শিরোনাম :
ফ্রিজ়ে রাখা দুধ গরম করলেই ছানা হয়ে যায়! ফেলে না দিয়ে বানিয়ে ফেলুন নতুন ৫ খাবার গোপন করেছিলেন বিয়ে, প্রেমে পড়েছিলেন সহ-অভিনেত্রীর, বহুকামিতা নিয়ে প্রচারে থাকেন বলি নায়িকা ‘আল্লার কাছে পাঠিয়ে দেব’, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্ডোগানের বার্তা রাশিয়ার পরে এ বার আইএসের হানা গৃহযুদ্ধ দীর্ণ সিরিয়ায়, বিস্ফোরণ, গুলিতে নিহত অন্তত ১১ রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্টারের বিরুদ্ধে মামলা করলো দুদক পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় মৃত ৬ বিশ্বসুন্দরীমঞ্চে এই প্রথম মুসলিমবিশ্বের প্রতিনিধি… দেখে নিন আপনি বুদ্ধিমান কী না! দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু কাজে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
স্কুল নির্মাণ কাজ : রাজশাহীতে ক্লাশ চালু নিয়ে বিপাকে শতাধিক স্কুল

স্কুল নির্মাণ কাজ : রাজশাহীতে ক্লাশ চালু নিয়ে বিপাকে শতাধিক স্কুল

স্কুল নির্মাণ কাজ : রাজশাহীতে ক্লাশ চালু নিয়ে বিপাকে শতাধিক স্কুল
স্কুল নির্মাণ কাজ : রাজশাহীতে ক্লাশ চালু নিয়ে বিপাকে শতাধিক স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী জেলায় এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় ক্লাশ চালু নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। তবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের  অভিযোগ, বার বার ঠিকাদার ও শিক্ষা প্রকৌশলকে কাজ দ্রুত করার তাগাদা দিয়েও তারা গড়িমসি করে কাজ করছেন। এতে স্কুল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে নগরীর শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়, রানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সায়েরা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, ছোট বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও আটরশিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সহ অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি ক্লাশ চালু হওয়ার মতো। এতে অনেকটায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা। ঠিক একই ধরনের দুর্দশায় উপজেলার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। অভিভাবক ও স্থানীয়দের দাবি, প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্যরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে তদারকি না করার কারণে এহেন দূর্ভোগ ও অব্যবস্থপনায় পড়তে হয়েছে। এতে ছেলে-মেয়েদের ক্লাশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে অভিভাবকেরা।

রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় মোট ৯০৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ৭১টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৭৩টি প্রাথমিক এবং রাজশাহী মহানগরে মাদ্রাসাসহ রয়েছে মোট ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে- রাজশাহী জেলায় প্রায় ১২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ও পুরোনো ভবন নির্মাণের ও রিপেয়ারিং এর কাজ চলমান রয়েছে। ১২০টির মধ্যে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এমনই চিত্রের দেখা মিলেছে নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডের শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ে। পাঁচ তলা এ ভবনটিতে রয়েছে ২৫০ জন শিক্ষার্থী। সেখানে রয়েছে মোট ১৫টি কক্ষ। তার মধ্যে ৬টি শ্রেণী কক্ষ রয়েছে। আর বাকি ৬টিতে নির্মাণ কাজ চলছে গত দু’বছর যাবৎ। তারপরও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। 

সরেজমিনে গিয়ে সেখানে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির প্রতিটি ফ্লোরে কাজ চলমান।  ঢালাই, মোজাইক, দরজা-জানালা লাগানোসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজ বাকি রয়েছে। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত না হলে যে কোনো সময় স্কুল চলাকালীন অবস্থায় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয় ভবনটির নিচতলা ও দ্বিতীয় তলার ৮ম শ্রেণীর স্থানে রয়েছে শ্রমিকদের থাকার জায়গা। বেঞ্চ দিয়ে তারা বানিয়েছেন বেড। সিড়িঘর সহ কয়েকটি ঘরে রয়েছে রড, সিমেন্ট সহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী। কোন ঘরেই বেঞ্চ নেই, ক্লাশরুম পুরোটায় ফাকা। অপরিচ্ছন্ন রয়েছে বাথরুম। ভাঙ্গা পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকটি ঘরের দরজা। সর্বোপরি বলা যায় যে, একেবারেই ক্লাশের অনুপযোগী হয়ে রয়েছে বিদ্যালয়টি।

এবিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন প্রামাণিক বলেন, গত দুবছর থেকে এই নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। 

নির্মাণ কাজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক নির্মাণ কাজ আজ রাতের মধ্যেই সেরে ফেলা হবে। বাকি থাকবে না। আগামীকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করার পরিবেশ পাবে।’

অথচ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, নির্মাণ কাজ শেষ হতে কমপক্ষে আরও তিন মাস সময় লাগবে। যেসব কাজ বাকি আছে তাতে একদিনে করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এটা বলা মানে পাগলের মতো কথা বলার সমান।’

ঠিক একই অবস্থা চারঘাট উপজেলার মৌল ভাগ বাসুদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সেখানেও চলছে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। পাশেই রয়েছে তিন রুম বিশিষ্ট ক্লাসরুম। মাঠ জুড়ে উঁচু করে রাখা হয়েছে মাটি। অফিস রুমের দরজার সামনে স্তুপ করে রাখা হয়েছে সিমেন্টের বস্তা। দুটো মাত্র ক্লাসরুম রয়েছে, দুটোতেই রাখা হয়েছে লোহার রড, পাইপ, তার ও টিনের ড্রাম। সবগুলো রুমের তালা খোলা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বসার মতো কোনো পরিবেশ নেই। তারপরও প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন স্কুল খোলার আগেই পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু সেখানে তেমন কোনো পরিবেশ নেই।

একই উপজেলার নাওদাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেও তিনরুম বিশিষ্ট ভবনের সামনে পাহাড়সম মাটির স্তুপ। বিদ্যালয়ের মাঠে পা ফেলানোর মত জায়গা নেই। রুমের সবগুলো তালা খুলে ভেতরে রাখা হয়েছে নির্মাণ কাজের সামগ্রী।

চারঘাটের জয়পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাগিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিরোজপুর (১) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাবিবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, পুঠিয়ার নন্দনগাছী উচ্চবিদ্যালয়ে, বাঘার চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ রাজশাহীর প্রতিটি উপজেলার একাধিক প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা বিরাজ করছে।

এসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের একই ভাষ্য, ক্লাশ শুরুর আগে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিছুই ঠিক করতে সক্ষম হননি তারা। এতে অনেক অভিভাবকসহ সমাজের সুশীলগণ হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এমন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আগামী ১২ তারিখ সারাদেশে ক্লাশ শুরু হবে। এনিয়ে সারাদেশে সারাদিন মিটিং, কর্মশালা, ভিজিটসহ নানা সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়তই প্রতিটি উপজেলা ও শহরের প্রত্যেকটি কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ প্রধান শিক্ষদের সাথে মিটিং করা হয়েছে। তারা বরাবরই বলেছেন সব ঠিক আছে। কিন্তু আমি নিজেই গত বৃহস্পতিবার বাগমারায় গিয়ে দু’একটি স্কুলে এধরনের সমস্যা দেখে আসছি, নিজে উপস্থিত থেকে সমাধানও করে আসছি।’
তিনি আরও বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর সরকার ঘোষিত ১১টি নির্দেশনা মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হবে। এনিয়ে আমরা সবাই ব্যস্ত। আমাদের শুক্রবারের সাপ্তহিক ছুটি বাতিল হয়েছে। সেদিনও আমরা অফিস করেছি, মাঠ পর্যায়ে দৌড়েছি। তারপরও অনেকেই উদীসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলার পরিচয় দিয়েছেন, যা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।’

জেলা কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান এমন গড়িমসি করছে তাদের বিষয়ে আমি খোজ খবর নিয়ে দেখছি। আগামীকাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ শুরু হবে। যারা সরকার ঘোষিত নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।’

এবিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ে ১২ কোডে কাজ পরিচালনা হয়। তার মধ্যে রাজস্ব কোডে কাজ চলে ৪টি। আর এই ৪টিই হচ্ছে রিপেয়ারিং এন্ড রিকন্সট্রাকশন,  দোতলা বা একতলা ভবন নির্মাণের কাজ। এই কাজগুলোতে ঠিকাদাদের বহু টাকা বাকি পড়ে আছে। গত জুলাই মাসে ৪০ কোটি টাকা চেয়ে মাত্র ২ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। চলতি মাসে ৬০ কোটি টাকার পাওনা রয়েছে ঠিকাদারদের। সেক্ষেত্রে আমরা বললেও তারা টাকা অজুহাত দেখিয়ে কাজ শেষ করতে চান না। তাই এবিষয়ে তেমন জোর দিয়ে কিছু বলার নেই।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply