শাহানুর আলম বাবু,বাঘা : রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাকের দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২৮ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর শাখা-১ এর উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত পত্রে মন্ত্রণালয় এ নির্দেশ দেন। মেয়র রাজ্জাকের দুর্নীতি-অনিয়ম ছাড়াও জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বিবিধ অনিয়মের অভিযোগগুলো সরেজমিন তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপসচিব আবু জাফর রিপনকে। দ্রুত সময়ে তদন্ত শেষে সিনিয়র সচিব বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইপত্রে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাঘা পৌরসভায় কোনো জনবল নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে পৌর মেয়রকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ১১ অক্টোবর বাঘা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগ, রাজস্বের অর্থ তছরুপ, হাট-বাজার ইজারার টাকা পৌর তহবিলে জমা না করাসহ সরকারি অনুদান ও বিভিন্ন খাতের বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপের লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করে।
অভিযোগে ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে চলেছেন। এর আগে তিনি মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করায় তাকে ১১ মাসের বেতন-ভাতা দেওয়া হয়নি। তার ওয়ার্ড এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন বরাদ্দ ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া পৌর কাউন্সিলররা ৪ মাস ধরে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না টাকা না থাকায়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে পৌরসভার হাট-বাজার ইজারা বাবদ আহরিত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং পৌর মার্কেট নির্মাণে টেন্ডারপত্র বিক্রি বাবদ পাওয়া ৯৬ লাখ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে মেয়র আত্মসাৎ করেছেন। এসব খাতের ভ্যাট ও আয়কর বাবদ টাকা মেয়র অদ্যাবধি সরকারি রাজস্ব খাতে জমা করেননি যা গুরুতর অপরাধের শামিল। পৌর এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ১৫ লাখ টাকা পৌর তহবিল থেকে উত্তোলন ও ব্যয় দেখানো হলেও কোথাও কোনো কাজ করা হয়নি। একইভাবে জন্মনিবন্ধন থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা করার নিয়ম থাকলেও পৌর মেয়র এখন পর্যন্ত এক টাকাও জমা দেননি। কাউন্সিলর তার অভিযোগে বলেন, বর্তমানে বাঘা পৌরসভায় ১৮ জন স্থায়ী ও ১২ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। পৌর তহবিলে টাকা না থাকায় ৬ মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা হচ্ছে না। এছাড়া গত এক বছর পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলেও কোনো টাকা জমা হয়নি।
সম্প্রতি কোনো কাউন্সিলরকে না জানিয়ে ও মাসিক সভায় অনুমোদন না করেই পৌর মেয়র আরও ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। পৌর মেয়র বিভিন্নজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নিয়ে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালিয়েছেন। যেখানে পৌরসভার বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থাভাবে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, সেখানে আরও ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে-সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে কমিশন আদায়ের অভিযোগও এনেছেন মেয়রের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে তিনি বলেন, মেয়রের কমিশন আদায়ের কারণে ঠিকাদাররা অবকাঠামো উন্নয়নে নিুমানের ও দায়সারা গোছের কাজ করেছেন-যা সরেজমিন তদন্ত করলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।
এদিকে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন ও অন্যান্য অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মেয়র আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফলে অভিযোগ সম্পর্কে তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.