রিয়াজ উদ্দিন: থানায় গিয়ে পুলিশকে যুবক জানালো দাদাকে খুন করে এসেছেন তিনি। পুলিশ, কীভাবে খুন করলেন? বালিশ চাপা দিয়ে, নির্বিকার গলায় উত্তর দিলো যুবক।
কলকাতায় মঙ্গলবার রাত দেড়টা বাঁশদ্রোণী থানা এ ঘটনা ঘটে। এরপর থানার অফিসার ও উপস্থিত কর্মীরা শুভাশিস চক্রবর্কী নামের ওই যুবককে সঙ্গে নিয়েই ঘটনাস্থলে যান। বাঁশদ্রোণীর নিরঞ্জনপল্লীতে অবস্থিত সেই বাড়িতে, যেখানে খুন হয়েছে।
পুলিশ গিয়ে দেখে, সত্যিই তাই। মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ৪৮ বছরের দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনিই থানায় আসা শুভাশিসের দাদা। বিছানায় পড়ে থাকা মৃত দেবাশিসের মুখে বালিশ চাপা দেওয়া। তবে এ দেহ দেখার পরে সন্দেহ হয় দুঁদে পুলিশ অফিসারদের। খুনের চিহ্ন তো তেমন মিলছে না!
লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। ‘খুনি’ শুভাশিস চক্রবর্তীকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়, শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। শুভাশিস পুলিশকে জানান, তিনি এবং দাদা দেবাশিস মাস দেড়েক আগে এই বাড়িতে ভাড়া এসে থাকতে শুরু করেন। বাবা আগেই মারা গেছেন, মাও কিছুদিন আগে মারা গেছেন। দাদা বেসরকারি সংস্থার কর্মী ছিলেন। স্বেচ্ছায়অবসর নেওয়ার পরে মাসে ১৫ হাজার করে পেতেন। কিন্তু চিকিৎসার খরচ চালিয়ে প্রবল অনটনে দিন কাটত। অভাবের তাড়নায় অশান্তি লেগেই থাকতো। এরই জেরে দাদাকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে শুভাশিস।
শুভাশিসের জবাবন্দিতে অসঙ্গতি খুঁজে পান তদন্তকারীরা। এর মধ্যে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট হাতে আসতেই সেই অসঙ্গতির বিষয়ে নিশ্চিত হন তাঁরা। জানা যায়, সেরিব্রাল হেমারেজের কারণে মৃত্যু হয়েছে দেবাশিস চক্রবর্তীর। বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে নয়। অর্থাৎ খুন হননি তিনি।
শুভাশিসকে ফের জেরা শুরু করে পুলিশ। তবে খুনের ব্যাপারেই অনড় থাকেন দেবাশিস। শেষ পর্যন্ত পুলিশের চাপের মুখে বেরিয়ে আসে আসল সত্যি। শুভাশিস জানান, দাদার উপরেই নির্ভরশীল ছিলেন তিনি। তাঁর কোনও রোজগার নেই। অসুস্থ দাদা সবসময় চিন্তা করতেন, তিনি মারা গেলে ভাইয়ের কী হবে। কী খাবে, কোথায় থাকবে। তাই ভাইকে দাদা শিখিয়ে দেন, তিনি মারা গেলে যেন তাঁর মুখের উপর বালিশ চাপা দিয়ে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন শুভাশিস। বলেন, তিনি খুন করেছেন দাদাকে। তাহলে পুলিশ গ্রেফতার করবে, জেল হবে। বিনামূল্যে মিলবে থাকা-খাওয়া। সেই কারণেই ‘খুন’ করার অভিনয় করেন শুভাশিস।
সব শুনে রীতিমতো হতবাক তদন্তকারীরা। তবে শুভাশিসকে আটক করে রাখা হয়েছে। এখনও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাঁকে।
মতিহার বার্তা/এমআরটি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.