তার পরিবার। রাতে আকাশের বাড়ি যান লিসার পরিবারের সদস্যরা। সে সময় আকাশ বাড়িতেই ছিল। একই সাথে সাদ ও মুন্নাকেও ডেকে আনা হয়।

অভিযুক্ত তিনজনকেই রাতে স্থানীয় সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যানের বাসায় আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রাতভর তিন কিশোর সেই বাড়িতেই ছিল। এর মধ্যে ভোরে লিসার লাশ পুকুরের পাওয়ার কথা শুনে সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় সাদ। কিশোরদের পরিবারের দাবি, অভিযুক্ত স্কুল পড়ুয়া শিশু কিশোররা এই মৃত্যুর সাথে জড়িত নয়। আকাশের সাথে লিসার সম্পর্ক এবং সাদকে নিয়ে পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট এবং পুলিশের সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে।

নিহত সাদিয়ার মা খায়রুন নাহার বলেন, সন্ধায় বাড়িতেই ছিল লিসা। কিছুক্ষণ পরে তাকে বাসায় না পেয়ে লোকজন নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। আশপাশের সব স্থানেই তাকে খোঁজা হয়। এর আগে মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব এবং হুমকির কথা ভেবে রাতে প্রতিবেশি কিশোর আকাশ, সাদ ও মুন্নাকে ডেকে আনা হয়। তাদের তিন জনকে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান গোলাপের বাড়িতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে সেখান থেকে সাদ পালিয়ে যায়। তারাই আমার মেয়ের হত্যার সাথে জড়িত। আমি এদের বিচার চাই।

সাদের বাবা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, বৃস্পতিবার আমার ছেলে সাদ লিসা নামে ওই মেয়ের সাথে কথা বলেছিল। এই অপরাধে আকাশ নামে ওই কিশোর তাকে মারধর করে। এ ঘটনার বিচার দিতে সাদ মেয়েটির বাড়িতে যায়। এরপর বৃস্পতিবার সন্ধায় আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায় সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান। এরপর সে আর বাড়ি ফিরেনি। শুনেছি, ভোরে মেয়েটির লাশ উদ্ধারের কথা শুনে সে পালিয়ে গেছে। এসব ঘটনা বিবেচনা করলে আমার ছেলে যে নির্দোষ তার প্রমাণ হবে। আমি আশা করি পুলিশ সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বের করবে।

আটোয়ারী থানা পুলিশের ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তার বাবা বাদি হয়ে তিন কিশোরকে আসামি করে মামলা করেছেন। এদের মধ্যে আটক দুজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তাদের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রোববার রিমান্ড আবেদনের শুনানী হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া মূল অভিযুক্ত কিশোর সাদকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে।

মতিহার বার্তা ডট কম – ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 

 

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply