শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পচাগলা দেহ নেন শরিফ চাচা! ধুয়েমুছে তাদের জন্য পাতেন শেষশয্যা

হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পচাগলা দেহ নেন শরিফ চাচা! ধুয়েমুছে তাদের জন্য পাতেন শেষশয্যা

হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পচাগলা দেহ নেন শরিফ চাচা! ধুয়েমুছে তাদের জন্য পাতেন শেষশয্যা
হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পচাগলা দেহ নেন শরিফ চাচা! ধুয়েমুছে তাদের জন্য পাতেন শেষশয্যা

মিজানুর রহমান টনি: সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে তিনটি জায়গায় যান শরিফ চাচা— থানা, হাসপাতাল, আর শেষে মর্গে। বেওয়ারিশ দেহ পেলেই সঙ্গে নিয়ে চলে আসেন।

সেই দেহ কী অবস্থায় রয়েছে, দেহটি পুরুষের না মহিলার— তা নিয়ে শরিফ চাচার মাথাব্যথা নেই। পচা, গলে যাওয়া, ক্ষতবিক্ষত, মুণ্ডহীন, বিকৃত, রাইগর মর্টিস ধরে যাওয়া এমনকি রক্তাক্ত পোশাকে মোড়া দেহও তিনি নেন। পরম মমতায় তাঁদের ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করেন। পাল্টে দেন পোশাক। তার পর?

শরিফ চাচা তাঁদের যত্ন করে শুইয়ে দেন শেষশয্যায়। কারও মাটির নীচে কারও বা কাঠের চিতায় ‘বিছানা’ পাতেন তিনি। বেওয়ারিশ দেহগুলির মাটি পায় শরিফের জন্যই। এ যাবৎ ৩০০০-এরও বেশি হিন্দু দেহ সৎকার করেছেন। গোর দিয়েছেন আড়াই হাজার মুসলিমকে।

ফৈজাবাদে বাড়ি শরিফের। সবাই শরিফ চাচা নামেই ডাকেন। শরিফের ‘শরিফি’ নজরে পড়েছে ভারত সরকারেরও। ২০২০-তে তাঁকে তাঁর কাজের জন্য পদ্মশ্রী সম্মান দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু শরিফ কোনও পুরস্কারের আশায় এই কাজ করেননি। করেন না।

২৭ বছর ধরে ভাগাড় ঘেঁটে একের পর এক দেহ তুলে এনেছেন। নিজে সম্মান পাবেন বলে নয়। তাঁর ভাবনা ছিল একটাই, মৃত্যুর পর বেওয়ারিশ দেহগুলির যাতে কোনও অসম্মান না হয়।

এক কালে সাইকেল সাড়াইয়ের কাজ করতেন শরিফ। বড় ছেলে মহম্মদ রইস খান যখন বাবার ব্যবসায় না এসে সুলতানপুরে কেমিস্টের কাজ করতে চাইলেন, তখন আপত্তি করেননি শরিফ। কিন্তু সেই ছেলে আর ফেরেনি।

বেশ কয়েক সপ্তাহ ছেলের খবর না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে সুলতানপুরে যান শরিফ। প্রায় একমাস ধরে দরজায় দরজায় ঘুরে ছেলেকে খুঁজে পান রেললাইনের ধারে। রইসের শরীর একটি বস্তায় মোড়া ছিল। তার অনেকটাই খুবলে খাওয়া।

শরিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘ওই দৃশ্য জীবনে ভুলতে পারব না। উন্মাদ মনে হচ্ছিল নিজেকে। কিন্তু সে দিনই ঠিক করি আর কারও সন্তানের এই পরিণতি হতে দেব না।’’

শরিফ মনে করেন মৃত্যুর পরও সম্মান জরুরি। মৃত্যুতেও শালীনতা থাকা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই কাজ শুরু তাঁর।

এক সময়ে একাই সব কাজ করতেন। এখন বয়স ৮২। কয়েক জন রিকশাওয়ালা আর নিজের নাতির সাহায্যে এখনও তিনি লক্ষ্যে অবিচল।

শরিফের কথা এখন অনেকেই জানেন। তাই কোনও দেহ ৭২ ঘণ্টা বেওয়ারিশ পরে থাকলে পুলিশই খবর দেয় শরিফকে।

এক একটি দেহ সৎকার করতে খরচ পড়ে ৩০০০-৫০০০ টাকা। সে টাকা কোথা থেকে আসে? সাইকেল সারাইয়ের দোকান আর নেই শরিফের। ১৫ জনের পরিবারের খাবার জোগান দেন একমাত্র নাতি, যিনি এক জন তথ্য-প্রযুক্তি কর্মী। তবে খরচ জোগাড় হয়েই যায়।

শরিফের নাতি সাবির জানিয়েছেন, অনেকেই তাঁদের কাজ দেখে অর্থ সাহায্য করেন, তা দিয়েই সৎকারের কাজ করেন তাঁরা। তবে সাবির এ-ও বলেছেন যে, এই অসুবিধার মধ্যে কাজ করতে গিয়েই আরও বেশি করে অনুপ্রেরণা পান তাঁরা। যা তাঁদের আগামী দিনেও চালিয়ে যাবেন।

মতিহার বার্তা/এমআরটি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply