রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় মোট ৯০৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ৭১টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৭৩টি প্রাথমিক এবং রাজশাহী মহানগরে মাদ্রাসাসহ রয়েছে মোট ৯৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ভাষ্যমতে- রাজশাহী জেলায় প্রায় ১২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ও পুরোনো ভবন নির্মাণের ও রিপেয়ারিং এর কাজ চলমান রয়েছে। ১২০টির মধ্যে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।
শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এমনই চিত্রের দেখা মিলেছে নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডের শিরোইল কলোনী উচ্চ বিদ্যালয়ে। পাঁচ তলা এ ভবনটিতে রয়েছে ২৫০ জন শিক্ষার্থী। সেখানে রয়েছে মোট ১৫টি কক্ষ। তার মধ্যে ৬টি শ্রেণী কক্ষ রয়েছে। আর বাকি ৬টিতে নির্মাণ কাজ চলছে গত দু’বছর যাবৎ। তারপরও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ।
এবিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন প্রামাণিক বলেন, গত দুবছর থেকে এই নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
নির্মাণ কাজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেভাবেই হোক নির্মাণ কাজ আজ রাতের মধ্যেই সেরে ফেলা হবে। বাকি থাকবে না। আগামীকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাশ করার পরিবেশ পাবে।’
অথচ নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, নির্মাণ কাজ শেষ হতে কমপক্ষে আরও তিন মাস সময় লাগবে। যেসব কাজ বাকি আছে তাতে একদিনে করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। এটা বলা মানে পাগলের মতো কথা বলার সমান।’
ঠিক একই অবস্থা চারঘাট উপজেলার মৌল ভাগ বাসুদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সেখানেও চলছে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। পাশেই রয়েছে তিন রুম বিশিষ্ট ক্লাসরুম। মাঠ জুড়ে উঁচু করে রাখা হয়েছে মাটি। অফিস রুমের দরজার সামনে স্তুপ করে রাখা হয়েছে সিমেন্টের বস্তা। দুটো মাত্র ক্লাসরুম রয়েছে, দুটোতেই রাখা হয়েছে লোহার রড, পাইপ, তার ও টিনের ড্রাম। সবগুলো রুমের তালা খোলা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বসার মতো কোনো পরিবেশ নেই। তারপরও প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন স্কুল খোলার আগেই পাঠদানের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু সেখানে তেমন কোনো পরিবেশ নেই।
একই উপজেলার নাওদাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়েও নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানেও তিনরুম বিশিষ্ট ভবনের সামনে পাহাড়সম মাটির স্তুপ। বিদ্যালয়ের মাঠে পা ফেলানোর মত জায়গা নেই। রুমের সবগুলো তালা খুলে ভেতরে রাখা হয়েছে নির্মাণ কাজের সামগ্রী।
চারঘাটের জয়পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জাগিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পিরোজপুর (১) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাবিবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, পুঠিয়ার নন্দনগাছী উচ্চবিদ্যালয়ে, বাঘার চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ রাজশাহীর প্রতিটি উপজেলার একাধিক প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
এমন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন।
জেলা কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান এমন গড়িমসি করছে তাদের বিষয়ে আমি খোজ খবর নিয়ে দেখছি। আগামীকাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাশ শুরু হবে। যারা সরকার ঘোষিত নির্দেশনা প্রতিপালনে ব্যর্থ হবেন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।’
এবিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ে ১২ কোডে কাজ পরিচালনা হয়। তার মধ্যে রাজস্ব কোডে কাজ চলে ৪টি। আর এই ৪টিই হচ্ছে রিপেয়ারিং এন্ড রিকন্সট্রাকশন, দোতলা বা একতলা ভবন নির্মাণের কাজ। এই কাজগুলোতে ঠিকাদাদের বহু টাকা বাকি পড়ে আছে। গত জুলাই মাসে ৪০ কোটি টাকা চেয়ে মাত্র ২ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। চলতি মাসে ৬০ কোটি টাকার পাওনা রয়েছে ঠিকাদারদের। সেক্ষেত্রে আমরা বললেও তারা টাকা অজুহাত দেখিয়ে কাজ শেষ করতে চান না। তাই এবিষয়ে তেমন জোর দিয়ে কিছু বলার নেই।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.