বাঘা প্রতিনিধিঃ করোনাকালিন সময় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি ও অর্থনৈতিক মন্দার কথা বিবেচনা করে কেন্দ্রিয় ব্যাংক দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান হতে ঋন গ্রহিতাদের জন্য ঋন পরিশোধে ডিসেম্বর পর্যন্ত সুযোগ করে দিলেও, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিতিমালা উপেক্ষা করে রাজশাহীর বাঘায় কয়েকটি এনজিও তাদের ইচ্ছেমত কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন।
জানা গেছে, উপজেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ২৫ টি এনজিওর শাখা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে গ্রামিন ব্যাংক, ব্রাক, ব্যুরো বাংলাদেশ, জাগরনী চক্র থেকে ঋন গ্রহিতাদের করোনা কালীন সময়ে বকেয়া কিস্তির উপর বাড়তি সুদ আরোপিত করায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের গ্রাহকেরা।
ভুক্তভূগী এক মটর সাইকেল মেকার বলেন, আমি ব্যুরো বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৬০ হাজার টাকা ঋন নিয়েছিলাম। করোনাকালীন সময়ে কাজকর্ম না থাকায় ৩টি কিস্তি দিতে পারিনি। এখন আমাকে ওই ৩ কিস্তির বাড়তি ৬৫০ টাকা সুদ সহ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সুদ না দিলে পরবর্তিতে লোন দেবেনা বলেও জানিয়ে দিয়েছেন কিস্তির মাস্টার।
এ বিষয়ে ব্যুরো বাংলাদেশ বাঘা শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের নিতিমালা অনুযায়ী প্রতিটা গ্রাহক থেকে সুদ নেয়া হচ্ছে।
আমরাও ব্যাংক থেকে সুদে টাকা নেয়। করোনাকালিন সময়ে লোনের টাকা আদায়ে বিশেষ সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি।
বিকাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ব্রাক থেকে ২ লক্ষ টাকা লোন নিয়েছি। করোনাকালিন সময়ে কয়েকটা কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় উক্ত বকেয়া কিস্তির উপর এখন প্রায় ৬ হাজার ৫শ টাকা বাড়তি সুদ যোগ করা হয়েছে। এমনিতেই ব্যাবসা খারাপ হওয়ায় আমরা চরম অর্থনৈতিক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। তার ওপর যদি বাড়তি সুদের টাকা দিতে হয় তাহলে আমাদের কষ্টের সিমা থাকবেনা।
এ বিষয়ে ব্র্যাক কর্মকর্তা বলেন, আমরা এপ্রিল,মে,জুন এই ৩ মাসের বকেয়া কিস্তির উপর কোন বারতি সুদ নিচ্ছিনা। তবে উক্ত সময়ের পরে কোন গ্রাহকের বকেয়া কিস্তি থাকলে সেই বকেয়া টাকার ওপর সুদ নেয়া হচ্ছে।
আরেক ভুক্তভুগী শীবেন দাস বলেন, আমি জুতা মেরামত করে সংসার চালায়। আমি গ্রামীন ব্যাংক থেকে ৪০ হাজার টাকা লোন তুলেছি। বর্তমানে কাজ কর্ম না থাকায় খুব কস্টে দিন পার করছি। আমার ৪টা কিস্তি বাকি আছে। এখন ওই টাকার ওপর বাড়তি সুদ যোগ করেছে।
গ্রাহকের অভিযোগ সর্ম্পকে গ্রামীন ব্যাংক বাঘা শাখা ব্যাবস্থাপক বলেন, প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী একজন ঋন গ্রহিতা যতদিন টাকা রাখবে ততদিনের সুদ প্রদান করতে হবে। করোনাকালিন সময়ে গ্রাহকের বকেয়া কিস্তির টাকার কোন সুদ নেওয়া যাবেনা এ রকম তথ্য আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে ভুক্তভূগী অনেকেই বলেন, এখানকার বড় বড় এনজিও গুলো মরার ওপর খারার ঘা এর মতো আমাদের ওপর বাড়তি সুদ চাপিয়ে দিচ্ছেন। এটা চরম অমানবিক। অথচ আশা, পদক্ষেপসহ অন্যান্য অনেক এনজিও গ্রাহকের বকেয়া কিস্তির বাড়তি সুদ নিচ্ছেন না, তাহলে আমরা কি অপরাধ করলাম?
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির কথা বিবেচনা করে যারা ঋণ শোধ করতে পারছেন না, সরকার তাদের সহায়তার জন্য ঋণ পরিশোধে তফসিলভুক্ত ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের ঋণের কিস্তি পরিশোধে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় দিয়ে তৃতীয় দফায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকেরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের কিস্তি শোধ না করলেও ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি হবেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে কোনো গ্রাহক কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে আগামী জানুয়ারি থেকে ওই কিস্তির পরিমাণ ও সংখ্যা পুনরায় নির্ধারণ করতে পারবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ যারা চলতি বছরে ঋণ শোধ করবেন না, তাদের আগামী বছর থেকে কিস্তির সংখ্যা ও পরিমাণ নতুন করে নির্ধারণ করা যাবে। যত কিস্তি বকেয়া থাকবে, ঠিক ততটা বাড়ানো যাবে। ঋণের ওপর সুদ হিসাবের ক্ষেত্রে কোনো দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত কোনো অর্থ আদায় করা যাবেনা। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রথমে জুন পর্যন্ত এবং পরবর্তিতে তা বাড়িয়ে সেপ্টেম্বর ও সর্বশেষ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও ) শাহিন রেজা বলেন, বকেয়া কিস্তির ওপর বাড়তি সুদ নিচ্ছে এমন কোন অভিযোগ কেউ করেননি এবং এ ধরনের তথ্য আমাদের জানা নেই। যদি কোন প্রতিষ্ঠান নিতিমালার বাইরে আর্থিক লেনদেন করে তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নিব।
মতিহার বার্তা ডট কম: ১৬ নভেম্বর ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.