শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
চরম জনবল সংকটে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড

চরম জনবল সংকটে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড

চরম জনবল সংকটে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড
চরম জনবল সংকটে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহীর দাপ্তরিক কাজে পূর্বের ন্যায় সেবার গতি বৃদ্ধি করনের লক্ষ্যে বিধি মোতাবেক ২২৯ জন জনবল প্রয়োজন। ১৯৮৫ সালের দিকে এই বোর্ডে জনবল ছিল প্রায় ৩৫০ জনের মতো।

কিন্তু, অবসর ও অন্যান্য কারণে ২০২২ সালে সেই সংখ্যা হ্রাস পেয়ে এসে দাড়িয়েছে ১৪২ জনে (কলেজ পরিদর্শক পদটি খাঁলি থাকা সাপেক্ষে)। ১৯৯৩ সালে সর্বশেষ জনবল নিয়োগের পর এপর্যন্ত আর কোন স্থায়ী নিয়োগের মাধ্যমে জনবল নেওয়া হয়নি শিক্ষা বোর্ডে। তবে, ২০০১ সাল থেকে বিগত একুশ বছরে প্রাত্যহিক ভিত্তিতে (দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক) অস্থায়ী পদ্ধতিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০ জনের মতো।

চলতি বছরে তিনজন আর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ৪ জন মিলে আগামী বছরের নভেম্বরের মধ্যে আরো আটজন যাচ্ছেন অবসরে। সে হিসেবে ঐসময়ে বোর্ডের স্থায়ী জনবল গিয়ে দাড়াবে ১৩৪ থেকে ১৩৫ জনে। প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক জনবল থাকায় প্রাত্যহিক কাজে পড়ছে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব। কর্মরতদের উপর ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে অতিরিক্ত চাঁপ। সেবা গ্রহীতারা ভুগছে নি¤œ আর ধীরগতির সেবার আবর্তে। আর অন্যদিকে, চাকুরী স্থায়ী হবার আশা আর হতাশা নিয়ে দিন কাটছে দৈনিক ভিত্তিতে কর্মচারি ও শ্রমিকদের মধ্যে। চাকুরী স্থায়ী করনের দাবিতে বিগত সময়ে একাধিকবার আন্দোলনও করেছেন তারা। হয়েছে উচ্চ আদালতে রীট পিটিশনও। চুড়ান্ত রায়ও দিয়েছেন মহামান্য হাই কোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন। কিন্তু, তবুও যেনো সেই স্থায়ী নিয়োগের স্বপ্ন এখনো অধরা হয়েই দাড়িয়ে আছে আশা আর নিরাশার আবর্তে।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে শূণ্য পদসমূহ পূরণের লক্ষ্যে মহামান্য হাইকোর্টের রীট পিটিশন নং ৩৭৩৮/২০১৪ ও মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপিলিট ডিভিশন এর সিভিল আপীল নং ৩০০/১৫ এর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২৩৬, ২৪৩ এবং ২৪৪ তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত, বোর্ডের আইন উপদেষ্টার মতামত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের দপ্তরের প্রতিবেদন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক অত্র বোর্ডে কর্মরত দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারীদের পৌষ কোটাসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকুরী স্থায়ী করনের বিষয়ে সর্বশেষ ২৪৭ তম বোর্ড সভাতেও একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

উক্ত বোর্ড সভাতে বলা হয়েছিল, ‘অদ্যকার বোর্ড সভায় আলোচ্যবিষয় ১৩(খ) এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গঠিত রিভিউ কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত জনবল কাঠামো বোর্ড সভায় অনুমোদনসহ বোর্ডে কর্মরত দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারীদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শূন্য পদ পূরনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সর্বসম্মতি সিদ্ধান্ত গৃহীত হল। একাধিকবার নেয়া নিয়োগ সংক্রান্ত সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে আজ অবদি সক্ষম হয়নি শিক্ষা বোর্ডের পূর্ববর্তী প্রশাসন। এবিষয়ে, বর্তমান বোর্ড সচিব ও চেয়ারম্যান পজিটিভ বক্তব্য দিলেও বছরের পর বছর ধরে আশা আর নিরাশায় দিন কাটছে ভুক্তভোগীদের।

শুন্য আসনের প্রেক্ষিতে বিধি মোতাবেক স্থায়ীভাবে ঐ সকল কর্মচারিদের নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য শিক্ষা বোর্ড বরাবর একটি নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রণালয় থেকে আসা নির্দেশনার প্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে একাধিকবার বোর্ড মিটিংয়ে স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটি তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে একাধিকবার। যেটি অলোকীক কোন কারণে আটকে আছে বছরের পর বছর জুড়ে। এই নিয়োগ পক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্থ ও স্থিতিবস্থায় রাখার জন্য শিক্ষা বোর্ডের একটি দুষ্টু চক্র বিভিন্ন পন্থায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছে বলে জানায় অনেকে।

জেএসসি, বিদ্যালয় ও কলেজ নিবন্ধন ও সংস্থাপন শাখার প্রতিটিতেই মাত্র দুজন করে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারি আর দু-একজন করে প্রাত্যহিক ভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত কর্মচারি আছেন। উক্ত শাখাগুলোতে কাজের গতি বৃদ্ধি করা সাপেক্ষে সেবার মানোন্নয়নে প্রতিটি শাখাতে আরো তিন থেকে চারজন করে স্থায়ীভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারি প্রয়োজন বলে জানান উক্ত শাখাগুলোর ইনচার্জ। এদিকে, শিক্ষা বোর্ডের সবচেয়ে ব্যস্ত ও কর্মমূখি শাখা বলে বিবেচিত বিদ্যালয় শাখাতে আটটি জেলার প্রায় সাত হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ সম্পাদনের জন্য বর্তমানে কর্মচারি-কর্মকর্তার সংখ্যা মাত্র তিনজন! প্রত্যেক ডিলিংস অফিসার একটি করে জেলার দায়িত্ব সম্পাদন করার কথা থাকলেও কর্মী স্বল্পতার কারণে তিনজন মিলে আটটি জেলার প্রায় ছয় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান কর্মরতরা। শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন শাখার শাখা কর্মকর্তা ও শাখা ইনচার্জরা অকোপটে স্বীকার করে বলেন, যে সকল ব্যক্তি বছরের পর বছর ধরে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে অফিসিয়াল কাজ করে থাকে তারা দক্ষতা ও ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এবিষয়ে, শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। তবে, যোগদানের পর দৈনিক ভিত্তিতে যারা দীর্ঘ সময় ধরে এখানে কাজ করছে তারা চাকুরী স্থায়ীকরনের দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। শূন্য পদের বিপরীতে স্থায়ীভাবে জনবল নিয়োগ দেবার বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি চাহিদাপত্র বোর্ড বরাবর চাওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। আশাকরি এবার স্থায়ীকরনের সেই দীর্ঘ দিনের দাবিগুলো বিধি মোতাবেক পূরণ হতে পারে। তবে, আমি যদি নাও পারি; এমন একটা ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করে যাবো যেটা পরবর্তী কেউ আসলে বাধ্য হবে সেটি সম্পন্ন করতে।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমানও একই ধরনের আশ্বাস দেন। তবে, অর্গানোগ্রাম এর বিষয়টি একটু বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে নিয়োগের ক্ষেত্রে। আর এই সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে নতুন করে একটি আইন পাশ করতে হবে, যেটি কিনা কুমিল্লা বোর্ডের সাথে অনুসরণীয় বলেও জানান বোর্ড চেয়ারম্যান।

এবিষয়ে শিক্ষা বোর্ড কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ন কবির লালু বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার বাঁধা থাকার প্রশ্নই আসেনা। আমরা কর্মচারিদের স্বার্থ ও অধিকার পূরণে সর্বদা সোচ্চার। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে পূর্ববর্তী চেয়ারম্যানগণকেও একাধিকবার লিখিত ও মৌক্ষিকভাবে স্থায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি সম্পন্ন করতে দাবিস্বরূপ চেষ্টা করেছি।

যে কোন চেয়ারম্যানের স্বদিচ্ছাই এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যথেষ্ট বলেও দাবি ইউনিয়নের এই নেতার। তিনি আরো বলেন, পূববর্তী প্রশাসন চাইলেই পারতেন স্থায়ীভাবে নিয়োগ দিয়ে শূণ্য পদগুলো পূরণ করতে। কিন্তু, সেটি ছিল উনাদের ব্যর্থতা।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply