অনলাইন ডেস্ক: করোনার থাবায় বন্ধ হয়ে যাওয়া টাঙ্গাইলের প্রায় ৩৮ হাজার তাঁত নানা সংকটে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না। এতে ৮০ হাজারের বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। ঋণ এবং সুতার দাম বাড়ায় লোকসান কাটিয়ে আবারও বিনিয়োগ করতে পারছেন না তাঁতমালিকরা। তাই তারা তাঁতশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা চান। অবশ্য সংকট সমাধানে তাঁতমালিকদের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে তাঁত বোর্ড।
যে পল্লিতে তাঁতের খট খট শব্দ থাকার কথা, সেখানে এখন সুনসান নীরবতা। দীর্ঘদিন তাঁত বন্ধ থাকায় মরিচা ধরে নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ টাকার যন্ত্র।
তাঁতমালিকরা জানান, করোনা মহামারিতে বেশির ভাগ শাড়ি অবিক্রীত ছিল। এতে বেশির ভাগ তাঁতমালিক বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েছেন। এ সময় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ তাঁত। এখন যতগুলো তাঁত চলমান রয়েছে, সেগুলোও উচ্চ সুদে স্বল্প পরিমাণ ঋণ নিয়ে চালাতে হচ্ছে। তাই সংকট সমাধানে সরকারের সহযোগিতা চান তারা।
ব্যবসার অচল অবস্থার কথা তুলে ধরে তাঁতমালিকরা বলেন, দেড় বছর ধরে তাঁত বন্ধ রেখেছি। করোনায় অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিকসংকটও রয়েছে। শ্রমিকদের যে বেতন দিই, এতে তাদের পোষায় না। আবার হাটে নিলে শাড়ি বিক্রি হয় না।
তারা আরও বলেন, শাড়ি বুনতে ৭০০ টাকা খরচ হয়, বিক্রি করি ৫০০ টাকায়। আমরা কারিগরের বেতনও দিতে পারি না। নিজেরাও চলতে পারি না। এই ঈদে আমরা কিছুই করতে পারব না। সন্তানদের একটি পোশাকও কিনে দেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই।
তাই সরকারের সহায়তা প্রার্থনা করে তাঁতমালিকরা বলেন, সরকার যদি আমাদের তাঁতশিল্পের প্রতি একটু নজর দেয়। আমাদের যদি স্বল্প সুদে ঋণ দেয়, তাহলে আমাদের তাঁতশিল্প পুনরায় উজ্জীবিত হবে। সেই সঙ্গে তাঁতশিল্পটিকে টিকিয়ে রাখাও সম্ভব হবে।
এদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় কাজ হারিয়েছেন প্রায় ৮০ শতাংশ শ্রমিক। জীবিকা হারিয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা বলেন, আমরা মালিকদের মুখের দিকে তাকিয়ে এখানে কাজ করছি। তারা যদি তাঁত না চালাতে পারেন, তাহলে আমরা কাজ করতে পারব না। এটি ছাড়া অন্য কোনো কাজ আমরা জানি না। মহাজন টিকতে পারলে আমরা টিকতে পারব। এখন মহাজনই টিকতে পারছেন না, আমরা কী করেই-বা টিকতে পারব।
এ অবস্থায় এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ঋণসহায়তার আশ্বাস দিয়েছে তাঁত বোর্ড। টাঙ্গাইল বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, তাঁতিরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, এর জন্য আমরা বিনা শর্তে ৫ শতাংশ সুদে শুধু তাঁতশিল্পটি বাঁচিয়ে রাখতে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারব। পাশাপাশি আমাদের অন্য একটি প্রকল্পের আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, তাঁত বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, দুই বছর আগে টাঙ্গাইলে ৫০ হাজার তাঁতে এক লাখের বেশি শ্রমিক কাজ করত। বর্তমানে জেলায় মাত্র ১০-১২ হাজার তাঁত চলমান রয়েছে, যেখানে মাত্র ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।
মতিহার বার্তা / এম আর টি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.