স্টাফ রিপোর্টার: ভরা মৌসুমে রাজশাহী ও উপজেলার বাজার গুলোতে আমের সরবরাহ কম। এছাড়াও বাজারে আম বিক্রি হচ্ছে দামে। রাজশাহীতে এবারও বাগান থেকে আম পাড়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু রোজা ও ঈদের কারণে এতদিন সেভাবে আম পাড়েননি স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে পুরোদমে আম নামানো শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহ থেকে রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট থেকে আম আসতে শুরু করেছে। এর ফলে চাঙা হয়ে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজারগুলো। তবে, এবার রাজশাহীতে আমের বাজার চড়া বলেই জানাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথম দিকে ঘন কুয়াশায় আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। এরপর এপ্রিল থেকে আবার শুরু হয় দাবদাহ। এছাড়াও ঝড় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। নানান কারণে চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে ভরা মৌসুমে বাজারে আমের সরবরাহ কম থাকায় এবার শুরুতেই আমের দাম বেশি। এ কারণে এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই রাজশাহী অঞ্চলের বাজার থেকে ফুরিয়ে যেতে পারে আম। রাজশাহীর বানেশ্বরে সবচেয়ে বড় আমের হাটে গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের পাশেই পুরোনো কাচারি মাঠকে ঘিরে ধুলোবালি ও প্রচ- গরম উপেক্ষা করে এখন আমের হাট এরই মধ্যে জমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আমবোঝাই ভ্যানগাড়ি ও নসিমনগুলোর জটলা করে থাকছে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সবাই গাদাগাদি করে আমের পসরা সাজিয়ে বসছেন। আর প্লস্টিকের ক্যারেটে করে থরে থরে সাজানো থাকছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন জাত ও স্বাদের কাঁচা-পাকা আম।
এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় এই আমের হাট। বছর ঘুরে বেচাকেনা জমে ওঠায় ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। করোনার কারণে অনলাইন বেচাকেনাও বেড়েছে। তবে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কায় সবাই হাটে গিয়ে দেখেশুনে নিজের মত পরখ করেই আম কিনছেন বেশি। আর রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এবার আম ব্যবসায় নেমেছেন অনেক তরুণ শিক্ষার্থীও। এখান থেকে কুরিয়ার সার্ভিস, ট্রাক ও অনলাইনের মাধ্যমে আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
প্রতিদিন বানেশ্বর হাটে গড়ে ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার আম কেনাবেচা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এবার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আমের বাজার চড়া। তাই আমের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আওয়াল বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭৩ হেক্টর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। তাপদাহ কেটে গেলে আর নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না এলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মতামত রাজশাহী কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তার। এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম নামান চাষিরা। উন্নতজাতের মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে থেকে নামানো শুরু হয়। খিরসাপাত (হিমসাগর) ২৮ মে থেকে নামানোর সময় নির্ধারণ করা হলেও গতকাল মঙ্গলবার থেকে এই আম ভাঙা শুরু হয়েছে। তাই পুরোদমে হিমসাগর আম এখনও বাজারে আসেনি। এছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া আম্রপালি আম এবং আগামী ১৬ জুন থেকে নামানো শুরু হবে ফজলি আম। সবশেষ আগামী ১৭ জুলাই থেকে আশ্বিনা জাতের আম নামানো শুরু হবে ।
রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও আমের গুণগত মান ভালো আছে। তবে দাবদাহের কারণে আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। এছাড়াও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। এজন্য আগামীদিনে আমের দাম আরও বাড়তে পারে।
রাজশাহীর আম আগেই ফুরিয়ে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন আম ব্যবসায়ীদের এই নেতা।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.