শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
নিয়োগ কমিটির আগেই রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী হারুনের চাকুরী নিয়ে প্রশ্ন!

নিয়োগ কমিটির আগেই রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী হারুনের চাকুরী নিয়ে প্রশ্ন!

নিয়োগ কমিটির আগেই রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী হারুনের চাকুরী নিয়ে প্রশ্ন!
উত্তর বঙ্গের কুখ্যাত হেরোইন ব্যবসায়ী মাদক সম্রাট শীষ মোহাম্মদ এর সাথে রুয়েট সহকারী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদক (রাজশাহী-রাব্বানী): রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) অনিয়মের মাধ্যমে সহকারী প্রকৌশলী পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হারুন অর রশিদ নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

গত বছর অক্টোবরে নিয়োগ কমিটি গঠনের আগেই নিয়োগ দেয়া হয় রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হারুন অর রশিদকে। অভিযোগকারীদের দাবি, হারুনকে নিয়োগ দেয়া নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও কর্তৃপক্ষ তা আমলে নেয়নি।

তারা বলেন, অনুমোদনবিহীন কমিটি কখনও কাউকে নিয়োগ দিতে পারে না। এ নিয়োগ কখনও বৈধ বলেও বিবেচিত হতে পারে না।
রুয়েটের বিধি অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ড গঠনের পর সিন্ডিকেটে সেটি অনুমোদন করা হয়। কিন্তু নিয়োগ বোর্ড অনুমোদন হওয়ার আগেই হারুনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এ নিয়োগের নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছর ২৭ আগস্ট রুয়েটের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকসহ সহকারী প্রকৌশলী (যন্ত্র) পদে নিয়োগের জন্য জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রবিউল আউয়াল, রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক শহীদুর রহমান ও হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আফজাল হোসেনকে নিয়োগ কমিটির সদস্য করা হয়।

একই বছরের ১১ অক্টোবর কমিটির সদস্যদের কাছে পাঠানো চিঠিতে ১৩ অক্টোবর রুয়েটের ভিসির দফতরে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়।

রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সেলিম হোসেনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, রুয়েটের সহকারী প্রকৌশলী (যন্ত্র) পদে নিয়োগের বোর্ড হবে। রুয়েট কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে এ নিয়োগ বোর্ড গঠন করলেও বিধি মোতাবেক তা একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন নেয়া হয়নি।

অনুমোদনবিহীন নিয়োগ কমিটির সদস্যরা ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর রুয়েটের ভিসির দফতরে উপস্থিত হয়ে সহকারী প্রকৌশলী পদের নিয়োগ সম্পন্ন করেন। ছাত্রলীগ নেতা হারুনকে নিয়োগ দিতে ওইদিনই সিন্ডিকেটে সুপারিশ করা হয়।

নিয়োগ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ পদের জন্য ১২ জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অনুমোদনহীন নিয়োগ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পরদিন ১৪ অক্টোবর সিন্ডিকেটের ৮৩তম সভার সূত্র উল্লেখ করে নিয়োগ কমিটির অনুমোদন দেখায় রুয়েট কর্তৃপক্ষ। বোর্ড বসিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও নিয়োগ কমিটির সদস্যদের আবার চিঠি দেয়া হয়।

রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর চিঠি দিয়ে অধ্যাপক শহীদুর রহমান ও অধ্যাপক আফজাল হোসেনকে নিয়োগ কমিটির সদস্য করা সম্পর্কে অবহিত করেন। এর আগে নিয়োগ কমিটির আরেক সদস্য রবিউল আউয়ালকে চিঠি দেয়া হয়।
নিয়োগপ্রাপ্ত হারুন অর রশিদ জানান, তার নিয়োগে কোনো অনিয়ম হয়নি।

যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই তিনি নিয়োগ পেয়েছেন। কমিটির অন্যতম সদস্য ও রুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক রবিউল আউয়াল জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। তবে রুয়েটের রেজিস্টার দফতর ভালো জানে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন বলেন, হারুনের নিয়োগ নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাই না। অফিসে এলে দাফতরিক কাগজপত্র দেখানো হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না এবং নিয়োগ বোর্ড অবৈধ ছিল কি না- এমন প্রশ্ন করতেই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

এদিকে, মাদক মাফিয়া শীষ মোহাম্মদের ঘনিষ্টজন রুয়েট কর্মকর্তা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হারুন অর রশিদ নিয়োগ প্রাপ্তির পর থেকেই রুয়েটকে তার সিন্ডিকেটের নিকট জিম্মি করে ফেলে। ঠিকাদারী কাজ, বিভিন্ন সাপ্লাই তার মনোনিত ঠিকাদারদের পাইয়ে দেন হারুন। আর নেপথ্যে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাগ ও ককাজের কমিশন পান তিনি। আর এ ভাবেই অল্প সময়ের মধ্যে সে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) ছাত্র কল্যান পরিচালক ও টেন্ডার কমিটির সভাপতি’র সাথে হারুনের যোগসাজসে কোটেশনের কাজগুলি করছে, রাবি কর্মচারী মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক (টেন্ডার মানিক) ও রনি।

মানিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্ভেয়ার পদে চাকরি করেন। তবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েটে) বড় বড় কাজের ঠিকাদারি করেন বেনামে। এখন তিনি বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক। নির্মাণ করেছেন আলিশান বাড়িও। কিছুদিন পরপরই দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ান। থাকেন পাঁচ তারকা হোটেল-রিসোর্টে।

রুয়েয়েটে প্রকৌশল শাখার একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে টেন্ডার মানিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে নিজেই রুয়েটে প্রায় ৭২ লাখ টাকার ছয়টি কাজ করছেন।

এর মধ্যে রয়েছে আইকন এন্টারপ্রাইজের নামে ৩৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা, মেসার্স জনি ট্রেডার্সের নামে ৬ লাখ ২৬ হাজার, মেসার্স মাবরুকা ট্রেডার্সের নামে ১২ লাখ ৭৩ হাজার, বসুন্ধরা এন্টারপ্রাইজের নামে ১১ লাখ ৭০ হাজার ও মুক্তার হোসেনের নামে ৫ লাখ ৮২ হাজার টাকার কাজ। টেন্ডার ছাড়াই কোটেশনের মাধ্যমে এসব কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন টেন্ডার মানিক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের এক ঠিকাদার জানান, টেন্ডার মানিকের পার্টনার রুয়েটের গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক, অফিসার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মুফতি মো. রনি এবং রুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী, অফিসার্স সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ।

আর নেপথ্যে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার কাজ দিচ্ছেন ছাত্র কল্যান পরিচালক ও টেন্ডার কমিটির সভাপতি। তারই আর্শিবাদে সরকারী কর্মচারীরা এখন ঠিকাদার। আজও বহাল তবিয়তে দাপটের সাথে ঠিকাদারি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে ভূক্তভোগী বেকার হয়ে পড়া ঠিকাদাররা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে রুয়েট প্রশাসনকে অনেকটা জিম্মি করেই ওই দুই কর্মকর্তা টেন্ডার আহ্বান ছাড়াই দুর্নীতির মাধ্যমে টেন্ডার মানিকের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার কাজ করেন। মতিহার থানা আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানিয়েছেন, রাবিতে চাকরি করলেও মানিক দিনের বেশির ভাগ সময় কাটান কর্মস্থলের বাইরে রুয়েটে।

রুয়েটের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সম্প্রতি রুয়েটের শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও উপকরণের জন্য ৩৪০ কোটি ১৩ লাখ টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।

এই প্রকল্পের আওতায় রুয়েটের তিনটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি ইন্সটিটিউট ভবন, একটি করে ছাত্রছাত্রী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল পাঁচতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ, একটি শিক্ষক কোয়ার্টার, একটি শিক্ষক ডরমেটরি, একটি অফিসার্স কোয়ার্টার, একটি স্টাফ কোয়ার্টার, মেডিকেল সেন্টার ভবন ও উপাচার্যের বাসভবন নির্মাণ করা হবে।

রুয়েটের এই ব্যাপক উন্নয়ন কাজ অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে টেন্ডার মানিক, হারুন ও রনিসহ রুয়েটের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।

ইতিপূর্বে ঠিকাদার হিসেবে রুয়েটের মূল ফটকটি নির্মান কাজ করেছেন টেন্ডার মানিক। অভিযোগের বিষয়ে মোহাইমিনুল ইসলাম মানিক বলেন, আমার নামে কোনো ঠিকাদারি লাইসেন্স নেই। আমি কোনো ঠিকাদারি কাজের সঙ্গেও জড়িত নই। তবে চাকরির আগে বিএমডিএতে ঠিকাদার জাকারিয়া নামে এক ঠিকাদারের সঙ্গে কাজ করতাম।

এ সকল অনিয়মের বিষয়ে রুয়েটের ভিসি’র নিকট মুঠো ফোনে জানতে চাইলে, তিনি একেক সময় একেক কাজের কথা বলে ব্যস্ততা দেখান এবং প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
রুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী, অফিসার্স সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ। তিনি কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী শীষ মোহাম্মদের ঘনিষ্ঠজন। জানা গেছে, এক সময় জামায়াত করতেন এ কর্মকর্তা। এবং শীষ মোহাম্মদের আর্শিবাদে তিনিও নিজ এলাকায় দাপটের সাথে রাজনীতি করতেন।

এছাড়াও শীষ মোহাম্মদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষক কর্মকর্তা এবং রাবি কর্মচারী টেন্ডার মানিক নামের ছাত্রদলের এক নেতার ও সখ্যতার খবর পাওয়া গেছে।

শীষের সাথে তাদের একাধিকবার ভারত সফর, একাধিকবার কক্সবাজার ভ্রমন, একসঙ্গে সুইমিং পুলে গোসল ছাড়াও রাজশাহী নগরীতে আড্ডা দেওয়ারও বেশ কিছু নজির রয়েছে। তবে রুয়েট কর্মকর্তা হারুনের সঙ্গে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও মাদক স¤্রাট শীষ মোহাম্মদের সবচাইতে ঘনিষ্টজন কর্মকর্তা হারুন।

মতিহার বার্তা ডট কম – ০১ নভেম্বর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply