মতিহার বার্তা ডেস্ক: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার সরিষাবন গ্রামটি পদ্মা নদীর মাঝে অবস্থিত। ওই গ্রামের বাসিন্দা বসির রাঢ়ি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খরার কারণে গত দুই বছর সবজি চাষ করে লাভের মুখ দেখতে পারেনি তিনি। এ বছর লাভের আশায় বসতভিটার জমির দলিল বন্ধক রেখে ব্রাক ব্যাংক থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেন। কিন্তু বন্যায় বসির রাঢ়ির সব ফসল ভেসে গেছে। একদিকে সংসারের খরচ, অন্যদিকে প্রতিমাসে ঋণের কিস্তি কীভাবে জোগাড় হবে, তা নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন বসির।
শনিবার (২২ আগস্ট) দুপুরে সরিষাবন গ্রামে বসির রাঢ়ি তার স্ত্রীকে নিয়ে বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসল খেত থেকে তুলছিলেন। তিনি বলেন, করোনায়ও আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। জমির ফসল বিক্রি করেই চলছিলাম। তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছিলাম। বন্যার পানি সব শেষ করে দিয়ে গেছে। সামনের দিনগুলো কেমনে চলবো তা জানা নেই।
এ সময় বসির রাঢ়ি আরও জানান, বন্যার কারণে ১৫ শতাংশ জমিতে শসা, ২০ শতাংশ জমিতে লাউ, ১২ শতাংশ জমিতে ধুন্দল, ১৪ শতাংশ জমিতে করলা, ১৫ শতাংশ জমিতে লাল শাক, ১২ শতাংশ জমিতে কালো বেগুনসহ শতাধিক পেঁপে গাছ মারা গেছে। এতে করে প্রায় ৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে তার।
শুধু বসির রাঢ়ি নয়, বন্যার পানিতে এ বছর মুন্সীগঞ্জের কয়েক হাজার কৃষকের বেঁচে থাকার অবলম্বন কৃষি ফসল তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। অনেকে ঋণ করে, ঘরে মজুত অন্য ফসল বিক্রি করে নতুন ফসলের আবাদ করেছিলেন। কৃষিকাজ করে করোনা মহামারি মোকাবিলা করতে পারলেও ওই সব কৃষক বন্যা পরবর্তী সময় কীভাবে পার করবেন, কীভাবে ঋণ শোধ করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বন্যায় মুন্সীগঞ্জ জেলার কৃষি সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরপর ধারাবাহিক পদ্মায় পানি বাড়লে বিভিন্ন গ্রামের কৃষিজমি তলিয়ে যায়। এখন বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৯৩৩ জন কৃষক। বন্যার পানিতে ১ হাজার ৭৬৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে জেলা কৃষি সম্পদে ক্ষতি হয়েছে ২৪ কোটি ২৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
বন্যায় কৃষক আক্কাস খাঁনের জমির সব সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। সদর উপজেলার শিলই ইউনিয়নের চর বাহেরপাড়া গ্রামের কৃষক তিনি। এবছর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষের জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে দেড়লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। সবজি বিক্রি করে সেই টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। বন্যার পানিতে তার সেই আশা পূরণ হলো না। ৩০ শতাংশ জমির লাউ ও ২৫ শতাংশ জমির লাল শাঁক নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক আক্কাস খান বলেন, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব সবজি গাছের চারা মারা গেছে। করোনার সময়ে জমির সবজি বিক্রি করে কিছু টাকা জমিয়েছিলেন। সেই টাকা ও ঋণের দেড়লাখ টাকা দিয়ে চাষ করা জমির সব ফসল এখন বন্যা ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
শিলই এলাকার আরেক কৃষক কাসেম বেপারি জানান, সারা বছর জমিতে সবজির আবাদ করেন। এ বছর ৮২ শতাংশ জমিতে করলা, শসা, বেগুনের আবাদ করেছিলেন। বিক্রি করার জন্য তা প্রস্তুতও ছিল। কিন্তু বন্যার পানিতে নিমেষেই তা তলিয়ে সর্বনাশ হয়ে গেল।
কাসেম বেপারি বলেন, যা বাজার দাম ছিল তাতে এ সবজি আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করতে পারতাম। এখন এই ক্ষতি কীভাবে পোষাব? বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জমি শুকিয়ে নতুন সবজির আবাদ করতে অনেক সময় লাগবে। জমি পরিষ্কার করতেও অনেক টাকা ব্যয় হবে।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শাহ আলম বলেন, এ বছর বন্যার স্থায়িত্ব ছিল বেশি। এ কারণে কৃষিতে ক্ষতিও হয়েছে। সোয়া ২৪ কোটির টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষি সম্পদের । এরমধ্যে সবজি চাষের জন্য বরাদ্দ পেয়েছি ১২ লাখ টাকা । এছাড়া ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রান্তিক কৃষকদের সহায়তার জন্য ভাসমান বীজতলা, পুষ্টি বাগান প্রস্তুত করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে কৃষি বিভাগ। সুত্র অধিকার
মতিহার বার্তা ডট কম – ২২ আগস্ট, ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.