শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
মেয়র আব্বাসের নজিরবিহীন দুনীতি ও দখলবাজিতে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

মেয়র আব্বাসের নজিরবিহীন দুনীতি ও দখলবাজিতে অতিষ্ঠ পৌরবাসী

কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস সাময়িক বরখাস্ত
কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস সাময়িক বরখাস্ত

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর নজিরবিহীন দুনীতি ও দখলবাজিতে অতিষ্ঠ ছিলেন এলাকাবাসী। কিন্তু তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে এতদিন প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেননি তারা।

তবে গোপনে জেলা প্রশাসকের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি তার ১১ দুর্নীতি চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিলেও তার কোনো শাস্তি হয়নি।

বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে আব্বাস গ্রেফতার হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয়রা।

তাকে মেয়র পদ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটাখালী পৌর এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার এলাকাবাসী আব্বাসের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

এদিন সকালে র‌্যাব আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় আব্বাসকে সোপর্দ করে। পুলিশ রাসিকের (রাজশাহী সিটি করপোরেশন) ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিনের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। পরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস রিমান্ড শুনানির দিন রোববার ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০১১ সালে আব্বাস আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এর পরই তিনি মাসকাটাদিঘি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং কাটাখালী গার্লস স্কুলের সভাপতির পদ দখল করেন।

পরে প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের জমি দখলের পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। অভিযোগে বলা হয়, আব্বাস আলী মাসকাটাদিঘি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭ জন এবং কাটাখালী গার্লস স্কুলে ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। স্কুল-কলেজের কল্যাণ ফান্ডের নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্ধ কোটি টাকা নেন।

এ টাকার একটি পয়সাও তিনি প্রতিষ্ঠান দুটির তহবিলে জমা দেননি। ওই বছরের ১৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক আব্বাসের দুর্নীতি তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি করেন। পবার এসি ল্যান্ডের নেতৃত্বে কমিটি ওই বছরের ৬ জুলাই আব্বাসের জমি দখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ ১১টি দুর্নীতি চিহ্নিত করে ১২২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয়।

পরে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে তা পাঠায় জেলা প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সরেজমিন দেখা গেছে, কাটাখালী স্কুলের পূর্ব-উত্তরের দেওয়াল ঘেঁষে স্কুলের জমিতে বাবার নামে আশরাফ মেমোরিয়াল কিন্ডার গার্টেন গড়ে তোলেন আব্বাস। এর টিন শেড ঘরের মোট ৬টি কক্ষে পাঠদান করা হয়। এছাড়া রয়েছে একটি দোতলা ভবন। এটিও স্কুলের জমি দখল করে নির্মাণ করেন আব্বাস। এই ভবনটির নিচতলায় কেজির ক্লাস হয়। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠার মুখেই চোখে পড়ে সিসি ক্যামেরা। এ তলার সব কক্ষ সুসজ্জিত। এটি আব্বাস ব্যক্তিগত চেম্বার হিসাবে ব্যবহার করেন।

স্কুলের শিক্ষক ও এলাকাবাসী জানান, আব্বাস স্কুলটির সভাপতি হয়ে শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই জমি দখল করে কিন্ডার কার্টেন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরিচালনা করেন তার স্ত্রী রাবেয়া সুলতানা।

জানা যায়, মাসকাটাদিঘি স্কুলের মার্কেটের দোতলায় ৯টি দোকান নিজের আত্মীয়স্বজনের নামে বরাদ্দ করে পরে আব্বাস চড়ামূল্যে বিক্রি করেন। এসব দোকান উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু আব্বাস ভয়ভীতি দেখিয়ে আত্মীয়স্বজনদের নামে দোকানগুলো নিলাম দেখান।

দোকানগুলোর নিলাম মূল্য ২৭ লাখ টাকা ধরা হলেও আব্বাস নেন ১০ লাখ ২ হাজার টাকা। প্রতিটির নিলাম মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ৭ হাজার টাকা। পরে আব্বাস এসব দোকান প্রতিটি ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।

আব্বাস শুধু স্কুলের জমিই দখল করেছেন তা নয়; এলাকার অনেক মানুষের জমিও দখল করে নিয়েছেন তিনি। আব্বাসের ওই দোতলা চেম্বারের পূর্বদিকে তাহের স্বর্ণকারের অর্ধকোটি টাকার জমি দখল নিয়ে নিজের ব্যক্তিগত চেম্বার সম্প্রসারণ করেন আব্বাস।

এই জমি উদ্ধারে তাহের স্বর্ণকারের ছেলে সেলিম আদালতে মামলা করেছিলেন। কিন্তু মামলা করার কারণে আব্বাসের ক্যাডার বাহিনী রাতের আঁধারে সেলিমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে। তাহের স্বর্ণকার মারা গেলেও তার ছেলে জমি উদ্ধার করতে পারেননি।

কাটাখালী বাজারসংলগ্ন দালালপাড়ার রবিউলের ৩ কাঠা জমি দখল করেন আব্বাস। রবিউল জমি উদ্ধারে আদালতে মামলা করলেও দখলমুক্ত করতে পারেননি।

আব্বাস কাটাখালী বণিক সমিতির সভাপতির পদটিও আঁকড়ে রয়েছেন। কাটাখালী বাজারের জায়গায় ব্যবসায়ীদের টাকাতেই দোকান তৈরি করে তাদের কাছেই বিক্রি করেছেন চড়াদামে।

এদিকে কাটাখালীর সর্বস্তরের মানুষ আব্বাসকে মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাটাখালী পৌর এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ তার ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সামার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন আ.লীগ নেতা মোতাহার আলি, আক্তার হাসান রুনু, মহরম আলী খান ডাবলু, অধ্যক্ষ জহুরুল আলম রিপন, শাহজামাল, আসাদ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, কাউন্সিলর বোরহান উদ্দিন ও মঞ্জুরুল ইসলাম, ইয়াসিন আলী প্রমুখ। বক্তারা পৌর এলাকার সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি পদ থেকে আব্বাসকে অপসারণসহ তার দখল করা জায়গা ও অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করার দাবি জানান।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply