শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
রাজশাহীতে যৌন হয়রানির শিকার নার্সকে চট্রগ্রামে বদলি

রাজশাহীতে যৌন হয়রানির শিকার নার্সকে চট্রগ্রামে বদলি

রাজশাহীতে যৌন হয়রানির শিকার নার্সকে চট্রগ্রামে বদলি
রাজশাহীতে যৌন হয়রানির শিকার নার্সকে চট্রগ্রামে বদলি

স্টাফ রিপোর্টার: চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স। এখন হাসপাতালে ‘স্বাভাবিক পরিবেশ’ বজায় রাখার স্বার্থে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করেছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার আদেশে স্বাক্ষর করেছেন। একই আদেশে অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) মোহাম্মদ আবদুল হাইয়েরও স্বাক্ষর রয়েছে। এই বদলিকে ‘শাস্তিমূলক’ হিসেবে দেখছেন যৌন হয়রানির শিকার ওই নার্স। তিনি মনে করেন, চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কারণে তাকে এই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমার বিচার চাওয়াটা কি অপরাধ? এরপর থেকে রামেক হাসপাতালের আর কোন নার্স যৌন হয়রানির শিকার হলেও মুখ খুলবে না।’

প্রায় ১০ মাস আগে নার্সের চাকরি পেয়ে রামেক হাসপাতালেই যোগ দেন ওই নার্স। এরপর তিনি শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গত ১৮ জানুয়ারি তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্ব দেয়া হয়। আর সেদিনই সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক মামুন-অর-রহমান তাকে যৌন হয়রানি করেন। পরদিন একই কাণ্ড ঘটান এই চিকিৎসক। ঘটনা জানাজানি হলে ২০ জানুয়ারি ডা. মামুনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে। কমিটিতে ছিলেন একজন নার্স, চারজন চিকিৎসক। এই কমিটি ১০ ফেব্রুয়ারি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনের একটি কপি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে পাঠান হাসপাতাল পরিচালক।

এদিকে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরও আলাদা একটি কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত করছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওই নার্স নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে গিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। অধিদপ্তরের গঠন করা কমিটির তদন্ত শেষ না হলেও ওই নার্সকে চট্টগ্রামে বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। এতে ওই নার্স মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। বলছেন, যৌন হয়রানির শিকার হলেও আর কোন নার্স অভিযোগ করার সাহস পাবে না। হতাশা ব্যক্ত করছেন রামেক হাসপাতালের নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও। তারা বদলির আদেশ বাতিল চাইছেন।

ওই নার্স বলেন, ঘটনার পর প্রথমে রামেক হাসপাতাল নার্সিং সুপারিনটেনডেন্টকে জানাই। কিন্তু তিনি বিষয়টি চেপে যেতে বলেন। বাধ্য হয়ে নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনকে জানাই। তারপর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে ডা. মামুন নিজের কাজের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে গিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু হাসপাতালের তদন্ত কমিটি চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে উল্টো আমাকেই নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করে। কমিটি কী প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা আমাদের দেখানো হয়নি। সেই প্রতিবেদন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরে পাঠানোর পর আমার বদলির আদেশ হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, অভিযুক্ত চিকিৎসক মামুন রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করেছেন। তিনি সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক নন। তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। ছুটি নিয়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকেই কোর্স সম্পন্ন করতে এসেছিলেন রামেক হাসপাতালে। অভিযোগ ওঠার পর তার কোর্স বাতিল করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

অভিযোগকারী নার্সেরও বদলির বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ওই নার্সের একটা ‘ফল্ট’ যে তিনি ঘটনাটি প্রথমে আমাদের জানাননি। তিনি নার্সিং ইনচার্জ কিংবা সুপারিনটেনডেন্টকেও জানাননি। প্রথমেই নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনকে জানান। এটা তদন্ত প্রতিবেদনে আছে। এখন এর ভিত্তিতে যদি অধিদপ্তর বদলি করে সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতাল নার্সিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি বলেন, যৌন হয়রানির শিকার নার্স প্রথমে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরই জানিয়েছিলেন। তারা গুরুত্ব না দেয়ার কারণে আমাদের জানান। আমরা চিকিৎসকের শাস্তির দাবিতে সরব হই। দুইদিন মানববন্ধন করি। তখন এসব না করার জন্য আমাদের চাপ দেয়া হয়। সেসব না শোনার কারণে অধিদপ্তরে চাপ দিয়ে ওই নার্সকে বদলি করা হয়েছে। যিনি যৌন হয়রানির শিকার হবেন তিনিই শাস্তি পাবেন, এটা খুবই দুঃখজনক। এ রকম হলে আর কোন নার্স যৌন হয়রানির শিকার হলেও অভিযোগ করবেন না। তাই আমরা এই বদলির আদেশ বাতিল চাই।

যোগাযোগ করা হলে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও শিক্ষা) মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, হাসপাতালে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার স্বার্থে ওই নার্সকে বদলি করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বদলি একটু বেশি দূরে হয়ে গেছে। সেটা বাতিল করে তাকে রাজশাহীরই অন্য কোন স্থানে রাখা হবে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply