শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
রাজশাহীতে খবরের ফেরিওয়ালা কাজল কুমারের খবর রাখে না কেউ-ই

রাজশাহীতে খবরের ফেরিওয়ালা কাজল কুমারের খবর রাখে না কেউ-ই

রাজশাহীতে খবরের ফেরিওয়ালা কাজল কুমারের খবর রাখে না কেউ-ই
রাজশাহীতে খবরের ফেরিওয়ালা কাজল কুমারের খবর রাখে না কেউ-ই

নিজস্ব প্রতিবেদক : খবরের ফেরিওয়ালা কাজল কুমার দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে রাজশাহী রেলস্টেশন ও বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্রি করছেন পত্রিকা বাবা ভুমলা কুমারের হাত ধরেই ১২ বছর বয়সে এসেছিলেন এ পেশায় বাবা মারা গেছেন কিন্তু কাজল কুমার এখনো আগলে ধরে আছেন তার পৈত্রিক পেশা।

কাজল কুমারের ছোট দুই ভাইও ছিলেন খবরের ফেরিওয়ালা তবে কালের বিবর্তনে তারা ভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়েছেন পাল্টেছেন তাদের নিজেদের ভাগ্য রয়ে গেছেন শুধু কাজল কুমার।

প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খবর পৌঁছে দেন মানুষের হাতে হাতে অতঃপর বিকেলে রেলওয়ে বুকস্টলে এসে পেপারের হিসাব বুঝিয়ে দিয়ে ফেরেন নিজ গৃহে সারাদিন খবরের কাগজ ফেরি করে যা আয় হয় তাতেই চলে দুজনের সংসার।

বর্তমানে খবরের কাগজ বিক্রির হালচাল জানতে চাইলে জাগো নিউজকে কাজল কুমার বলেন, এখন মানুষ আর পেপার কিনতে চাই না পড়েও না সবাই মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত করোনার পর থেকে পেপার বিক্রি একদম নেই করোনায় কোনো কাজ ছিল না খুব কষ্টে কেটেছে সেই সময় কেউ সাহায্য করেনি।

তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এই স্টেশন ও বাস চত্বরে পেপার বিক্রি করছি ৫০ বছর ধরে পেপার বেচে কিছুই পেলাম না, পেলো শুধু খুকি খুকির ২০-২৫ বছর হয়েছে পেপার বিক্রির, কিন্তু আমি দেশ স্বাধীনের পর থেকে পেপার বিক্রি করছি অথচ প্রধানমন্ত্রী শুধু খুকিকেই দিলেন, আমাকে কিছুই দিলেন না’।

রাজশাহীর একমাত্র নারী খবরের কাগজ বিক্রেতা ছিলেন খুকি খানিকটা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বামী ছেড়ে যান তাকে তার পাগলামীর জন্য ছেলেও যোগাযোগ করে না তবে খুকি তার জীবন চালানোর জন্য বেছে নেন খবরের কাগজ বিক্রির পেশা জাতীয়-স্থানীয়সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয় বেশ কয়েকবার খুকির অসহায় জীবন যাপনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসায় তার দায়ভার নেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়ভার নেওয়ার ঘোষণার পর রাজশাহীসহ বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সেচ্ছাসেবী সংগঠন এগিয়ে আসে খুকির জন্য এতে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ফেরে খুকির কিন্তু মানসিক সমস্যার কারণে আবার পেপার নিয়ে বের হন রাজশাহীর পথঘাটে যে টাকাগুলো পান সেগুলো দিয়ে আসেন তার নিকটাত্মীয়ের কাছে।

খুকিকে প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা করেছেন, কিন্তু কাজল কুমারকে করেননি এতেই ব্যথিত কাজল কুমার তার আক্ষেপ, ‘আমি ৫০ বছর ধরে খবরের কাগজ দিয়ে বেড়াই কিন্তু কেউ একবারও আমার খবর নিলো না’।

রেলস্টেশনেই রয়েছে রাজশাহীর অন্যতম ডিস্ট্রিবিউশন হাউস হেকমত উল্লাহ বুকস্টল সেখানকার মালিক মো. শহিদুল্লাহ সাঈদ
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বুদ্ধির পর থেকেই কাজল কুমারকে দেখছি আমাদের হাউস থেকে পেপার নিয়ে বিক্রি করছেন খবরের কাগজ বেচেই সংসার চলে তার সে বেশ গরিব ও অসহায় মানুষ বর্তমানে সে চোখ ও পায়ের সমস্যায় ভুগছে এছাড়াও দু’বছর করোনাকালীন সময়ে বেচারার খুব কষ্টে কেটেছে’।

তিনি বলেন, যতটুকু পারি আমাদের পক্ষ থেকে করার চেষ্ট করি কিন্তু তার সব সমস্যা সমাধান করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় তবে মাঝে মধ্যে রেলকর্তৃপক্ষ তাকে স্টেশন চত্বরে পেপার বিক্রি করার সময় বাধা দিলে আমি চেষ্টা করি তাকে সহায়তা করার কারণ পেপার বিক্রি না করতে পারলে তার না খেয়ে থাকার মতো অবস্থা হয় তার দুটো ছেলে আছে কিন্তু তারাও নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত বাবা-মাকে দেখে না।

কাজল কুমার বলেন, ১৯৭১-এ সময় আমার বয়স ছিল ১২ সেই ১২ বছর বয়স থেকে স্টেশনে পেপার বিক্রি করছি সকালে পদ্মা, সাগরদাড়ি, মধুমতি, বনলতাসহ বিভিন্ন ট্রেনে পেপার বেচার পর বাকি সময়টায় কয়েকটি পরিচিত কাস্টোমারদের পেপার দিয়ে আসি এরপর বাড়ি গিয়ে গোসল-নাস্তা সেরে আবার বের হতে হয় দুপুরে কপোতাক্ষ, বরেন্দ্র, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ও সিল্কসিটি ট্রেনে কাগজ বেচা শেষ হলে বিকেলে বাকি পেপারগুলো বুকস্টলে জমা দিয়ে বাড়ি ফিরে যাই।

আগে সন্ধ্যার কমিউটার ও ধুমকেতু ট্রেনে পেপার বিক্রি হতো কিন্তু এখন আর রাতে কেউ পেপার কেনে না তাছাড়া এখন বয়স হয়েছে চোখ দিয়ে পানি পড়ে, পায়ের ব্যথা তাই রাতের বেলায় আর আসেন না বলেও জানান তিনি।

৬২ বছর বয়সী এই খবরের কাগজ বিক্রেতার রয়েছে দুই সন্তান বড় ছেলে রঞ্জু রড সিমেন্টের দোকানে ম্যানেজারি করে ছোট ছেলে সাঞ্জু গার্মেন্টেসের দোকানের কর্মচারী দু’জনের কেউই বাবা-মাকে খরচ দেয় না আর তাই কর্মের তাগিদে সূর্য ওঠার পরপরই কাজল কুমার বের হন খবরের কাগজ হাতে পেটের তাগিদে।

তিনি জানান, এখন তার শরীর আগের মতো চলে না চোখেও ঝাপসা দেখেন বুকেও মাঝে মাঝে ব্যথার অনুভব করেন আগে হকার্স সমিতি থেকে অসুস্থতার জন্য কিছু টাকা পেতেন কিন্তু বর্তমানে কিছুই পান না তিনি।

তিনি বলেন, আমি কাগজ বেচার জন্য হেকমত উল্লাহ সাহেবের কাছে থেকে একবার ১০০ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলাম আমি কারো কাছে হাত পাতি না কিন্তু বর্তমানে আমার শরীরটা ভালো নেই সারাজীবন সকলের খবর দিলাম কিন্তু আমার খবর কেউ রাখল না এসময় আমাকে কেউ সাহায্য করলে আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জন্য প্রার্থনা করতাম।

কাজল কুমারের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, তিনি যদি অসুস্থ হন তাহলে তাকে সরকারি চিকিৎসা ফান্ড থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের সুযোগ থাকবে তবে সেক্ষেত্রে একটি প্যার্টান রয়েছে, তার ক্যান্সার, লিবার বা কিডনির সমস্যা ইত্যাদির মধ্যে পড়তে হবে এছাড়া অন্য কোনো সহায়তার ক্ষেত্রে আমি নিজস্ব অর্থায়নে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করবো।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply