শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
রাজশাহীতে ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং,কিশোরীরাও এ গ্যাং এর সদস্য

রাজশাহীতে ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং,কিশোরীরাও এ গ্যাং এর সদস্য

প্রতিকি ছবি

এস এম বিশাল: মুঠোয় মুঠোয় পর্ণ, হাত বাড়ালেই ইয়াবা গাঁজা, ফেন্সিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্য মিলছে। এসব অসক্তিতে ঝুঁকে পড়ছে তরুন কিশোর-কিশোরী। একসাথে বসে মাদক সেবন কিংবা মুঠোফোনে পর্ণ দেখার দৃশ্য খুব সহজেই নজরে পড়ছে শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে।

’বস্তী থেকে বিত্তবানদের সন্তানরা সবাই জড়িয়ে পড়ছে। নেশার খরচ মেটাতে প্রথমে নিজ ঘরে চুরি। তারপর বাইরে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষন, খুনের মত ঘটনা ঘটাচ্ছে। মহল্লায় মহল্লায় এরা ছোট ছোট গ্রুপে গড়ে তুলেছে। ভয়ংকর হয়ে উঠেছে এই কিশোর গ্যাং।

বিত্তবানরা আদূরে কিশোর সন্তানদের আবদার মেটাতে কিনে দিচ্ছেন আপডেট মোটর বাইক। এসব বাইক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরজুড়ে। ছিনতাই কাজে ব্যবহার হচ্ছে। বেপরোয়া বাইক চালাতে গিয়ে প্রান হারানোর ঘটনা কম নয়। কিশোর গ্যাং দলবেধে আড্ডা, ইভটিজিং থেকে শুরু করে ধর্ষন, ছিনতাই করছে।

বিশেষত মেয়েদের স্কুল কলেজের সামনে এদের ইভটিজিং সাধারন খেলাধুলার মত হয়ে গেছে। আবার নিজেদের স্কুল কলেজ ছেড়ে বিনোদন কেন্দ্র বিশেষ করে পদ্মার তীরজুড়ে আড্ডা জমাচ্ছে। স্কুল কলেজের পোশাক পরেই চলে আসছে। কারো কারো সঙ্গে থাকছে জুটিয়ে নেয়া বান্ধবী। এসব বান্ধবীরাও পর্ণো ও মাদকাশক্তিতে আসক্ত হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে। অনেকে ধর্ষনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করছে।

মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের হাতে ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে এসে দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে পুরানো পথে হাটছে। নগর পুলিশের খাতায় ছিনতাইকারীদের নামের তালিকায় রয়েছে বহু কিশোরের নাম। নগরীতে পুলিশের তালিকাভূক্তি বখাটে রয়েছে ৮১ জন। আর জেলায় ৯৭ জন। তবে এ সংখ্যার চেয়ে বখাটেদের সংখ্যা অনেক অনেক গুন বেশী।

গ্যাং কালচারের সর্বশেষ নির্মম শিকার হয়েছে রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র ফরদিন ইসনা আশরিয়া রাব্বি (১৮) ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাবার জন্য স্টেশনে যাবার পথে বর্নালীর পেছনে তাকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। ঘটনায় পুলিশ রনক নামে একজনকে গ্রেফতার করে। গত ১৭ আগষ্ট রাজশাহী মহানগর হাকিম এর আদালতে বিচারক সেলিম রেজার কাছে হত্যার ঘটনা সবিস্তারে বর্নণা করে জবানবন্দী দিয়েছে।

সেসময় সাহেব বাজারে রুয়েট শিক্ষকের স্ত্রী লাঞ্চিত হবার পর নড়ে চড়ে বসে জেলা প্রশাসন। তারা ইভটিজারদের রুখতে মাঠে নামিয়েছিলেন ভ্রাম্যমান আদালত। দুজন ম্যাজিষ্ট্রেট ইভটিজিং বিরোধী ভ্রাম্যমান আদালতের দায়িত্ব পালন করেন। তাদের মুঠোফোন নম্বর গণমাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়। কেউ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়লে ঐ ফোনে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে পারবেন। সাবেক জেলা প্রশাসক হামিদুল হক  এ ব্যাপারে জেলা ও মহানগর পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনাও করেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক এমন উদ্যোগ নিলে হয়ত কিছুটা প্রতিরোধ করা যাবে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।

হেরোইনের টাকা জোগাড় করতে খুনের ঘটনা ঘটায়। সম্প্রতি বখাটেদের হাতে নাজেহাল হন নগরীর প্রানকেন্দ্র সাহেব বাজার মনিচত্ত্বর এলাকায় রুয়েটের শিক্ষক ও তার স্ত্রী।

সবদিক বিশ্লেষন করে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন অসুস্থ রাজনীতি ও কিছু রাজনৈতিক নেতাদের আনুকুল্যে কিশোর গ্যাং কালচার ডালপালা মেলছে। তাছাড়া মানসিক ও শারিরীক বিকাশের সময় বাচ্চারা বাবা-মাকে খুব বেশী সময় কাছে পাচ্ছেনা। বেশীরভাগ বাবা মা সন্তানের সামর্থের চেয়ে বেশী প্রত্যাশা করছেন। ফলে হতাশা মানসিক চাপ থেকে মুুক্তি পেতে মাদকে আশক্ত হচ্ছে। আর এর টাকা যোগাড় করতে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা।

তাছাড়া কিশোরদের মধ্যে সম্প্রতি র্স্মাট ফোন কালচার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যমে আশক্ত হচ্ছে পর্নোতে ভেঙ্গে পড়ছে মানবিক মূল্যবোধ সমাজের রীতিনীতি। এরাই ফেসবুকে গ্রুপ সৃষ্টি করে জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কাজে। সীমান্ত এলাকায় কিশোর তরুনদের ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক দ্রব্যের বাহক হিসাবে। এক সময় এরাও মাদকাশক্ত হয়ে পড়ছে।

সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় বখাটেরা দিন দিন বেপারোয়া হয়ে উঠছে। ছিনতাই খুন ধর্ষন বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে অভিযোগ করে লাভ নেই বলে যৌন হয়রানীর শিকার হয়েও বখাটেদের বিরুদ্ধে আইনের পথে হাটেন না। ভয় উল্টো আরো হয়রানীর।

শিক্ষাবিদরা বলছেন বখাটেরদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশপাশি প্রত্যেক পরিবারকে সচেতন হতে হবে। তাদের সন্তানরা কোথায় যায় কাদের সাথে মেশে তারা খোজ খবর রাখতে হবে। পুলিশেরপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা বখাটেদের গ্যাং কালচারের ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন। ইভটিজিং বন্ধে রাস্তাঘাট ও স্কুল কলেজের সামনে গোয়েন্দা নজরদারী রাখছি।

মতিহার বার্তা ডট কম: ১০ অক্টোবর ২০২০

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply