শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
রুয়েটে বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে অধিক জনবল নিয়োগ : অধিকাংশ বিএনপি-জামায়াতপন্থী

রুয়েটে বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে অধিক জনবল নিয়োগ : অধিকাংশ বিএনপি-জামায়াতপন্থী

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট),ফাইল ফটো
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট),ফাইল ফটো

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে অধিক সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৪ মে অনুষ্ঠিত ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে কত সংখ্যক অধিক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অধিক জনবল নিয়োগের ওই সময়ই সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে প্রয়োজনে নিয়োগ সংখ্যা বাড়তে বা কমতে পারে।’ তিনটি বিজ্ঞপ্তিতে ৭৬ পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ হয়েছে। তবে কতজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ডিন তিনি। এদিকে, রুয়েটের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে মোট চারটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এসব বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে অন্তত দেড় শতাধিক জনবল নিয়োগ হয়েছে। এরমধ্যে অন্তত ৬৫ জন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত। আর বাকিরা আ’লীগ ও প্রগতিশীল মতাদর্শ এবং ভিসিসহ রুয়েটে কর্মরত কর্মকর্তাদের স্বজন।

প্রাপ্ত ডকুমেন্টস, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময়ে মোট চারটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, যেখানে প্রায় দেড়শ’ জনবল নিয়োগ দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ২২ মে পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বছরের ২২ অক্টোবর আরও একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের অক্টোবরে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। চারটি বিজ্ঞপ্তিতে অর্ধশতাধিক পদে জনবল নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। করোনার মধ্যেই বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে আবেদনকারীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। যাচাইবাচাই শেষে গত ৪ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এসব পদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে এসব পদে বিজ্ঞাপিত পদের চেয়ে বেশি সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অধিক জনবল নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে রুয়েট ভিসি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শেখ গণমাধ্যমকে জানান, ‘সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিয়োগ হয়েছে। আমাদের বাজেট দেওয়া হয়েছিল। এখন যদি জনবল নিয়োগ না দেওয়া হয়। তবে এ বাজেট চলে যাবে। পরে চাইলেও পাওয়া যাবে না। এছাড়া বিভাগ থেকেও চাহিদা ছিল। তাই অধিক সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

ক্যাম্পাস বন্ধ থাকা অবস্থায় অধিক সংখ্যক জনবল নিয়োগকে অযৌক্তিক মনে করছেন অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রুয়েটের একজন সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, ‘করোনার কারণে আমি সশরীরে না গিয়ে অনলাইনে যুক্ত ছিলাম। ইন্টারনেটের সমস্যার কারণে মাঝে মধ্যেই ডিসকানেক্টেড হয়েছে। ফলে কতজন নিয়োগ হয়েছে তা বলতে পারছি না। তবে করোনার মধ্যে যেখানে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ রয়েছে সেখানে বিজ্ঞাপিত পদের অধিক জনবল নিয়োগের কোনও যৌক্তিক কারণ অঅছে বলে মনি করি না। বিভিন্ন জন বিভিন্ন যুক্তি দেখাতে পারে, তবে সেটি আমরা কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, বিজ্ঞাপিত পদের অতিরিক্ত একজনও নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ দিয়ে থাকে তবে সুস্পষ্টভাবে তা আইনের লংঘন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির একজন সদস্য বলেন, ‘বিজ্ঞাপিত পদের বিপরীতে অধিক জনবল নিয়োগের সুযোগ নেই। যদি কেউ এমনটা করে তবে তা স্পষ্টভাবে আইনের লংঘন। যোগ্য জনবল পাওয়া না গেলে প্রয়োজনে নিয়োগ হবে না। পরবর্তীতে আবার বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে।’

উপাচার্যের দাবি করা বিজ্ঞপ্তিতে পদের সংখ্যা প্রয়োজনে বাড়তে বা কমতে পারে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির এই সদস্য বলেন, ‘উপাচার্য এমন বিজ্ঞপ্তি দিতে পারেন না। এতে প্রতীয়মান হয় যে, আগে থেকেই তিনি অধিক জনবল নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে নেপথ্যে যারা জড়িত ছিলেন অর্থাৎ যাদের মাধ্যমে ও প্রভাবে অধিকাংশ জনবল নিয়োগ হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রুয়েট অফিসার্স সমিতির এক শীর্ষ নেতা ও সহকারী রেজিস্টার, অফিসার্স সমিতির একজন যুগ্ম সম্পাদক যিনি সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত, মহানগর আ’লীগের এক সহসভাপতির ছেলে যিনি রুয়েটে একটি সেকশনের কর্মকর্তা এবং আরেকজন সহকারী রেজিস্টার। এছাড়া ভিসির বেশ কিছু স্বজন নিয়োগ পেয়েছেন।

এদিকে, রুয়েটে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই পদে আবেদনকারী রায়হান নামে এক প্রার্থী নিয়োগ বাতিলে উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখসহ ১৮ জনকে আইনি নোটিশ দিয়েছে। গত ১৩ জুন রায়হান ইসলাম পক্ষে এই নোটিশ পাঠান রাজশাহী জজ কোর্টের আইনজীবী শফিকুল ইসলাম।
নোটিশে বলা হয়, রুয়েটের উপ-সহকারী প্রকৌশল পদে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছিল, অনুমোদিত কারিগরী শিক্ষাবোর্ড/প্রতিষ্ঠান হতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলে ডিপ্লোমা থাকতে হবে। কিন্তু ওই পদে যে প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তার উক্ত বিষয়ে কোনো সনদ নেই। অথচ ওই পদের যোগ্য হিসেবে আরও অনেক প্রার্থী ছিলেন। তাই একজন অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া যথেষ্ট সন্দেহের সৃষ্টি করে। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি, অবৈধ অর্থ লেনদেনসহ নানা অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে অযোগ্য প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল করে একজন যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। নতুবা আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে রুয়েটের রেজিস্ট্রার, ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন, এ্যাপলাইড সায়েন্স এ্যান্ড হিউম্যানিটিস অনুষদের ডিন, রিসার্চ এ্যান্ড এক্সটেনশনের পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব এনার্জি এ্যান্ড এনভাইরনমেন্টাল স্টাডিজের পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগরে অতিরিক্ত সচিব, ডাটা সফট সিস্টেম বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সদস্য ইঞ্জিঃ আলাউদ্দিন, রাজশাহী বিভাগের কমিশনার, চুয়েটের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, রাবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হাসান আহম্মেদ, রাবির ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক শহীদুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড রাজশাহীর চেয়ারম্যান, রুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক মর্তুজা আলী, সি.ই বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, ছাত্রকলা পরিচালক অধ্যাপক রবিউল আওয়াল ও প্রধান প্রকৌশল শাহাদাত হোসেন।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রুয়েটে ৭৪ টি পদে দেড় শতাধিক নিয়োগ হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিত পদের অতিরিক্ত নিয়োগের কথা স্বীকার করলেও কতজন নিয়োগ হয়েছে সে বিষয়ে মুখ খুলছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রুয়েটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিয়োগের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।

মতিহার বার্তা / এফ কে

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply