অনলাইন ডেস্ক: কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়া মুখের দিকটা টিয়া আকৃতির বিরল প্রজাতির সেই মাছ নিয়ে স্থানীয় জেলেদের মাঝে এখনও বেশ কৌতূহল দেখা গেছে। জেলেদের ভাষ্যমতে, এ মাছটির নাম ‘টিয়া মাছ’।
জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার বাসিন্দা জেলে মনির মাঝির মাছধরা ট্রলারে পাতা জালে বিরল প্রজাতির এ মাছটি ধরা পড়ে। বিশিষ্ট মৎস্য ব্যবসায়ী ও কলাপাড়া পৌরশহর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুমকে জেলে মনির মাঝি মাছটি উপহার দেন। এ সময় ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করা হলে সর্বত্র হৈ-চৈ পড়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারে এ মাছটি ধরা পড়ে।
ট্রলারের জেলে মনির মাঝি জানান, সাগরে ইলিশ মাছ ধরার জন্য জাল পাতা হয়। পরে জাল তুললে ইলিশ মাছের সাথে এই মাছটিও পাওয়া যায়। ২৭ আগস্ট বিকালে কুয়াকাটা সংলগ্ন মহিপুর মৎস্য বন্দরের টিমন মৎস্য আড়তে গেলে আড়তের মালিক এ মাছটি দেখে কিনতে চান। পরে তার কাছে বিক্রি না করে উপহার হিসেবেই দিয়েছেন বলে জানালেন মনির মাঝি।
টিয়া মাছ উপহার হিসেবে পাওয়া ব্যবসায়ী দিদারউদ্দিন আহমেদ মাসুম বলেন, মাছটি পাওয়ার পর আড়তে বরফ দিয়ে রেখেছিলাম। ২৮ আগস্ট বিকালে বরফ থেকে বের করে মাছটি খাওয়ার জন্য বাসায় নিয়ে যাই। মাছটি উপহার পেলেও একা খেতে পারিনি, বন্ধুবান্ধব নিয়ে খেতে হয়েছে। তবে বেশ সুস্বাদু ছিল মাছটি।
তিনি আরও বলেন, মাছের মুখের দিক গোলাকৃতির। মাছটি দেখতে টিয়া পাখির মতো। এর ওজন মাত্র দুই কেজি। মাছ কাটার পর এর ‘আঁশ’ হয়েছে ৬০০ গ্রাম। তবে আঁশগুলো বেশ মোটা।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতরের সাসটেইনাবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘প্যারট ফিস বা তোতা পাখি Scaridae পরিবারে ৯৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ মাছ ভারত মহাসাগরে বেশি পাওয়া যায়। তবে দক্ষিণ চীন সাগরের ফিলিপাইন উপকূল পর্যন্ত বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। বাসস্থান ও খাদ্য আহরণের জন্য এরা রকি বা পাথুরে দ্বীপ, কোরাল রিফ, শক্ত তলদেশযুক্ত সামুদ্রিক অঞ্চলে বসবাস করে। কারণ পাথুরে জন্মানো শৈবাল এরা খাদ্য হিসেবে পছন্দ করে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Scaridae cetoscarus বা নীল তোতা।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এ প্রজাতির মাছ পাথুরে আবরণ থেকে শ্যাওলা খেতে অভ্যস্ত। শ্যাওলার সঙ্গে ক্যালসিয়াম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করায় এর আঁশ খুব মজবুত ও পুরু হয়। শক্ত তলদেশ বা কোরাল রিফ থেকে শ্যাওলা খেতে এরা অভ্যস্ত হওয়ায় এ মাছের দাঁত শক্ত হয়। মাড়ি থাকে মোজাইকের মতো মসৃণ। এ মাছ সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষেত্রে ১২ থেকে ২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক দশমিক ৩ মিটার বা ৪ ফুট ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যও দেখা যায়। আহরিত প্রজাতির মাছের দেহে তোতা পাখির ন্যায় নীল ডোরা কাটা দাগ বিদ্যমান এবং লেজের মাঝখানে উজ্জ্বল সোনালি-হলুদ রং পরিলক্ষিত হয়। যুগান্তর
মতিহার বার্তা ডট কম – ৩১ আগষ্ট ২০২০
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.