অনলাইন ডেস্ক: খুলনার কয়রা উপজেলায় এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের পর পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করে। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় শুয়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন ত্রিশোর্ধ নারী শামীমা নাসরিন। তার সমস্ত শরীরে লাঠির আঘাতের চিহ্ন ও দুর্বৃত্তদের কামড়ের দাগ রয়েছে। ১১ জুলাই সকালে এ ঘটনা ঘটলেও শুক্রবার (১৫ জুলাই) ঘটনাটি জানাজানি হয়।
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার নারী জানান, বাবার সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে প্রতিবেশীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর আগে একই ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি জানান, তিনি কয়রা উপজেলার গিলাবাড়ি কুপির মোড়ের গফফার গাজীর মেয়ে। বাবার বাড়ির পাশে জায়গা কিনে সেখানে বসবাস করছেন। বাবার ২ বিঘা জমির ওপর এলাকার লিয়াকত গাজী, সাখাওয়াত গাজী, নূর আলম গাজীসহ ওই পরিবারের অনেকের চোখ পড়ে। বাবা একা হওয়ায় প্রায়ই তারা তার ওপর অত্যাচার করে। এক বছর আগে একই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট বিচার দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকা তারা পরিশোধ করেননি।
তিনি আরও জানান, কোরবানির ঈদের পরের দিন সোমবার সকালে লিয়াকত গং তার বাবার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এ সময় তারা ঘরের একটি চাল তৈরি করে নিয়ে আসে। বাবার বসতবাড়িতে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করতে চায়। বাধা দেয় শামীমা সুলতানা ও তার ভাবি সালমা খাতুন। এ সময় লিয়াকত গংয়ের সঙ্গে উপস্থিত খালেক ও আসফার গাজী বলে শামীমাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আয়। এরপর রফিকুল, সালাউদ্দিন, সাইফুল, সোয়েব বাড়ির ভেতর থেকে বের করে দাড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। শরীরের কাপড় খুলে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে থাকে ওই দুর্বৃত্তরা। এ সময় তার বড় ছেলে জাফর গাজী ও ছোট ছেলে আহাদ গাজী অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে তার এক ভগ্নিপতি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। কয়রা থানার এসআই মাসুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দড়ি খুলে তাকে উদ্ধার করে কয়রা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেলে তার অবস্থা খারাপের দিকে গেলে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে সোমবার বিকেলে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে।
নির্যাতনের শিকার শামীমার স্বামী আবুল কালাম সানা বলেন, ‘ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। মোবাইল ফোনে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের সহায়তা নেন।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর আগে একই ঘটনার জন্য সালিশ করেছেন। কিন্তু তারপরে তারা আবারও আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, লিয়াকত গংয়ের আগে জামায়েত-বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার করছে।’ এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার বিচার দাবি করেন তিনি।
শামীমার দুলাভাই রুস্তম গাজী বলেন, ‘তার শ্বশুর ও শ্যালক ওই এলাকার নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। তাদের ২ বিঘা জমি দখলের জন্য প্রায়ই তাদের ওপর আক্রমণ চালায় লিয়াকত গং। এ ঘটনার পর তারা একাধিকবার ফোনে হুমকি দিচ্ছে।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘জমিজমা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনার সময় আমি এলাকার বাইরে থাকায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।’
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। বেশ কয়েকবার সালিশ করা হলেও সমাধান না হওয়ায় এখন আর কেউ যায় না। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। সংবাদ পেয়ে আমি পুলিশকে অবহিত করেছিলাম। পুলিশ ভালো বলতে পারবে।’
খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের ইন্টার্ন চিকিৎসক তারেক আহমেদ বলেন, ‘ওই রোগীর বর্তমান অবস্থা কিছুটা ভালো। মাথায় আঘাত ও বমি হওয়ায় খারাপ কিছু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। তবে সিটিস্ক্যানের রিপোর্ট মোটামুটি ভালো। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত।’
কয়রা থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. ইব্রাহিম আলী বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জের ধরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনাটি যারা ঘটিয়েছে তারা গৃহবধূ শামীমার চাচাতো ভাই। ঘটনার দিন ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ গিয়ে শামীমাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। ওই নারী বর্তমানে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা থানায় আসলেই মামলা নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মতিহার বার্তা/এমআরটি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.