শিরোনাম :
তরমুজ শুধু খেলে হবে না, গরমে মাখতেও পারেন লজ্জা ঢাকতে শেষমেশ গদি জড়িয়ে ছুটলেন উরফি! ভিডিয়ো ফাঁস হতেই চার দিকে শুরু শোরগোল কাফতান পরা মানেই কি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে সিলমোহর? প্রশ্ন তুললেন পরিণীতি চোপড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে শ্রেণি বৈষম্য করেছে রাবি প্রশাসন! তানোর ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষকের মামলা, তোলপাড় তরুণী সন্ধ্যা রানী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন; সৎ ভাই ও তার বন্ধু গ্রেফতার রাজশাহী বিভাগীয় তায়কোয়ানদো এসোসিয়েশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল- ২০২৪ রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২১ মহানগরীর ছোটবনগ্রামে লোন দেওয়ার নামে প্রতারণা, প্রতারক তাওহীদ খান আটক নৌবাহিনীর প্রধানের সাথে রাসিক মেয়রের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়
ভারতজুড়ে উত্তপ্ত হামলার শিকার কাশ্মিরিরা

ভারতজুড়ে উত্তপ্ত হামলার শিকার কাশ্মিরিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে ভারতের মূল ভূখন্ডে হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন কাশ্মিরি জনগণ। বৃহস্পতিবারের (১৪ ফেব্রুয়ারির) আত্মঘাতী ওই হামলা চালায় কাশ্মিরি তরুণ আদিল আহমেদ দার। কাশ্মিরিদের অভিযোগ, ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো তাদের হুমকি দেওয়ার বা তাদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ভারতজুড়ে কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে ডাক দেওয়া হয়েছে ধর্মঘট।

রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এতে অচল হয়ে পড়ে কাশ্মির। ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা কাশ্মিরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর হুমকি-মারধরের শিকার বা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হওয়া কাশ্মিরিদের আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বহু ভারতীয় নাগরিক।

৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে কাশ্মিরের বাসিন্দারা। তৎপর গোষ্ঠীগুলোর কেউ কেউ সরাসরি স্বাধীনতা চাইলেও, অনেকেই কাশ্মিরকে পাকিস্তানে অঙ্গীভূত করার পক্ষে। তিন দশক ধরে চলা কাশ্মির বিরোধে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে গত বৃহস্পতিবার।

‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের’ গাড়ি বহরে আরডিএক্স বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে প্রাণ হারায় বাহিনীটির অন্তত ৪০ জন সদস্য। হামলার পর পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ স্বীকার করে জানায়, কাশ্মিরের পুলওয়ামার স্থানীয় বাসিন্দা আদিল আহমেদ দার ওই হামলা চালিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের হামলার ঘটনার পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী কাশ্মিরি জনগণ হুমকি-হামলা শিকার হয়েছেন, বাধ্য হয়েছেন বাড়ি ছাড়তে। নিসার আহমেদ (২৩) ছদ্মনামের এক শিক্ষার্থী উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেরাদুনের একটি প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যার শিক্ষার্থী। আত্মঘাতী হামলার পর শুক্রবার সুধাওয়ালা এলাকায় দুই কাশ্মিরি শিক্ষার্থীকে একটি সংঘবদ্ধ দল নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়েছে। শনিবার ওই এলাকায় প্রায় ৭০ জনের একটি দল মিছিল করেছে।

ওই মিছিলে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, ‘বিশ্বাসঘাতক কাশ্মিরিদের গুলি কর, তাড়িয়ে দাও।’ নিসারের ভাষ্য, ‘হামলার পর আমরা ঘর থেকে বাইরে বের হতে সাহস পাচ্ছি না। এখানকার পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। আমরা অনিরাপদ বোধ করছি। আমরা বাড়ি ফিরে যেতে চাই। কিন্তু কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না। ঘরে থাকা প্রয়োজনীয় সামগ্রী শেষ হয়ে গেলেও, আমরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছি।’
দেরাদুনের একটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা আসমা আশরাফ (২৪) আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীটি হোস্টেল ঘিরে রাখায় তারা প্রাণ নিয়ে শঙ্কায় আছেন। আসমা জানিয়েছেন, সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীটি কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাশ্মিরিদের বের করে দিতে বলেছে।
উত্তর কাশ্মিরের বারামুল্লাহ জেলা থেকে আসা মুহাম্মদ দাউদ (২৩) দেরাদুনে ভূগোল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ‘হিন্দু ডানপন্থীদের সংঘবদ্ধ হামলার পর বাইরে বের হতে পারছি না। সংঘবদ্ধ দলটি আমাদের ঘরে প্রবেশ করলে বাড়িওয়ালি আমাদের রক্ষা করেন। আমি বাথরুমে পালিয়েছিলাম।’ দাউদ জানান, তারা ২০ জন শিক্ষার্থী একটি বাড়িতে থাকেন।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে থাকা ২৫ বছর বয়সী সারা খুরশিদ আল জাজিরাকে জানিয়েছন, ‘হামলার পর কাশ্মিরিদের সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। গতকাল আমি কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। এক পথচারী আমাকে দেখেই চিৎকার করে উঠল এবং বলল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এসব কাশ্মিরিরা না কি খুশি হয়েছে। ভয় হচ্ছে, বাড়িওয়ালা হয়তো আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবে।’

হরিয়ানা রাজ্যের আম্বালা শহরে প্রকৌশলবিদ্যা পড়েন বসির (২৪)। তিনি জানিয়েছেন, সহিংস সংঘবদ্ধ দল লাউড স্পিকারে ঘোষণা দিয়ে কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের তাদের ভাড়া করা বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, গতকাল থেকেই আমরা খাবার ছাড়া আছি। ভাড়া বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রশাসন আমাদের সামান্য নিরাপত্তা দিয়ে এখন একটি হোস্টেলে রেখেছে। হোস্টেলে আমরা প্রায় ২০০ কাশ্মিরি শিক্ষার্থী রয়েছি। এখান থেকে বের হতে পারছি না। আমরা বাড়ি ফিরতে চাই। বসিরের বাড়ি কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলায়। এই জেলাতেই বৃহস্পতিবার জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। আতঙ্কে তিনি নিজের বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি।

ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি সংশ্লিষ্ট ডানপন্থী হিন্দু সংগঠন বজরং দল। তাদের বিরুদ্ধে ভারতের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। দেরাদুনে এই সংগঠনটির একজন সদস্য বিকাশ ভার্মা কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপে ভারতের আধাসামরিক বাহিনীকে ব্যঙ্গ করার অভিযোগ তুলেছেন। ভার্মার ভাষ্য, তারা বাহিনীটির বিরুদ্ধে হোয়াটসঅ্যাপে লেখালেখি করেছে। ‘এসব শিক্ষার্থীদের এলাকা ছাড়তে আমরা ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছি।

না গেলে তাদের পরিণাম ভোগ করতে হবে।’
কাশ্মিরি অ্যাকটিভিস্ট রইস রাসুল বলেছেন, ‘ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নতুন সংজ্ঞা হলো, তিন রঙের পতাকা নিয়ে মিছিল করো, লুট করো, আগুন দাও, খুন করো , ধর্ষককে রক্ষা করো… আর জাতীয়তাবাদী হয়ে যাও।’

ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, কাশ্মিরিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়ে সব প্রদেশকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর। মূল ভূখন্ডে বসবাসকারী কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার তথ্য পুলিশকে জানাতে হেল্প লাইন খোলা হয়েছে। কাশ্মির অঞ্চলের পুলিশ প্রধান দিলবাগ সিং আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘যেসব এলাকায় কাশ্মিরি শিক্ষার্থী বা বাসিন্দারা রয়েছে সেসব এলাকার রাজ্য সরকারের সঙ্গে কাশ্মিরিদের সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘যেখান থেকেই আমরা আবেদন পাচ্ছি, সেখানকার পুলিশের সঙ্গেই আমরা কথা বলছি। আর তারা আমাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন, যে ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’
হামলার আশঙ্কা থাকা কাশ্মিরিদের আশ্রয়ের প্রস্তাব দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিতে দেখা গেছে বহু ভারতীয় বাসিন্দাকে। কাশ্মিরের বাসিন্দা নন এমন অনেক ভারতীয় এমন প্রস্তাব দিয়ে কাশ্মিরিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

এদিকে ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো প্রতিশোধের ডাক দেওয়ায় কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন কাশ্মিরের নেতারা। ভারতজুড়ে কাশ্মিরিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রবিবার কাশ্মিরে ধর্মঘট আহ্বান করে কাশ্মিরের ব্যবসায়ীরা। এই ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়ে গোটা কাশ্মির। বন্ধ থাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর দোকানপাট।

মতিহার বার্তা ডট কম – ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply