অনলাইন ডেস্ক : রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় বাঘা ও চারঘাট উপজেলায়। গত রোববার এ দুই উপজেলাতেই ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে রাজশাহীর আমচাষিদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। তারা বলছেন, প্রথম দিকে যে লাভের আশা তারা করেছিলেন, এখন তার অর্ধেক ভাবতে হচ্ছে। সর্বশেষ গত রোববার বিকালের শিলাবৃষ্টিতে আমের সর্বনাশ হয়ে গেছে।
শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এই আম থেকে ভাল আমে যেন কীটপতঙ্গ ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য শিলাবৃষ্টির পরদিন সকাল থেকেই চাষিরা নেমে পড়েছেন পরিচর্যায়।
এর আগে গাছে গাছে যখন স্বর্ণালী মুকুল, তখন হঠাৎ কয়েকদিন কুয়াশা। ক্ষতি হলো মুকুলের। চাষিদের পরিচর্যার মধ্য দিয়ে সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিল আমের গুটি। ধীরে ধীরে তা কড়ালিতে পরিণত হলো। তখন বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বৃষ্টি হলো না। অনাবৃষ্টির মধ্য দিয়েই যখন কড়ালিগুলো বড় হচ্ছিল, তখন নেমে এলো ঝড় আর শিলাবৃষ্টি। ক্ষতি হলো আরেকদফা।
সরেজমিনে ঘুরে বাগানে বাগানে চাষিদের ব্যস্ততা দেখা গেছে। চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিলাবৃষ্টির পর উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
গত সোমবার সকালে চারঘাট উপজেলার জোতকার্তিক গ্রামে বাগানে কীটনাশক স্প্রে করে ফিরছিলেন পলাশ কুমার প্রামানিক। তিনি জানালেন, ২৫ বিঘা জমিতে তাদের ৩০০টি আমগাছ আছে। প্রতিবছর সাত থেকে আট লাখ টাকার আম বিক্রি করেন। এবার কুয়াশা, অনাবৃষ্টি আর শিলাবৃষ্টির কারণে অর্ধেক আমেরও আশা করতে পারছেন না। পলাশ জানান, রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত একঘণ্টা শিলাবৃষ্টি হয়েছে। শিলার আঘাতে একেবারেই ফাকা হয়ে আমগাছ। চারঘাটের মুংলি গ্রামের রাহাত জানালেন, তার দুটি বাগান আছে। বাগান তিনি দেখে এসেছেন। আমের কড়ালি অনেক ঝরে গেছে। আরেকটি বাগান ছেলেকে দেখতে পাঠিয়েছেন। শিংড়িকান্দি গ্রামে বাগানে ওষুধ স্প্রে করছিলেন কামরুল ইসলাম।
তিনি জানালেন, তার বাগানের ৬০টি আমগাছ আছে। সব গাছেরই ছোট ছোট আম ঝরেছে। এসব আম কুড়িয়ে আচারের জন্য বিক্রি করারও উপযোগী নয়। শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত আম থেকে যেন ভাল আমে কীটপতঙ্গের আক্রমণ না হয় তার জন্য তিন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
বাঘার আড়পাড়া গ্রামের বড় আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ জানালেন, তার প্রায় এক হাজার আমগাছ আছে। এবার সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, কুয়াশা আর শিলাবৃষ্টির কারণে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা করছেন তিনি। তবে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি আরও তিন-চারদিন পর ভালভাবে বোঝা যাবে। এই সময়ের মধ্যে শিলার আঘাত পাওয়া আমগুলো ঝরে পড়বে।
বাঘা-চারঘাটের প্রায় সব রাস্তার দুইপাশে আমবাগানের চাষিরা জানালেন, হঠাৎ করে একদিনে সব চাষি বাগানে স্প্রে করার কাজ শুরু করার কারণে এই কাজের সঙ্গে যে শ্রমিকেরা জড়িত তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। শ্রমিকের সংকটে চাষিরা নিজেরাই বাগানে স্প্রে করতে শুরু করেছেন।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ সুলতান বলেন, ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়নি। যেগুলো ঝরেছে, সেগুলো ঝরতোই। এখন আম একটু পাতলা হয়েছে। এগুলো আরও ভালভাবে বড় হবে। এগুলো আর ঝড়ে পড়বে না। উৎপাদন ঠিক থাকবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহীর ৯ উপজেলার মধ্যে শুধু বাঘা-চারঘাটেই একটু শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে দু’একটা আম ঝরলেও খুব বেশি ক্ষতি হবে না। আমের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভাল।
রাজশাহীতে এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে ৩৭৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলেও জানান জেলা কৃষি কর্মকর্তা।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.