নিজস্ব প্রতিবেদক: হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। ভৌগলিক কারণে এ জেলার অবস্থান সব চেয়ে উঁচুতে। এ জেলার মাটি এটিল-দোআঁশ, দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ এবং বেলে। এ কারণে এ জেলায় সকল ফসলই চাষ করা সম্ভব।
কাজুবাদাম সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জনাব মু. আব্দুস ছালাম ২০১০ সাল থেকে কাজুবাদাম এবং কফি ফসলদুটি উৎপাদনে কৃষকগণকে উৎসাহিত করছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরী করছেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনার এবং অসংখ্য লেখার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় কৃষি মন্ত্রী, জনগণ এবং আমলাগণকে অবহিত করছেন। তাঁর অনুরোধে এবং মাননীয় কৃষি মস্ত্রীর আন্তরিক চেষ্টায় ২০২১ সালে ’কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়।
জনাব মু. আব্দুস ছালাম কাজুবাদাম উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাত করার লক্ষ্যে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য আফ্রিকা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং ভারত ভ্রমণ করেন। তিনি এসব দেশ থেকে উচ্চ ফলনশীল এরধহঃ বা বড় সাইজের কাজুবাদামের বীজ আনেন ২০১৮ সালে এবং তাঁর ৪ বিঘা জমিতে রোপন করেন। ২ বছরের মধ্যেই তাঁর রোপন করা কাজু গাছে ফল আসে এবং এ বছরের ২৭শে ফেব্রুয়ারী মাননীয় কৃষি মন্ত্রী তাঁর কাজুবাদাম বাগান পরিদর্শন করেন।
অনেক কৃষিবিদ এবং কৃষিবিজ্ঞানী জনাব মু. আব্দুস ছালামকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন যে, উত্তরবঙ্গে কাজু এবং কফি চাষ সম্ভব নয়। কিন্তু ফলাফল দেখা যাচ্ছে সম্পুর্ণ বিপরীত। আশা করা যাচ্ছে যে, ৩ পার্বত্য জেলার চেয়ে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং নীলফামারী জেলাতে কাজুবাদাম এবং কফি ভালো হবে।
পঞ্চগড়, নীলফামারী এবং ঠাকুরগাঁও জেলায় এখনও হাজার হাজার একর বেলে মাটির জমি পতিত রয়েছে। কাজুর সাথীফসল হিসেবে কফি, এলাচি, গোলমরিচ, আদা প্রভৃতি উৎপাদন করা হবে স্থানীয় বাজারের জন্য আর মিষ্টিআলু, ওল, হলুদ প্রভৃতি উৎপাদন করা হবে রপ্তানি বাজারের জন্য। ২০৩০ সালের মধ্যে কাজুবাদাম ও কফি উৎপাদনে বাংলাদেশ সম্পুর্ণতা অর্জন করবে মর্মে জনাব মু. আব্দুস ছালাম আশাবাদী।
পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলায় ইতোমধ্যে একটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক কাজু প্রসেসিং কারখানা স্থাপিত হয়েছে এবং উৎপাদন শুরু করেছে। এ কারখানায় দৈনিক ৫টন কাজুনাট প্রসেস করা হয়। অপরদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় কারখানাটি স্থাপিত হচ্ছে এ জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায়, যেখানে দৈনিক ২০ টন কাজুনাট প্রসেস করা হবে।
কফি প্রসেসিং কারখানা প্রসঙ্গে জনাব মু. আব্দুস ছালাম বলেন যে, কফি হচ্ছে কুটির শিল্পের ফসল। প্রত্যেক কৃষকই তার উঠানে তার উৎপাদিত কফি বিন প্রসেস করবেন, রোদে শুকাবেন এবং বিক্রয় করবেন। অপরদিকে, অত্র সংগঠনের কয়েকজন সদস্য উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে কফি প্রসেসিং কারখানা স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন।
সবশেষে জনাব মু. আব্দুস ছালাম বলেন যে, কাজুবাদাম এবং কফি ফসল এবং শিল্পদুটির উন্নয়নে প্রকল্প পরিচালক জনাব মো: শহিদুল ইসলাম সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছেন। আশা করা যায় যে, এ ফসল এবং শিল্পদুটি খুব শীঘ্রই গার্মেন্টস শিল্পের বিকল্প, পরিপুরক এবং দেশের প্রধান অর্থকরী এবং রপ্তানিযোগ্য পণ্যের জায়গা দখল করবে।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.