শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
নিয়োগ’ নিয়ে রুয়েট ভিসির স্বজনপ্রীতি, অনিয়মে চলছে রুয়েট প্রসাশন

নিয়োগ’ নিয়ে রুয়েট ভিসির স্বজনপ্রীতি, অনিয়মে চলছে রুয়েট প্রসাশন

নিয়োগ’ নিয়ে রুয়েট ভিসির স্বজনপ্রীতি, অনিয়মে চলছে রুয়েট প্রসাশন
নিয়োগ’ নিয়ে রুয়েট ভিসির স্বজনপ্রীতি, অনিয়মে চলছে রুয়েট প্রসাশন

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একের পর এক বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন রুয়েট ভিসি (উপাচার্য)। সম্প্রতি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৭৮ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে রুয়েটে। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থীই ভিসির জ্ঞাতিগুষ্টি। এছাড়াও ভিসির বন্ধু মহল ও নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদেরও রয়েছে নিজ নিজ চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থী।

নিয়োগ বোর্ডের আদ্যোপান্ত সম্পর্কে রুয়েটের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ‘দু একজন নয় ভিসি পুরো জ্ঞাতিগুষ্টিকেই চাকরি দেওয়ার জন্য নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম করছেন। নিয়ম অনুসারে- অফিসার নিয়োগ বোর্ডে থাকেন উপাচার্য, মনোনিত একজন শিক্ষক, স্ব-স্ব বিভাগীয় প্রধান (যখন যে বিভাগের প্রার্থী থাকেন তখন সেই বিভাগীয় প্রধান উপস্থিত থাকেন) এবং একজন এক্সটার্নাল সদস্য থাকেন বোর্ডে। ৪ সদস্যের এই নিয়োগ বোর্ডে নিয়ম অনুসারে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন ভিসি (উপাচার্য)। এছাড়া কর্মচারী বোর্ডে ভিসি, রেজিস্টার, মনোনিত শিক্ষক ও একজন এক্সটার্নাল সদস্য থাকেন। কিন্তু এখানে ঘটনা পুরোই উল্টো।’

তারা বলছেন, নিয়োগ বোর্ডের সকলের নিজ নিজ প্রার্থী রয়েছে। লোক দেখানো নিয়ম পালনে তারা বোর্ডে থাকেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভিসি নিজ প্রার্থীদের নিয়োগ পাকাপুক্তোকরণের জন্য কিছু কিছু বিভাগীয় প্রধানদের বোর্ডেই রাখেন না।’

সূত্র আরোও জানায়, ‘গত ২২ ও ২৩ মার্চ নিয়োগ বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে ভিসি ছিলেন না। ২৩ মার্চ সেকশন অফিসার পদে পরীক্ষায় অংশ নেয় সোহেল আহমেদ নামে ভিসির শ্যালক। অপরদিকে ওই দিনই নিয়োগ বোর্ডের সদস্য শিক্ষক ড. রবিউল আওয়ালের স্ত্রী তাশনুভাও সেকশন অফিসার পদে পরীক্ষা দেন। সেকারণে মাত্র দুইজন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নিয়েই ভাইভা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ২৩ মার্চ নিয়োগ বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন রেজিস্টার যা একেবারে বিধি বর্হিভূত। আবার, এর আগেও ড. রবিউল আওয়ালের স্ত্রী সহকারী প্রকৌশলী পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় বোর্ডে তিনি অনুপস্থিত ছিলেন, যা লোক দেখানে একটি বিষয় মাত্র। মোট কথা- রুয়েট প্রশাসন শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে সেচ্ছাচারিতার ভিত্তি চালিয়ে যাচ্ছেন নিয়োগ প্রক্রিয়া।’

এদিকে রুয়েট অফিসার্স সমিতির একাধিক সূত্র বলছে, ‘শুধু শ্যালকই নয়, আপন ছোটভাই লেবুরুর রহমান (লেবু) পরীক্ষা দিয়েছেন ২য় শ্রেনির জুনিয়র শেকশন অফিসার হিসেবে। বর্তমানে তিনি ট্রিপলি বিভাগের ল্যাব সহায়ক পদে দায়িত্বরত ৪র্থ শ্রেনির কর্মচারি। কিন্তু তার (লেবু) ২য় শ্রেনির অফিসার পদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এদিকে, ভিসির খালু শ^শুড় পিএ টু ভিসি পদের পদপ্রার্থী। ভিসির ভাগ্নে ও নিকটাত্মীয়রাও কয়েকটি পদের পদপ্রার্থী। এছাড়াও ভিসির পরিবার, জ্ঞাতিগুষ্টি ও ঘনিষ্ট বন্ধু মহলের সকলেই চাকরি প্রার্থী। শুধু ভিসিই নয়, বোর্ডের প্রত্যেক সদস্যের রয়েছে চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থী।’

নাম না প্রকাশ করার শর্তে রুয়েটের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে প্রথমে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তার ফলাফল প্রকাশ হয়। পাশ-ফেল হওয়ার পর উত্তীর্ণদের নেওয়া হয় ভাইভা। অথচ, এখানে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ছাড়াই গড়ে সবার ভাইভা নেওয়া হচ্ছে। আবার এক পদের বিপরীতে একাধিক লোক সিলেকশন করছে রুয়েট প্রশাসন। যেমন সেকশন অফিসার পদ ৬টি কিন্তু সেখানে নিচ্ছেন ১২ জন। এমন একাধিক পদে জনবল নেওয়ার নিয়ম ইউজিসি বা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কিনা তা জানা নেই।’

তিনি বলেন, ‘ভিসি ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ছাড়াও রুয়েট কেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদেরও রয়েছে চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থী। এছাড়াও বাইরের তদবির ও চাপ তো আছেই। এমন অনিয়ম ও দূর্নীতি পুরোপুরি রুয়েটের প্রচলিত গেজেটের ১৯ জুলাই, ২০০৩ এর চাকরির শর্তাবলীর (২) ও (৪) ধারার পরিপন্থি। নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে রুয়েট প্রশাসনের এমন কার্যকলাপে নিয়োগ প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এনিয়ে যোগ্য প্রার্থীদের মাঝে দেখা গেছে চরম ক্ষোভ। এর আগেও নিয়োগ নিয়ে ক্যাম্পাসে ভাংচুর ও সংঘাত সংঘঠিত হয়েছিল।’

এছাড়াও রুয়েট সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ, রুয়েট ভিসি অনেকটায় নির্ভরশীল রুয়েটের জনসংযোগ কর্মকর্তা এএফএফ মাহমুদুর রহমান দিপনের ওপর। কারণ, জনসংযোগ কর্মকর্তা দিপনের পিতা শিক্ষাবিদ শফিকুর রহমান বাদশা। মন্ত্রণালয়ে ভালো প্রভাব থাকায় তিনি (বাদশা) মূলত রুয়েটে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখকে রুয়েটের ভিসি হিসেবে পদায়নে সহযোগিতা করেছেন। সেই প্রতিদান স্বরূপ তিনি বর্তমানে কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের এক্সটার্নাল হিসেবে রয়েছে। আর এই কারণেই জনসংযোগ কর্মকর্তার ওপর উপাচার্য পুুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাপ-ছেলে পুরোপুরি নিয়োগে বাণিজ্যিকীকরণে রুপান্তরিত করেছে।’

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও বিধি ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ। রুয়েটের নিয়োগ প্রকিয়ার অনিয়মের বিষয়ে ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলে ভিসি বারং বার জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে সকল বিষয়ে কথা বলতে বলেন। প্রতিবেদক সরাসরি সাক্ষাৎকার চাইলেও তিনি সময় দিতে আপত্তি জানান এবং ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেখান।

এবিষয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা এএফএফ মাহমুদুর রহমান দিপন বলেন, ‘ভিসি স্যার ব্যস্ত মানুষ। কি বলতে কি বলেছে বুঝতে পারেননি। আসলে তিনি হয়ত বোঝাতে চেয়েছেন আমার কাছে থেকে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিলে তারপর সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন। একারনেই হয়ত তিনি আমার কথা বলেছেন। আর নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে আমার কোনো কিছুই বলার এখতিয়ার নেই।’

জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বীকার করেন তার পিতা শফিকুর রহমান বাদশা কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। তবে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, গত ১৪ তারিখে শারিরীকভাবে অস্বুস্থ হওয়ার কারণে তিনি ভিসি বরাবর একটি চিঠি দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না মর্মে জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে উনার (বাদশা) বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়।’

তবে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ‘কর্মচারি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য বাদশা মূলত গায়ে গন্ধ এড়াতে এই অস্বুস্থতার ভান করছেন। মূলত তিনি ও তার ছেলে দীপনই পেছন থেকে সব কলকাঠি নাড়াচ্ছে।’

উপাচার্যের (ভিসি) সেচ্ছাচারিতা ও বিধি ভঙ্গের বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে ৪৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভিসিই মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সিন্ডিকেটের বিধি বা নির্দেশনার তোয়াক্কা করেন না। যার কারণে নিয়োগ ও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক ধরনের সেচ্ছাচারিতা দেখা যায়। তারা অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে ফেলেন। যেমন- বেরোবি, রাবিসহ প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে নিয়োগে স্বজন প্রীতিসহ নানান অভিযোগ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মাঝে মধ্যেই শোনা যায়। রুয়েট নিয়েও ইতোমধ্যে নিয়োগে অনিয়মের বিষয়ে জেনেছি।’

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বোর্ডের সদস্যদের প্রভাব ও সেচ্ছাচারিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে কারো স্বজন নিয়োগ প্রার্থী হলে সে বোর্ডে থাকতে পারেন না। তারপরও যদি কেউ নিয়োগ বোর্ডে থাকে এবং তার প্রার্থী পরীক্ষা দেয়, সেক্ষেত্রে তিনি না থাকলেও নিয়োগ পরীক্ষা প্রভাবিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় ভয় ও চাপের কারণে কেউ ভিসির বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না। আর তাই, কেউ যদি সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে তথ্য প্রমাণসহ যৌক্তিকভাবে নিজের নাম, ঠিকানাসহ ইউজিসিকে অভিযোগ করেন তবে অবশ্যই ইউজিসি সেই অভিযোগের তদন্ত করবে। সরকার পার্লামেন্টে ইউজিসির সদস্যদের বিশ^বিদল্যালয় নিয়ে একটি দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করেছে অনিয়ম ও বিধিবর্হিভূত বিষয় তদারকি করার, আমরা সেই পালন করি।’

উল্লেখ্য, এর আগেও ২০১৪ সালে রুয়েটে নিয়োগ নিয়ে রাজনৈতিক চাপ থেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো, যা আন্দোলন ও ভাঙচুর অবধি গড়িয়েছিলো। সুত্র দৈনিক অগ্নিবাণী

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply