অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর চর মাজারদিয়া এলাকায় ইতোমধ্যে পাঁচটি পাতকুয়া স্থাপন করেছে বিএমডিএ। সৌর বিদ্যুৎ চালিত এসব পাতকুয়ায় পর্যাপ্ত পানি উঠছে। চাষিরা মাত্র ২০ টাকায় এক ঘণ্টা পানি নিতে পারছেন পাতকুয়া থেকে।
এক সময় রাজশাহীর গ্রামে গ্রামে সুপেয় পানির আধার ছিল পাতকুয়া। সাবমার্সিবল পাম্প, গভীর ও অগভীর নলকূপ আসার পর পাতকুয়া আর কেউ রাখেনি। তবে এখন আবার পাতকুয়ার প্রয়োজন অনুভব করছেন বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) প্রকৌশলীরা।
কৃষি জমির সেচকাজের এখন এই পাতকুয়া স্থাপন করা হচ্ছে।
অথচ বরেন্দ্র অঞ্চলে বিএমডিএ’র বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ থেকে এক ঘণ্টা পানি নিতে হলে চাষিদের খরচ হয় ৮৫ থেকে ১২৫ টাকা। সেক্ষেত্রে সৌর বিদ্যুতের এই পাতকুয়া থেকে চাষিরা খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে পানি পাচ্ছেন।
গত এক বছর আগে রাজশাহীর পবা উপজেলার চরমাজারদিয়া স্কুলমাঠ এলাকা, খাসমালপাড়া, পশ্চিমপাড়া, পূর্বপাড়া এবং ষাট বিঘার মাঠে পাঁচটি পাতকুয়া স্থাপন করেছে বিএমডিএ। এর মধ্যে ষাট বিঘার মাঠের পাতকুয়াটি সবচেয়ে বড়। এটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। ছোট অন্য চারটির এক একটি পাতকুয়া স্থাপনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ টাকা।
পাতকুয়া ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নিচ পর্যন্ত গোলাকার আকৃতিতে মাটি খনন করে চারপাশ থেকে চুয়ানো পানি ধরে রাখার আধার। এসব পানি এলএলপির মাধ্যমে প্রথমে একটি ট্যাংকে তোলা হয়। তারপর সেই ট্যাংক থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি চলে যায় চাষির ফসলের ক্ষেতে। ফলে পাতকুয়ার চারপাশে চরের মাটিতে এখন নির্বিঘেœ চাষাবাদ করা হচ্ছে নানা রকম সবজির।
চর মাজারদিয়া স্কুলমাঠ এলাকার একটি পাতকুয়ার অপারেটর মো. টিয়া জানান, তার পাতকুয়াটি ২০ থেকে ২২ বিঘা ফসল চাষাবাদ করতে পারে। ভোর ৬টায় সূর্য ওঠার সাথে সাথে সোলার প্যানেল কাজ করা শুরু করে। তখন থেকেই পানি দেয়া শুরু হয়। সন্ধ্যায় সূর্য নামার সময় পর্যন্ত সেচ দেয়া সম্ভব হয়। এক ঘণ্টায় একটি পাতকুয়া ১০ কাঠা জমিতে পানি দিতে পারে।
তিনি আরও জানান, এক ঘণ্টা পানির জন্য কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ২০ টাকা নেয়া হয়। কোন যন্ত্রাংশ কেনার প্রয়োজন হলে এই টাকা ব্যয় করা হবে। তবে এক বছর ধরে চললেও তার পাতকুয়ার কোন যন্ত্রাংশ কিনতে হয়নি। তার পাতকুয়া থেকে স্কুল মাঠ, বাজার ও ক্লিনিকেও ট্যাপের মাধ্যমে পানি দেয়া হয়। এই পাতকুয়া থেকে স্থানীয় চাষিরা খুব ভাল উপকার পাচ্ছেন।
পাতকুয়ার পাশের চাষি আফজাল হোসেন বলেন, চরের জমি খুব উর্বর। শুধু পানি পেলেই এখানে ভাল ফসল ফলে। সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এতদিন পানির অভাবেই তাদের চাষাবাদ ব্যহত হচ্ছিল। এখন পাতকুয়ার পানিতে তার জমিতে সব সময় চাষাবাদ হচ্ছে।
পাতকুয়া খননের মাধ্যমে স্বল্প সেচের ফসল উৎপাদন প্রকল্পের পরিচালক বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী শিবির আহমেদ বলেন, পাতকুয়া বসানোর সুফল পাচ্ছেন চরের বাসিন্দারা। এই পানি ব্যবহার করছেন সাত থেকে আট হাজার মানুষ। পাতকুয়াগুলো স্বল্প খরচে পদ্মার চরে পানির নিশ্চয়তা এবং সবুজায়ন সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। আরও বেশি সংখ্যক পাতকুয়া বসানোর পরিকল্পনা তাদের আছে আগামীতে। সূত্র: সোনালী সংবাদ
মতিহার বার্তা ডট কম: ২৭ নভেম্বর ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.