মোঃ শাহানুর আলম বাবু : বর্ষায় যে রাস্তা দিয়ে হাঁটুসমান কাদা ডিঙিয়ে আসা-যাওয়া করতে হতো কোমলমতি স্কুল ছাত্রছাত্রীদের, যে রাস্তায় চলতে বিরক্তবোধ করতো যুবা থেকে বৃদ্ধরাও, সেই রাস্তা পাকা হবার খবরে আনন্দে ভেসেছিল গ্রামবাসি। কিন্তু গ্রামবাসির সে সপ্ন চির ধরেছে মাত্র দেড় মাসেই। উদ্ভোধনের আগেই ধস দেখা দিয়েছে সপ্নের সে রাস্তায়। পাকা করার কাজ শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ ঘুচে যাওয়ার আশা তো দুরের কথা, এখন ভাঙ্গা রাস্তায় চলাচলের দুঃচিন্তায় দিন কাটছে এলাকার জনসাধারনের।
উদ্বোধনের আগেই রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় ধস দেখা দেওয়ায় আবারও তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউপির হরিরামপুর গ্রামের রাস্তাটি নির্মাণের দেড় মাসের মাথায় বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করায় উদ্বোধনের আগেই ধসে পড়েছে রাস্তাটি। আগামী জুন মাসে এ রাস্তা উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, পাঁচ মাস আগে ৫২ লাখ ৯ হাজার ৮ শত টাকা ব্যয়ে একহাজার মিটার রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। হরিরামপুর গ্রামের প্রায় ৪ হাজার বাসিন্দাদের যাতায়াতের জন্য দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের অধিনে প্রকল্পের আওতায় এই রাস্তার বরাদ্দ করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য তাহসিন এন্টার প্রাইজ নামে রাজশাহীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলেও রাস্তাটি নির্মাণ করেন আমিরুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক ঠিকাদার।
এলাকাবাসির অভিযোগ, এ রাস্তার নির্মাণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও ঠিকাদার বেশি লাভের জন্য নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে দায়সারা ভাবে কাজ করছেন। যার কারণে নির্মাণের মাত্র দেড় মাসের মাথায় রাস্তার অনেকাংশ ভেঙে ও ধসে গেছে।
গ্রামের বাসিন্দা জানে আলম বলেন, ‘এই গ্রামের হাজারো মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রাস্তাটি পাকা করার। এই এলাকার জনদরদী নেতা গরিবের বন্ধু শাহরিয়ার আলম রাস্তাটি করার জন্য সরকারি বরাদ্দ দিলেও ঠিকাদার মানসম্মত ইট দিয়ে রাস্তার কাজ করেনি। মাত্র দুইএক ঘন্টার বৃষ্টিতেই রাস্তার অনেক স্থান ভেঙে গেছে।
একই গ্রামের আবুল খায়ের বলেন, ‘রাস্তাটি নির্মাণের সময় ঠিকাদারকে অনেকবার বলা হয়েছে, ভালো মানের ইট ব্যবহার করতে, কিন্তু তারা কোন কনর্পাত না করে অনেকটা বাতিল ইট ব্যবহার করেছে। এত নিম্নমানের ইট এর আগে কখনও ব্যাবহার করতে দেখিনি । এছাড়াও রাস্তার দুই পাশের পাড়গুলোও বাঁধা হয়নি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্প অনুযায়ী রাস্তাটির দৈর্ঘ্য ছিল একহাজার মিটার। এর মধ্যে হরিরামপুর পাকারপারা ইনছার হাজির বাড়ি থেকে নদিপাড়া হরিরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত ৫০০ মিটার (এইচবিবি) রাস্তা করা হয়েছে। আর বান্দার বটতলা আকতারের বাড়ি থেকে হক সাহেবের বাড়ির মোড় পর্যন্ত যে ৫০০ মিটার রাস্তা (এইচবিবি ) বাকি আছে তা খুব শিঘ্রই সম্পুর্ন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদার বলেন, যে ইট ফেলা হয়েছে সেই ইট পরিবর্তন করা হবে। আর সম্পুর্ন হওয়া রাস্তার কোথাও ভেঙে গেছে কিনা তা জানা নেই। রাস্তা নির্মাণে কোনও নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে কোন সাংবাদিক বাড়াবাড়ি করলে সেই সাংবাদিক কে কোপানো হবে।
উপজেলা প্রকল্প সহকারী হেকমত উল্লাহ বলেন, ‘রাস্তাটি এখনও ঠিকাদার থেকে বুঝে নেওয়া হয়নি। কাজের ত্রুটি পরীক্ষা করার জন্য ঠিকাদার থেকে একবছরের জন্য জামানত রাখা হয়। কোনও ত্রুটি থাকলে ঠিকাদার তা সংস্কার করবে। অন্যথায় বিল পরিষদ করা হবে না।
রাজশাহীর সময় ডট কম –০৯ এপ্রিল, ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.