অনলাইন ডেস্ক: খোদেজা খাতুন বনি এক পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর নাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পৌর এলাকার ইসলামনগর মহল্লার দুরুল ইসলামের খোদেজা খাতুন কন্যা বনি। অনেক কষ্টে তাদের জীবন চলে। বাবা সামান্য চায়ের দোকানদার। সাত ভাই বোন মিলিয়ে ৯ জনের সংসার তাদের।
পিতা দুরুল ইসলাম ও তার দুই ভাই চায়ের দোকানে কাজ করে এবং মা গৃহিণী ও পরের বাসায় কাজ করে। জীবিকার তাগিদে ছোট্ট বনিকে শিশু বয়স থেকে বাবার সঙ্গে চায়ের দোকানে কাজ করতে হতো। তার অদম্য ইচ্ছা ছিল সে লেখাপড়া শিখে বড় অফিসার হবে। এভাবে চায়ের দোকানে ফাইফরমাশ খেটে সময় বের করে বই পড়তো। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কখনো স্কুলে গিয়ে কখনো না গিয়ে পার হয়।
নবম ও দশম শ্রেণিতে পরের বাসায় কাজ করেও তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে ২০১০ সালে সে জিপিএ-৫ নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করে। পরবর্তীতে রহনপুর মহিলা কলেজ থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে সে উত্তীর্ণ হয়। কলেজে পড়াকালীন সময়ে সে কলেজের ছাত্রীনিবাসে থাকতো। এ সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সহযোগিতা করেছে।
তার লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকায় তার বাবা-মা বাড়ির পোষা হাঁস-মুরগি ইত্যাদি বিক্রি করে তাকে লেখাপড়া করতে পাঠায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বনি অনেক কষ্ট করে টিউশনি করে তার লেখাপড়া চালাতো। এক পর্যায়ে সে দর্শন বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।
এরই মধ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা মহিলা কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। যদিও কলেজটি নন এমপিও তবুও তিনি যোগদান করবেন।
খোদেজা খাতুন বনি জানান, নিয়োগপ্রাপ্ত কলেজে যোগদান করলেও তার লক্ষ্য থাকবে বিসিএসের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় টিকে বড় অফিসার হওয়া। এ লক্ষ্যে বর্তমানে রাজশাহীতে অবস্থান করে সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মহান আল্লাহ তার মনের আশা পূর্ণ করবেন বলে সে আশা প্রকাশ করে।
বনির মা জানায়, আমার মেয়ে ছোট থেকেই কষ্ট করে চায়ের দোকানে কাজ করে লেখাপড়া করেছে। তাকে যখন চায়ের দোকানে কাজের জন্য লেখাপড়া করাতে পারছিলাম না, তখন একটি বাড়িতে দুই বছর কাজ করে বিনা খরচে স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছিল। এক পর্যায়ে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। তাকে ভর্তি করানোর জন্য বাড়ির পোষা হাঁস, মুরগি বিক্রি ও এনজিও থেকে লোন করতে হয়।
পিতা দুরুল ইসলাম জানান, আমার একটি ছোট চায়ের দোকান আছে। দোকানটি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পরিচালনা করছি। আমার পরিবারে এখন মোট ৯ জন সদস্য। বনি ব্যতীত অন্য সন্তানেরা তেমন লেখাপড়া করেনি। আয়-উপার্জনের একমাত্র পথ হচ্ছে চায়ের দোকান। আমার বড় ছেলেটা কাঠের মিলে কাজ করে। আর সেখান থেকে কিছু টাকা পেলে আমাকে সাহায্য করে। মেয়েকে তার শিক্ষা জীবনে আর্থিকভাবে সহযোগিতা কখনই করতে পারিনি। আমার মেয়েটা চায়ের দোকানে থেকে অনেক কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত এগোতে পেরেছে।
এ বিষয়ে প্রতিবেশী রবিউল আহসান বাবু বলেন, খুব কষ্ট করে বনি লেখাপড়া করেছে। বাবার চায়ের দোকান ও পরের বাসায় কাজ করে শুধুমাত্র তার অদম্য ইচ্ছার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। বনি তার শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই আমাদের এলাকার মানুষের প্রত্যাশা। যুগান্তর
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.