রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড়

রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড়

রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড়
রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড়

অনলাইন ডেস্ক:  রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে এবার বালুমহাল নিয়ে চলছে লঙ্কাকান্ড। পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ গত ১৪ এপ্রিল থেকে বালু উত্তোলন, পরিবহন ও টোল আদায়সহ সরকারি কোনো নিয়ম মানছে না ইজারাদার। এমনকি মহাসড়কের পাশে বালু রাখার জায়গা করতে উপজেলার সুলতানগঞ্জ এলাকার গাংগোবাড়ি মৌজার কয়েক একর জমির কাঁচা ধানও কেটে ফেলা হয়েছে। এসব নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকাও রহস্যজনক বলে দাবি ভূক্তভোগীদের।

রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, রাজশাহীর প্রেমতলি বারোমাইল ও ফুলতলা এলাকায় ৫ ও ৬ মৌজা নামের দুইটি বালুমহাল রয়েছে। বাংলা ১৪৩১ সনের জন্য এই দুইটি বালুমহাল ইজারা পায় রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার মুখলেসুর রহমান মুকুলের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুন এন্টারপ্রাইজ।

একই প্রতিষ্ঠানের নামে ইজারা পায় বালুবাহী ট্রাকের টোল আদায়ের। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি নানা অনিয়ম দিয়েই শুরু করেছে তাদের কার্মকান্ড। বালু উত্তোলন, পরিবহন ও টোল আদায়ে ইজারার কোনো নিময় মানছে না তারা।

ইজারার ২১ নং শর্ত অনুযায়ী পদ্মাপাড়ের ১৫০০ মিটার অর্থাৎ কমপক্ষে দেড় কিলোমিটার দূর থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে। এছাড়াও ইজারার ২০ নং শর্ত অনুযায়ী সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত বালু বা মাটি উত্তোলন ও পরিবহন করা যাবে। কিন্তু এসব সরকারি নিয়মের কোনই তোয়াক্কা করছে না ইজারাদার।

অভিযোগ উঠেছে, দুইটি বালুমহালে বালু বা মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে ৫০০ মিটারের মধ্যেই। আর বালু বা মাটি উত্তোলন ও পরিবহনও করা হচ্ছে রাতভর। এছাড়াও পরিবহনের সময় বালু ঢেকে দেয়ার নিয়ম থাকলেও সেটিও মানা হচ্ছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বালু উত্তোলন ও পরিবহনের শব্দে যেমন স্থানীয়রা ঘুমাতে পারছে না; তেমনি পরিবহনের সময় বালু ছিটে পড়ে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাসহ পাশের বাড়িঘর।

ইজারার ৭ নং শর্ত অনুযায়ী ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জমি ও খেলার মাঠে বালু বা মাটির স্তুপ বা মজুদ করা যাবে না। এছাড়াও ইজারার ১০ নং শর্ত অনুযায়ী বালু বা মাটি উত্তোলন, পরিবহন ও মজুদ করতে কোনোভাবেই ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও রাস্তার ক্ষতি করা যাবে না।

কিন্তু এসব শর্ত মানা হচ্ছে না গোদাগাড়ীর দুই বালুমহালে। সুলতানগঞ্জ এলাকার গাংগোবাড়ি মৌজায় রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের পাশে প্রায় ১০ একর ফসলি জমিতে বালু মজুদের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই কয়েক একর জমির কাঁচা ধান কেটে ফেলা হয়েছে।

ইজারার শর্ত অনুয়াযী বালুর ট্রাক প্রতি ১২০ টাকা এবং ট্রলি প্রতি ৩০ টাকা টোল নিতে পারবেন ইজারাদার। কিন্তু সে নিয়ম মানা হচ্ছে না গোদাগাড়ীতে। ১২০ টাকার বিপরিত ট্রাক প্রতি ৫০০ টাকা এবং ৩০ টাকার বিপরিতে ট্রলি প্রতি ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে বছরের প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল একজন ট্রাক ড্রাইভার জরুরী সেবা নাম্বার ৯৯৯ এ ফোন দেয়। পরে গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুইজনকে আটক করলেও অজ্ঞাত কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকি টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজির লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও পুলিশ সেটি গ্রহণ করেনি।

এসব বিষয়ে জানতে ইজারাদার মুখলেসুর রহমান মুকুলের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বালু মজুদ করতে কাঁচা ধান কাটার বিষয়টি অস্বীকার করেন। এছাড়াও বালু বা মাটি উত্তোলন ও পরিবহনে ইজারার শর্ত মানা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ফোনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

গোদাগাড়ীর সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসান বলেন, রাতে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার অভিযান চালানো হয়। রাত ১১টা পর্যন্ত অভিযান চলে। রাতে কাউকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ৫০০ মিটারের মধ্যে যে মাটি কাটা হয়েছে তা রাস্তার তৈরীর জন্য বলে জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।

গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আব্দুল মতিন বলেন, সরকারি রেট টাঙ্গি দিয়ে সে অনুযায়ী টোল আদায়ের শর্তে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর অতিরিক্ত টোল আদায়ের আর কোনো অভিযোগ তাদের কাছে আসেনি।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, বালু মজুদ করার জন্য জমির কাঁচা ধান কাটা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। এ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, গোদাগাড়ী এলাকায় দুইটি বালুমহাল রয়েছে। সেগুলো নিয়মের মধ্যে চলছে কি না তা মনিটরিং করা হচ্ছে। নিয়মের বাইরে চালাতে দেওয়া হবে না।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply