চারঘাট প্রতিনিধি : নানা দিনমজুর, তবু এপর্যন্ত নাতনিকে পড়ালেখার খরচ জুগিয়েছেন দিনমজুরি করে। নাতনি এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু নাতনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর আর্থিক সামর্থ্য নেই তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে সংশয়ে নানা; শঙ্কিত নাতনিও।
চারঘাট উপজেলার ঝিকড়া আবাসনে বসবাসরত দিনমজুর জালাল উদ্দীনের মেয়ে বৃষ্টি খাতুন। ছোটবেলা থেকেই অনুপামপুর গ্রামে নানা আকসেদ আলীর কাছে থেকে বড় হয়েছেন। এবার ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধাক্রমে ১৭৯২ তম হয়েছেন তিনি। আগামী ১৩ই নভেম্বর ‘খ’ ইউনিটে মৌখিক পরীক্ষা আছে বৃষ্টির। ভর্তির টাকা দূরে থাক, ১৩ই নভেম্বর ঢাবিতে আসা-যাওয়ার টাকারই ব্যবস্থা হয়নি তার।
এবছর এইচএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান বৃষ্টি। কিন্তু ঢাবিতে ভর্তির ফরম পূরণের টাকাও পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে তার নানা আকসেদ আলী অতি কষ্টে নিজের কিছু সঞ্চয় ও অনেকের সহযোগিতায় ফরম তোলেন।
বৃষ্টির বাবা জালাল উদ্দীন দিনমজুর ও মা চম্পা বেগম গৃহিণী। সামান্য আয়ে চার জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় জালালকে। ছোট মেয়েও ৯ম শ্রেনীতে পড়াশোনা করে। দুই মেয়ের খরচ জোগাতে না পেরে বড় মেয়ে বৃষ্টিকে নানা-নানীর কাছে রেখেছেন তিনি।
আজ সোমবার (০৪ নভেম্বর) সকালে বৃষ্টির নানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ মাটির দেয়াল ঘরে নানা-নানী ও বৃষ্টির বসবাস। ভবিষ্যতের কথা জানতে চাইলে বৃষ্টি নিজের চাপা কান্না লুকানোর চেষ্টা করেন। ২০১৭ সালে স্থানীয় অনুপামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে সব কয়টি বিষয়ে জিপিএ-৫ পান। এরপর ২০১৯ এইচএসসিতে সরদহ সরকারী মহাবিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেন।পড়াশুনার খরচ কমাতে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
বৃষ্টির নানা আকসেদ আলী বলেন, ‘বাড়ি-ভিটের জমিটুকুই আমার সম্বল।কখনো কৃষি জমিতে, কখনো ইটভাটায় কাজ করি। এখন এই বৃদ্ধ বয়সেও রাতে পুকুর পাহারা দিই। সামান্য আয়ে সংসার চলে না, খেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। ধার-দেনা করে চিকিৎসা চলে। আমার পক্ষে নাতনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো অসম্ভব। সমাজের বিত্তবান কেউ যদি আমার নাতনির ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ বহনে হাত বাড়িয়ে দেন, তাহলে আমার নাতির স্বপ্ন পুরণ হয়।’
বৃষ্টির মা চম্পা বেগম বলেন, ‘স্বামীর আয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। দুঃখ, কষ্টে দুই মেয়ে লেখাপড়া করছে। বড় মেয়ে ভালো ফলাফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ আনন্দে বুক ভরে যায়। কিন্তু আনন্দ নেই আমাদের। ওর নানা বৃদ্ধ মানুষ। বৃষ্টির ভর্তি, আবাসিক ব্যবস্থা ও অন্যান্য যে সব খরচ লাগবে, কিভাবে বহন করবো, ভেবে পাচ্ছি না।’
বৃষ্টি খাতুন বলেন, ‘কলেজ ও স্কুলের স্যারদের সহযোগিতা পেয়েছি। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেছি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। কিন্তু এখন আর সামনে আগানোর উপায় দেখছি না। তবে টিউশনি করে হলেও আমি পড়তে চাই।’ ইংরেজি ও আইন বিষয়ে পড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা শিক্ষকতা করার ইচ্ছে বৃষ্টির। এজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মুহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, আর্থিক সংকট বৃষ্টির স্বপ্ন পুরনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। যদি সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করে থাকে তবে উপজেলা প্রশাসন ভর্তি হতে তাকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করবে।
মতিহার বার্তা ডট কম – ০৪ নভেম্বর ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.