কম বয়সে বিয়ে দিয়েও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা

কম বয়সে বিয়ে দিয়েও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা

কম বয়সে বিয়ে দিয়েও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা
কম বয়সে বিয়ে দিয়েও মেয়েকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক : স্কুলে যাওয়া আসার পথে বখাটেরা বিরক্ত করত। বাড়িতে ঢিল পড়ত, সকালে উঠে দেখা যেত রান্নার চুলার মধ্যে পানি। রাতে ঘুমিয়ে থাকলে কড়া নেড়ে কে বা কারা পালিয়ে যেত।

পবা উপজেলার ডাঙেরহাট গ্রামের দরিদ্র ট্রাক শ্রমিক বাবা শাহীন আলী মেয়ের লেখাপড়ার খরচও কুলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। এসব কারণেই কম বয়সে বিয়ে দেয়া হয়েছিল মেয়েটির’। কথাগুলো বলছিলেন অকালে প্রাণ হারানো পূর্ণিমার দাদী জাহানারা বেগম।
জানা গেছে, মাসখানেক আগে পেয়ে যান মনমত ছেলে। ছেলে পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামের ইনসার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রুমন। রুমন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়। দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠান করে মেয়েকে জামায়ের হাতে সঁপে দিয়ে কন্যাদায় মুক্ত হয়েছিলেন বাবা। পরদিন শুক্রবার নিকটাত্মীয়দের নিয়ে গিয়েছিলেন মেয়েকে আনতে। পদ্মাপাড়ি দিয়ে সন্ধ্যায় ফেরার পথে নৌকাডুবিতে পদ্মার অতলে তলিয়ে যায় কিশোরী বধূ।
চারদিন পর সোমবার সকালে নগরীর কাটাখালি থানাধীন পদ্মার শাহাপুর ঘাট এলাকা থেকে তার ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কচি হাতে তখনো মেহেদীর রঙ। গয়না, বিয়ের বেনারসি পরণেই ছিল। শুধু ছিল না প্রাণপাখি। সোমবার দুপুরের দিকে বাড়ির পাশেই তার মরদেহ দাফন করা হয়।

দুর্ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন পূর্ণিমার স্বামী রুমন। তিনি জানান, প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করেছিল পূর্ণিমা। তার স্বামী আসাদুজ্জামান রুমন বলেন, ডুবে যাবার আগে অন্তত দুবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বাঁচানোর জন্য বলেছিল। কিন্তু যখনই আমাকে ধরছিল আমি ডুবে যাচ্ছিলাম।

পরে যখন উদ্ধারের জন্য বালিবাহী নৌকাটি এল, তখন আর তাকে খুঁজে পাইনি। চাচী মনি বেগমকে ধরে বাঁচার চেষ্টা চালায় পূর্ণিমা। মনি বলেছিলেন, আমার ছেলেকে নৌকায় তুলে দিয়ে তোমাকে তুলছি। মনি কোনোমতে তার ১২ বছরের ছেলেকে নৌকায় তুলে দেন। পরক্ষণে তিনিও তলিয়ে যান পদ্মার অতলে। পরে মনি, তার স্বামী ও মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাবা শাহীন আলীর কাছেও বাঁচার আকুতি জানিয়েছিলেন ডুবন্ত পূর্ণিমা। ওই সময় শাহীন তার ছয় বছর বয়সী মেয়ে রাখিকে নৌকায় তুলছিলেন। পরে পূর্ণিমার দিকে যেতে গিয়ে ডুবতে থাকা নৌকার ইঞ্জিনে আঘাত পান শাহীন। এতে তার পা ভেঙে যায়। এক পর্যায়ে পানির তোড়ে ভেসে যায় পূর্ণিমা।

কোনো রকমে প্রাণে বেঁচেছেন শাহীন আলী। ভাঙা পা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। বৌভাত শেষে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর এলাকার দুই মাছধরা নৌকায় পদ্মা পাড়ি দিচ্ছিলেন বর-কনেসহ ৪২ জন। অতিরিক্ত যাত্রী এবং আচমকা দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে মাঝ নদীতে ডুবে যায় নৌকা দুটি।
তাৎক্ষণিকভাবে বরসহ ৩৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেন উদ্ধারকারীরা। মর্মান্তিক এই নৌকাডুবিতে পূর্ণিমা ছাড়াও মারা গেছেন তার চাচা শামীম, শাামীমের স্ত্রী মনি বেগম, তাদের মেয়ে রশ্নি, পূর্ণিমার দুলাভাই রতন আলী, তার মেয়ে মরিয়ম, পূর্ণিমার খালা আঁখি খাতুন, ফুপাতো বোনের ভাগ্নি রুবাইয়া খাতুন, ও খালাতো ভাই এখলাস।

স্থানীয় জেলেদের নিয়ে টানা ৬২ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ নৌপুলিশ ও বিজিবি। পরে বিআইডব্লিউটিএ এর ডুবুরিদল অভিযানে যুক্ত হয়। অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় কেন্দ্র খুলে পুরো কার্যক্রম সমন্বয় করা হয়। সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক।

মতিহার বার্তা ডট কম –১০ মার্চ , ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply