শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
দুধে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, দায়ীদের ছাড় দেয়া উচিত নয়

দুধে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক, দায়ীদের ছাড় দেয়া উচিত নয়

মতিহার বার্তা ডেস্ক :  জীবন ধারণের জন্য যে খাদ্য মানুষকে গ্রহণ করতে হয় প্রতিনিয়ত, সেই খাদ্যেই যদি পাওয়া যায় জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ডিটারজেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিকসহ নানান রাসায়নিকের উপস্থিতি; তাহলে জাতির জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ দুঃসংবাদ আর কি হতে পারে। বাংলাদেশের বাজারে প্রচলিত পাস্তুরিত দুধের মান নিয়ে এমনি উদ্বেগের কথা জানা যায়। দেশে প্যাকেটে বাজারজাতকৃত পাস্তুরিত তরল দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়- ইতোপূর্বে ঢাকায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি) পরিচালিত গবেষণায়ও উঠে এসেছিল এমন তথ্য।

শুধু তরল দুধই নয়, অন্যান্য পণ্যের মান নিয়েও রয়েছে সংশয়। ফলে প্রতিনিয়ত কী খাচ্ছি আমরা- সঙ্গত কারণে এমন প্রশ্ন উঠে আসাও অমূলক নয়। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্স সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদের গবেষকরা বাজারে প্রচলিত সাতটি পাস্তুরিত দুধে মানবচিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন বলে জানা যায়, যা মানবদেহের জন্য বিপজ্জনক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত এই ভেজালমিশ্রিত দুধ পানে ভোক্তার ক্যান্সার, কিডনি ও লিভার বিনষ্টসহ টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কলেরা ইত্যাদি হতে পারে। এ তথ্য কতটা আতঙ্কের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মানুষের দৈনন্দিন আমিষের চাহিদা মেটাতে মাছ-মাংস-ডিমের পাশাপাশি দুধের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক এবং যারা নিরামিষভোজি তাদের জন্য দুধ-দই-মিষ্টি-মাখন-পনির ইত্যাদির বিকল্প নেই বললেই চলে। আর সেই দুধেই কিনা ভেজাল, তাও আবার তরল অবস্থায়!
এর আগে হাট-বাজারে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে প্রাপ্ত কাঁচা তরল দুধের ৯৬টির মধ্যে ৯৩টিতেই জনস্বাস্থ্যের জন্য সমূহবিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উপাদান শনাক্ত করেছিল নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। আর এবার আড়ং, ইগলু, মিল্কভিটাসহ সাতটি পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেল ঢাবি গবেষকরা।
অপরদিকে প্রাণ, মিল্কভিটা, ইগলু, আড়ংসহ ১৪টি ব্র্যান্ডের দুধের নমুনা পরীক্ষা করে আশঙ্কাজনক কোনো কিছুই পায়নি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) মঙ্গলবার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে দুই সংস্থার গবেষণা-বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমরা মনে করি, অনিয়ম-ভেজাল রোধ করা যাদের দায়িত্ব, সেই দায়িত্বশীলদের গবেষণা ও বক্তব্য পরস্পরবিরোধী কেন হবে! বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
সত্যি বলতে কি, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার্য প্রতিটি ভোগ্যপণ্যে ভেজালের বিষয়টি এক রকম ওপেনসিক্রেট। দুধ, ডিম, মাংস, মাছ, তরিতরকারি, শাক-সবজি সর্বত্র ভেজাল আর ভেজাল। পণ্য অনুযায়ী কার্বাইড, ফরমালিন, তুঁতে, এমনকি ধোঁয়া ও অদ্যাবধি বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার সুবিদিত। যে কারণে পণ্যমান রয়েছে প্রবল ঝুঁকিতে। দেশে হাঁস-মুরগি-গবাদিপশুর সংকট রয়েছে। মাথাপিছু দুধ-ডিম-মাংস-মাছ তথা প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বিশেষ করে গবাদিপশু, ডিম ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করে মেটাতে হয় স্থানীয় চাহিদা। দুধের চাহিদা মেটাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে গুঁড়া দুধ আমদানি করতে হয়। জাতীয়ভাবে তরল দুধের প্রাপ্যতাও সীমিত, দামও বেশি। তারপরও যদি খাদ্যে ভেজাল থাকে, তাহলে জনগণ কী করবে?
উল্লেখ্য, সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হলো সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। ডাল, তেলবীজ, ডিম, মাছ, মাংস, দুধ, মসলা উৎপাদনেও ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া বাঞ্ছনীয়। মনে রাখতে হবে, শুধু ভাতে পেট ভরে বটে, তবে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয় না। গত কয়েক বছরে শাক-সবজি, ফলমূল উৎপাদন বাড়লেও মাছ-দুধ-ডিম-মাংস জাতীয় খাদ্য অর্থাৎ প্রোটিনে বিপুল ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সরকার এই ঘাটতি পূরণে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, যারা খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে প্রতিনিয়ত জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে তাদের শাস্তি হওয়া জরুরি। ঢাবি গবেষকরা বলেছেন, ‘আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান পেয়েছি সেগুলো মানুষের ব্যবহারের জন্য। মানুষ ও প্রাণির অ্যান্টিবায়োটিক সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষের অ্যান্টিবায়োটিক প্রাণির ওপর ব্যবহার বন্ধ করা দরকার।’
বিষয়টি সরকারকে আমলে নিতে হবে। বাজার থেকে মানহীন পণ্য অপসারণের পাশাপাশি, এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিং এবং দায়ীদের কঠোর সাজা নিশ্চিত হলে খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণ রোধে সহায়ক হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।

মতিহার বার্তা ডট কম – ৮ জুন, ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply