শিরোনাম :
ফ্রিজ়ে রাখা দুধ গরম করলেই ছানা হয়ে যায়! ফেলে না দিয়ে বানিয়ে ফেলুন নতুন ৫ খাবার গোপন করেছিলেন বিয়ে, প্রেমে পড়েছিলেন সহ-অভিনেত্রীর, বহুকামিতা নিয়ে প্রচারে থাকেন বলি নায়িকা ‘আল্লার কাছে পাঠিয়ে দেব’, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্ডোগানের বার্তা রাশিয়ার পরে এ বার আইএসের হানা গৃহযুদ্ধ দীর্ণ সিরিয়ায়, বিস্ফোরণ, গুলিতে নিহত অন্তত ১১ রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্টারের বিরুদ্ধে মামলা করলো দুদক পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় মৃত ৬ বিশ্বসুন্দরীমঞ্চে এই প্রথম মুসলিমবিশ্বের প্রতিনিধি… দেখে নিন আপনি বুদ্ধিমান কী না! দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু কাজে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কোনো আসনই ফাঁকা থাকছে না বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রেনে

কোনো আসনই ফাঁকা থাকছে না বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রেনে

কোনো আসনই ফাঁকা থাকছে না বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রেনে
কোনো আসনই ফাঁকা থাকছে না বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রেনে

অনলাইন ডেস্ক: ট্রেনে যাত্রীরা বসবেন এক আসন ফাঁকা রেখে। করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় গেল ২৯ মার্চ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেসব ট্রেন চলে তার কোনটিতেই কোনো আসন ফাঁকা থাকছে না। সব আসনেই যাত্রী বসানো হচ্ছে।

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চারটি ট্রেন চলে। শুক্রবার (২ এপ্রিল) ও পরদিন শনিবার রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার তিনটি ট্রেন ছাড়ার সময় সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রেনগুলোর সব আসনেই যাত্রী বসছেন। ট্রেনে ওঠার সময় প্ল্যাটফরমে তীব্র ভিড়ও দেখা দিচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার কোনরকম চেষ্টা নেই কারও।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলাচল করা ট্রেন চারটি হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে খুলনাগামী ‘মহানন্দা এক্সপ্রেস’, রাজশাহী থেকে ফরিদপুরগামী ‘মধুমতি এক্সপ্রেস’, রাজশাহী থেকে পার্বতীপুরগামী ‘উত্তরা এক্সপ্রেস’ এবং রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ‘ঢাকা মেইল’। মহানন্দা এক্সপ্রেস সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে রাজশাহী অতিক্রম করে। মধুমতিও একই সময় রাজশাহী ছাড়ে। উত্তরা এক্সপ্রেস রাজশাহী ছাড়ে দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে। আর মেইল ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে সকাল ১০টায়।

শনিবার সকালে মধুমতি ছাড়ার সময় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেনটিতে একটি বগিতে শুধু শোভন চেয়ার রয়েছে। এখানে সবগুলো আসনে পাশাপাশি যাত্রীরা বসে আছেন। ট্রেনের বেশিরভাগ আসন শোভন। মুখোমুখি বসানো শোভনের দুটি সিটে ছয়জন বসতে পারেন। শোভনের টিকিটে আসন নম্বর দেয়া থাকে না। তাই প্রত্যেক আসনেই যাত্রীরা বসছেন।

অথচ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রেনগুলোতে শুধু ‘বিজোড়’ সংখ্যার আসন নম্বরের টিকিট বিক্রি করতে বলা হয়েছে। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রেনের টিকিট বিক্রেতারা বলছেন, এ ধরনের কোন নির্দেশনা তারা পাননি। ফলে আগের মতোই তারা সব টিকিট বিক্রি করছেন। আসন না থাকলে যাত্রীরা দাঁড়িয়েও যাচ্ছেন।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনার চারটি ট্রেনের মধ্যে ঢাকা মেইল ও মধুমতি এক্সপ্রেসের টিকিট স্টেশনের কাউন্টার থেকে সরকারিভাবেই বিক্রি করা হয়। আর স্টেশন কিংবা প্ল্যাটফরমে মহানন্দা এক্সপ্রেস এবং উত্তরা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি করেন ইজারাদারের বিক্রয়কর্মী। কাউন্টার থেকে মধুমতি এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রির সময় একটি আসন ফাঁকা রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু একই আসনের টিকিট দুজনের কাছে বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফলে ট্রেনে উঠে যাত্রীরা যে আসন ফাঁকা পাচ্ছেন সেখানেই বসছেন। আর ইজারাদারের লোকজন সব টিকিটই বিক্রি করছেন।

মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা যেতে শনিবার সকালে ট্রেনে উঠে নিশান (১৫)। ‘খ’ বগিতে তার আসন নম্বর ১৯। নিশান ট্রেনে উঠে দেখে, ১৯ নম্বর আসনে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি বসে আছেন। তার কাছেও ১৯ নম্বর আসনের টিকিট। মাঝের ১৮ নম্বর আসনে বসে আছেন আরেকজন বৃদ্ধা। বাধ্য হয়ে নিশান ১৭ নম্বর আসনে বসে। এই আসনটিতে বসার জন্য কেউ অবশ্য টিকিট নিয়ে আসেননি। ফলে এক সারির তিনটি আসনে পাশাপাশি বসে নিশানেরা তিনজন ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। মধুমতির টিকিট কাউন্টার থেকেই বিক্রি করা হয়েছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রেনে শুধু ‘বিজোড়’ সংখ্যার টিকিট বিক্রির কথা। কিন্তু মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী নওগাঁর মান্দার জিল্লুর রহমান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার যাত্রী রাজিব হোসেনসহ আরও অনেকের টিকিটে দেখা গেছে আসন নম্বর ‘জোড়’।

মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পর স্টেশনে ঢোকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মহানন্দা এক্সপ্রেস। স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফরমে ট্রেনটি দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে উঠতে শুরু করলেন। তখন প্ল্যাটফরমে তীব্র ভিড় দেখা গেল। ট্রেনের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, শোভন শ্রেণির প্রত্যেক আসনেই যাত্রীরা বসে আছেন। দাঁড়িয়েও আছেন অনেকে।

স্টেশনেই মধুমতি এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি করেন ট্রেনটি ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠান ‘এনএল ট্রেডিং’ এর বিক্রয়কর্মীরা। যাত্রীদের কাছে দেখা গেছে, এনএল ট্রেডিংয়ের নাম লেখা একটি কুপনই ট্রেনের টিকিট। যাত্রী কোথায় উঠেছেন, কোথায় নামবেন, ভাড়া কত- সবই এই টিকিটে লেখা আছে। শুধু আসন নম্বর লেখা স্থানটি ফাঁকা। ফলে যেখানে সুযোগ পাচ্ছেন সেখানেই বসছেন যাত্রীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে এই ট্রেনে উঠেন বৃদ্ধ সুকুমার চক্রবর্তী (৬০)। যাবেন রাজশাহীর চারঘাট। সুকুমারের টিকিটে লেখা আছে ভাড়া ৩০ টাকা। তবে সুকুমার জানালেন, তার কাছে নেয়া হয়েছে ৩৫ টাকা। সুকুমার বলেন, ‘ভাড়া বেশি নিল। কিন্তু ট্রেনে উঠে বসার জায়গা পাইনি। রাজশাহী এসে একজন যাত্রী নেমে গেলে এই জায়গাটি পেলাম।’ সুকুমার শোভন শ্রেণির যে আসনে বসেছিলেন তাতে এক নারীসহ তিনজন বসেছিলেন। সামনের আসনটিতেও ছিলেন তিনজন।

আগের দিন শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে উত্তরা এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার সময় দেখা যায়, ওই ট্রেনটিতেও সব আসনেই বসছেন যাত্রীরা। এই ট্রেনে পার্বতীপুর যাচ্ছিলেন নওগাঁর আত্রাইয়ের ওয়াজেদ আলী (৫০)। তিনি বলেন, এক আসন ফাঁকা রেখে বসতে হবে এ রকম কেউ বলেনি। কিন্তু করোনাকালে এমন যাতায়াত ঠিক না। সরকারি নিষেধাজ্ঞার পরও এভাবে প্রত্যেক আসনেই যাত্রী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন তিনি সেই প্রশ্ন তোলেন।

প্ল্যাটফরমেই উত্তরা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি করছিলেন ট্রেনটি ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স এইচকে ট্রেডিং’ এর বিক্রয়কর্মী শামীম রেজা। সব আসনের টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অর্ধেক সিটে যাত্রী নিয়ে যাওয়ার নিয়ম সরকারি ট্রেনের জন্য। আমরা তো বেসরকারি। ট্রেনে চালক আর গার্ড ছাড়া অন্যান্য কাজের সব লোক আমাদের। আমরা অর্ধেক সিট বিক্রি করলে তো লোকশান হবে। আর লোকশান হলে কোম্পানী ট্রেন চালাবে না। বন্ধ করে দিতে হবে।’

শনিবার সকালে স্টেশনের ভেতরে চেয়ার-টেবিল পেতে মহানন্দা এক্সপ্রেসের টিকিট বিক্রি করছিলেন ট্রেনটি ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠান এনএল ট্রেডিংয়ের বুকিং ক্লার্ক সৌরভ হোসেন। সব আসনের টিকিট বিক্রি নিয়ে তারও একই কথা। সৌরভ বলেন, ‘আমাদের তো বেসরকারি গাড়ি। অর্ধেক টিকিট বিক্রি করতে হবে এটা তো কেউ বলেনি। অর্ধেক টিকিট বিক্রি করলে কোম্পানীর লস হবে।’

রেলওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রতিটি স্টেশনে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। ট্রেনে জীবানুনাশক স্প্রে করা হবে। যাত্রীদের জন্য থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। মাস্ক ছাড়া কাউকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। যাত্রার আগে শরীরের তাপমাত্রাও মাপা হবে যাত্রীদের। দুইদিন গিয়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে এসবের কিছুই চোখে পড়েনি।

জানতে চাইলে স্টেশন ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, ‘প্রস্তুতি চলছে। সবকিছুই মানা হবে।’ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রেনের সব আসনেই যাত্রী বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইজারাদারদের বলে দেয়া হয়েছে শুধু ‘বিজোড়’ সংখ্যার টিকিট বিক্রি করা যাবে। অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে। এটা না মেনে যদি ইজারাদারের লোকজন সব টিকিট বিক্রি করেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’ কাউন্টার থেকেই বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ট্রেনে একই আসনের দুটি করে টিকিট বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশন ব্যবস্থাপক দাবি করেন, এটা ভুলক্রমে দু’একটি টিকিটে হতে পারে। সব আসনের ক্ষেত্রে নয়। কাউন্টার থেকে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখেই টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। সুত্র: সোনালী সংবাদ

মতিহার বার্তা ডট কম / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply