শিরোনাম :
তরমুজ শুধু খেলে হবে না, গরমে মাখতেও পারেন লজ্জা ঢাকতে শেষমেশ গদি জড়িয়ে ছুটলেন উরফি! ভিডিয়ো ফাঁস হতেই চার দিকে শুরু শোরগোল কাফতান পরা মানেই কি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে সিলমোহর? প্রশ্ন তুললেন পরিণীতি চোপড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে শ্রেণি বৈষম্য করেছে রাবি প্রশাসন! তানোর ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষকের মামলা, তোলপাড় তরুণী সন্ধ্যা রানী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন; সৎ ভাই ও তার বন্ধু গ্রেফতার রাজশাহী বিভাগীয় তায়কোয়ানদো এসোসিয়েশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল- ২০২৪ রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২১ মহানগরীর ছোটবনগ্রামে লোন দেওয়ার নামে প্রতারণা, প্রতারক তাওহীদ খান আটক নৌবাহিনীর প্রধানের সাথে রাসিক মেয়রের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়
লকডাউনে ক্ষতির মুখে রাজশাহীর ফজলি আম চাষিরা

লকডাউনে ক্ষতির মুখে রাজশাহীর ফজলি আম চাষিরা

লকডাউনে ক্ষতির মুখে রাজশাহীর ফজলি আম চাষিরা
লকডাউনে ক্ষতির মুখে রাজশাহীর ফজলি আম চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে টানা কঠোর লকডাউনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফজলি আম চাষিরা। বাজারে ঠিক সময়ে ফজলি আম এলেও পরিবহন ও ক্রেতার অভাবে ২৫ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করছেন চাষিরা। তবে খুচরা বাজারে এসব আম ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে এবারও গাছ থেকে নামানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল প্রশাসন। সেই অনুযায়ী ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আ¤্রপালি আম গাছ থেকে নামানো শুরু হয়। এরই মধ্যে রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে সেটি দুই দফা বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়।

এরপর ১ জুলাই থেকে নতুন করে সরকার ঘোষিত দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। কৃষিপণ্য হিসেবে আম বাজারজাতকরণে লকডাউনে আওতামুক্ত থাকলেও ক্রেতার অভাবে ফজলি ও আ¤্রপালি আম নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে যখন লকডাউন দেওয়া হয়েছিল তখন অন্য জাতের আম বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু সারাদেশে যখন লকডাউন শুরু হলো তখন রাজশাহীতে ফজলি আম বাজারে উঠলো। এই সময়ে ধরা খেয়েছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। ঢাকা থেকে যারা আমের অর্ডার দিতেন, তারা অর্ডার বাতিল করলেন।

বাজারে ঠিক সময়ে আম এলেও পরিবহন ও ক্রেতার অভাবে ২৫ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করছেন চাষিরা আম ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন জেলায় আম পাঠাতে গেলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। পথে পথে ভোগান্তি আছে। এজন্য কেউ আমের অর্ডার দেন না। শালবাগান বাজারের ২০টি ফলের দোকানে অনেক আম। কিন্তু ক্রেতা নেই।

গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ও আমের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বাছাইকৃত কাঁচা ফজলি আমের মণ ১২০০ টাকা হিসাবে কেজি পড়ে ৩০ টাকা। একটু দাগযুক্ত পাকা আমের মণ ৮০০-৯০০ টাকা হিসাবে কেজি পড়ে ২০-২১ টাকা। তবে আ¤্রপালি আমের মণ ২০০০-২২০০ টাকা।

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারের খুচরা আম ব্যবসায়ী মো. হাবিব বলেন, কাঁচা ফজলির কেজি ৩০ আর পাকাটা ২০-২৫ টাকা বিক্রি করছি।

নগরীর মোল্লাপাড়া এলাকার আম বাগানের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, এখনও গাছে অর্ধেক ফজলি আম রয়েছে। কিন্তু ঘন ঘন বুষ্টির কারণে ফজলি আমের গায়ে কালো দাগ পড়ে যাচ্ছে। তাই বেশি দিন গাছে রাখা যাবে না। বাজারে ক্রেতার সংকটের কারণে গাছের আম নামানোও যাচ্ছে না।

নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় বেশ কয়েকটি আমের দোকান রয়েছে। এখানের ব্যবসায়ীরা জানান, দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলাচল করলে যাত্রীরা সঙ্গে করে কিছু আম নিয়ে যেতেন। কিন্তু এবার তাও বন্ধ। আম নিয়ে দোকানে বসে থাকতে হচ্ছে, ক্রেতা নেই। কাঁচা পণ্য, তাই ধরে রাখাও যায় না। বাধ্য হয়ে কম দামে আম বিক্রি করে দিচ্ছি।

রাজশাহী নগরীর বহরমপুর এলাকার ফল ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে ক্রেতা না থাকায় আম পচে নষ্ট হচ্ছে। যে দামে আম কিনেছি, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করছি। গত দুই দিনে এক মণ আমও বিক্রি করতে পারিনি।

নগরীর কাজলা এলাকার আম ব্যবসায়ী মিন্টু বলেন, লকডাউনের কারণে এমনিতে ক্রেতা কম আবার ঠিকমত দোকান খুলতে পারচ্ছিনা তাই আম বিক্রি হচ্ছে না। দোকান খুলতে না পারায় আম পচে যাচ্ছে। এজন্য লোকসান হলেও কম দামে আম বিক্রি করে দিচ্ছি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহীর বাগানগুলোর ৮৫ শতাংশ গাছ থেকে আম পাড়া হয়ে গেছে। বাকি আছে ১৫ শতাংশ। ফজলি, আশ্বিনা, আ¤্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম এখন গাছে আছে। শেষ হয়েছে ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাতসহ অন্য জাতের আম। ফজলি ও আ¤্রপালির ৫০ শতাংশ আম গাছে আছে। বারি-৪ এবং আশ্বিনা আম পাড়ার এখনও সময় হয়নি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জেকেএম আব্দুল আওয়াল বলেন, রাজশাহীতে এবার আমের যে উৎপাদন ও বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা প্রায় পূরণ হয়ে গেছে। এখনও কিছু আম আছে। কৃষি বিভাগ সবসময় লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কম করে নির্ধারণ করে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে বাড়তি থাকে। এবারও তাই হয়েছে।

আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, রাজশাহীতে আমের মোট লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। এর প্রায় ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার ৪৭০ হেক্টর লক্ষণভোগ। এই আমের দাম কম। এ কারণে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৬০০-৮০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবারও তাই অর্জন হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন গাছে আশ্বিনা আম আছে। চাষিরা এই আমের যত্ন নেন না। আশ্বিনা আমের প্রধান শত্রু মাছি পোকা। এটা রোধ করতে আমের ব্যাগিং করতে হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি গাছে এখন ব্যাগিং করা হচ্ছে। কিন্তু রাজশাহীর চাষিরা উদাসীন।

আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, সারাদেশে কঠোর লকডাউনে কৃষিপণ্য পরিবহনে কোনও সমস্যা হয় না। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। এখন পর্যন্ত কৃষিপণ্য কিংবা আম পরিবহনে সমস্যা হয়েছে বলে অভিযোগ পাইনি। কাজেই এটি বলার সুযোগ নেই, লকডাউনের কারণে আম পরিবহনে সমস্যা হয়েছে। তবে ভোক্তাপর্যায়ে লকডাউনের কারণে ক্রেতা কমেছে- এটা সত্য।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply