শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
সমুদ্রের মাঝে কংক্রিটের জঙ্গল

সমুদ্রের মাঝে কংক্রিটের জঙ্গল

সমুদ্রের মাঝে কংক্রিটের জঙ্গল
সমুদ্রের মাঝে কংক্রিটের জঙ্গল

জাপানের নাগাসাকি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের মাঝে একটি দ্বীপ। নাম হাসিমা দ্বীপ কিংবা গুনকাঞ্জিমা। ২০০৫ সাল থেকে জাপানের নাগাসাকির অন্তর্ভুক্ত দ্বীপটি।

এই দ্বীপের আয়তন মাত্র ০.০৬৩ বর্গ কিলোমিটার। অথচ এই ছোট্ট দ্বীপেই এক সময় বসবাস করতেন প্রায় ৬ হাজার মানুষ। বহুতল, বিনোদনের ব্যবস্থা, স্কুল, হাসপাতাল... সব মিলিয়ে জাঁকজমক পূর্ণ শহর ছিল এটি।
১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে রাতারাতি বদলে যায় শহরের ছবি। জাঁকজমকপূর্ণ শহর মুহূর্তে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। রাতারাতি হয়ে ওঠে ভুতুড়ে শহর।

সমুদ্রের মাঝে মাথা উঁচিয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই দ্বীপ। কংক্রিটের জঙ্গলকে ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে প্রকৃতি। বহুতলগুলির এতটাই ভগ্নদশা যে, যখন তখন সেগুলি ভেঙে পড়তে পারে। কেন শহরের ছবিটি রাতারাতি বদলে গেল?
১৮১০ সালে এ দ্বীপে প্রথম কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। ১৮৮৭ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। আশেপাশের এলাকা থেকে, বিশেষ করে কোরিয়া থেকে প্রচুর কর্মীকে রাখা হয় দ্বীপে।

১৮৯০ সাল থেকেই মূলত কয়লার উত্তোলন শুরু হয়। তার আগে ভূমিক্ষয় রুখতে ছোট দ্বীপের চারধারে শক্ত প্রাচীর গড়ে তোলা হয়।

কয়লা তোলার জন্য চারটি মাইন-শ্যাফট গঠিত হয়। যার গভীরতা ছিল ১ কিলোমিটার। এর মধ্যে একটি আবার পাশের দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

১৮৯১ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৫৭ লক্ষ টন কয়লা তোলা হয় ওই খনি থেকে। কয়লার ভাল জোগানের জন্য দ্রুত প্রচুর খনি শ্রমিককে এই দ্বীপে নিয়ে আসা হয়।

তাঁদের থাকার ব্যবস্থার জন্য গড়ে তোলা হয় বহুতল। পরের ৫৫টি বছর ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কংক্রিটের বহুতল, হাসপাতাল, রাস্তা, স্কুল, টাউন হল, কমিউনিটি সেন্টার... ধীরে ধীরে সব গড়ে ওঠে। বিনোদনের জন্য ক্লাবহাউস, সিনেমা হল, সুইমিং পুল গড়ে ওঠে। সম্পূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছিল হাসিমা।

১৯৩০ থেকে ১৯৪৫ অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত কোরিয়া, চিন থেকে প্রচুর বন্দিকে জোর করে দ্বীপে নিয়ে এসে কয়লা তোলার কাজে লাগানো হয়।

তাঁদের উপর অকথ্য নির্যাতন হত। ঠিক মতো খাবার দেওয়া হত না। শারীরিক নির্যাতনও চালানো হত। অপুষ্টি এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে এই সময়ে প্রায় দেড় হাজার শ্রমিকের মৃত্যু হয় দ্বীপে।

১৯৫৯ সাল নাগাদ ওই দ্বীপের জনসংখ্যা পৌঁছে যায় ৬ হাজারের কাছাকাছি।  দ্বীপের আয়তন মাত্র ০.০৬৩ বর্গ কিলোমিটার অর্থাৎ সেই হিসাব অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটারে সাড়ে ৮৩ হাজার মানুষ বসবাস করতেন। সেই সময়ে সবচেয়ে জনঘনত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয় এটি।

দ্বীপের আয়তন ছিল খুব ছোট। তাই এত মানুষের থাকার ব্যবস্থা করতে একের পর এক বহুতল গড়ে উঠেছিল। কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হয় ওই দ্বীপ। সবুজের চিহ্ন প্রায় ছিলই না।

ক্রমশ সেখানে কয়লাকে প্রতিস্থাপন করে পেট্রোলিয়াম। ১৯৬০ সাল থেকে বিভিন্ন খনিজ আকরিক উত্তোলন সংস্থা কয়লার পরিবর্তে পেট্রোলিয়ামের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। পুরো জাপান জুড়ে কয়লা খনিগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। হাসিমাও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যায় হাসিমা দ্বীপে কয়লা উত্তোলন। ওই বছরই এপ্রিলে সমস্ত খনি শ্রমিককে অন্যত্র নিয়ে চলে যাওয়া হয়। হাসিমা দ্বীপে পড়ে থাকে কংক্রিকেটর জঙ্গল।

এর পর থেকে দ্বীপটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ৩৫ বছর পর ২০০৯ সাল নাগাদ দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে পর্যটকেরা দ্বীপের খুব সামান্য অংশই ঘুরে দেখার অনুমতি পেয়েছেন। কারণ ধ্বংসপ্রাপ্ত ওই দ্বীপের বহুতলগুলি ভগ্নপ্রায়।

সে কোনও মুহূর্তে সেগুলি ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাগাসাকি প্রশাসন।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply