স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া আমচত্ত্বর এলাকায় সরকারি জায়গা ঘিরে আলিশান বাড়ি তুলে ভোগ দখল করেছেন রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ক্লিনিকের সত্ত্বাধিকারী ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহীর আমচত্ত্বর থেকে পূর্ব দিকে রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকের পাশেই নিজের জমির সাথেই প্রায় এক বিঘা জায়গা দখল করেছেন ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা। নিজের জমির বাইরেও তিনি বাউন্ডারি ওয়াল ও কাটাতারের দেওয়াল তুলে দখল করে রেখেছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডা. ফাতেমা সিদ্দিকা নগরীর আমচত্ত্বরের রাজশাহী মহিলা পলিটেকনিকের পাশর্^বর্তী এলাকাতে জায়গা কিনেছিলেন প্রায় ৮ বছর পূর্বে। তারপরই তিনি ওই জায়গাটি ঘিরে নেন। সেখানে নিজে থাকার জন্য গড়ে তোলেন বাড়ি। সেই সাথে পাশেই আরেক ভবন বানান ছাত্রী হোস্টেলের জন্য যার অনেকাংশ জায়গা সড়ক ও জনপথ (সওজ) এর অধিগ্রহণকৃত জায়গাতে। এছাড়াও তিনি বাড়ির সামনের এলাকাটি দুইপাশে ইটের প্রাচীর ও সামনের দিকে ঘিরে নেন কাটাতার ও সিমেন্টের পিলার দিয়ে। সেখানে দুটি বড় বড় লোহার গেইটও স্থাপন করেন।
শুধু তাই নয়, ওই দখলকৃত জায়গায় গড়েছেন একতলার দুটি কক্ষ। লাগিয়েছেন আমগাছ সহ নানা প্রজাতির বৃক্ষ। এছাড়াও বাইরে লাগিয়েছেন সৌন্দর্যবর্ধনকারী বৃক্ষ। সড়ক ও জনপথের বৃক্কপালনবিদ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি সেখানে কেটেছেন বেশ কয়েকটি বৃক্ষ।
এদিকে রাসিক সূত্র বলছে, আমচত্ত্বর থেকে কৃষ্ণগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ৭ ফিটের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা। কৃষ্ণগঞ্জের ঘাটেই গিয়ে পড়বে ওই ড্রেনের পানি। তবে ওই কাজের কিছু অংশ হয়েছে অনেকটা গোপনে। ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার ঘিরে রাখা সীমানার মধ্যেই ঠিকাদার গোপনে ড্রেনের নির্মান কাজটি সেরেছেন। এতে ভাঙ্গা পড়েনি তার নির্মিত বাড়ি। শুধু তাই নয়, ওই ড্রেনটি নির্মিত হয়েছে ডা. ফাতেমার তিন তলা বসত বাড়ি ও দোতলা ছাত্রীনিবাসের কোল ঘেষে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ তার নিজের বাস ভবন ও ছাত্রীনিবাস বাচাতে বা বাড়ির কিছু অংশ না ভাঙ্গার শর্তে ঠিকাদারকে তার দখলকৃত জায়গায় সমস্ত ড্রেনের নির্মান খরচ তিনি নিজেই প্রদান করেছেন।
জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার বাড়ির কেয়ার টেকার মো. আব্দুল জব্বারের কাছে। তিনি জানান, এবিষয়ে আমি কথা বলতে পারবা না, মালিকের নিষেধ আছে। তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে তিনি মালিকের বরাত দিয়ে বলেন, সড়ক ও জনপদ এর কতৃপক্ষর নিকট মৌখিক অনুমতি নিয়েই বাড়ি নির্মানসহ গেট ও বাউন্ডারি দিয়ে ঘিরেছেন। তিনি প্রতিবেদককে আরও জানান, স্যার-ম্যাডাম বাইরে গেছেন। তারা আসলে আপনার আসার বিষয়ে আমি স্যার ও ম্যাডামকে জানাবো।
ডা. ফাতেমা সিদ্দিকার বাড়িতে গিয়ে এবং তাকে বারং বার তার মুঠোফোনে ফোন করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তার স্বামী মো. ইউসুফকেও ফোনে বারং বার কল করলেও তিনি ফোন না ধরে উল্টো ফোনটি বন্ধ করে দেন।
এবিষয়ে কথা হয় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, আমরা সড়ক ও জনপথের সাথে কথা বলে সার্ভেয়ারের কাছে থেকে জায়গা বুঝে নিয়েই সেখানে কাজ করা হয়েছে। সেখানে কে কার জায়গায় রাজকীয় বাড়ি করেছে তা আমাদের দেখার বিষয় নয়। সেটি সড়ক ও জনপথের জায়গা, ওই বিষয়ে তারা বুঝে নিবে।
তবে সড়ক ও জনপথের (সওজ) সার্ভেয়ার মো. মিল্লাত জানান, সেখানে রাসিক থেকে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু প্রথমদিকে তাদের সাথে জায়গাটি দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে তারা তাদের মত করে কাজ করেছে, আমাদের জানা নেই।
সড়ক ও জনপথের জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে তেমন অভিযোগ আমরা পায়নি। এমনভাবে কেউ দখল করলে তার ব্যবস্থা অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।
অন্যদিকে রাজশাহী সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুজ্জোহা বলেন, এমন ঘটনা আমার জানা নেই। কেউ আমাদের অধিগ্রহণকৃত জমি দখল করে থাকলে আমাদের পক্ষ থেকে অবশ্যই তা দখলমুক্ত করা হবে। সে ডাক্তার হউক বা যেই হউক না কেন।
তিনি যোগ করেন, আমচত্বরেও আমাদের বেশ কিছু জায়গা দখল হয়ে আছে। সেগুলোসহ অন্যান্য যে জায়গাগুলো দখল হয়ে আছে সেগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের মাধ্যমে দখলমুক্ত করা হবে।
মতিহার বার্তা / এফ কে
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.