অনলাইন ডেস্ক: ঢাকার বাতাসে ‘বস্তুকণা ২.৫’ নামের অতিসূক্ষ্ম পদার্থ স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ভেসে বেড়াচ্ছে। অবশ্য এ সময়ে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়সহ হাতেগোনা কয়েকটি স্থানে দূষণ কমেছে। রাজধানীর ৭০ স্থানের বায়ুর মান ধারাবাহিকভাবে চারবার পরিমাণ করে গবেষকরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
বেসরকারি স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টি শনিবার সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে।
এ উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) যৌথ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার ‘ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুদূষণ সমীক্ষা-২০২০’ শীর্ষক সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। বাপার যুগ্ম সম্পাদকও তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য স্থপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল। এছাড়া বক্তব্য দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী, বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, মিহির বিশ্বাস এবং বাপার বায়ু, শব্দ ও দৃষ্টি দূষণ কমিটির সহ-আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
গবেষকরা জানান, বাতাসে অতিসূক্ষ্ম বস্তুকণা ২.৫-এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মূল দায় সাধারণ জীবাশ্ম জ্বালানির। এ জ্বালানি যখন অতিমাত্রায় পোড়ানো হয় তখন এর ধোঁয়া বাতাসে মিশে ক্ষতিকর ওই বস্তুকণা তৈরি করে। এ কারণে বলা যায়, যানবাহন, শিল্পকারখানা ও বর্জ্য পোড়ানোর ধোঁয়া ক্ষতিকর এই পদার্থ (বস্তুকণা ২.৫) বাতাসে বেড়ে চলেছে। এছাড়া নির্মাণকাজ থেকে সৃষ্ট ধুলাবালি এবং গাড়ির চাকার সঙ্গে রাস্তার ঘর্ষণের ফলেও এ অতিক্ষুদ্র্র ধূলিকণার সৃষ্টি হতে পারে।
গবেষণার ফলাফল প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ২০১৯ সালের মতো ২০২০ সালেও ক্যাপস ভূমি ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ডিসেম্বরে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে বায়ুতে বস্তুকণা ২.৫-এর উপস্থিতির পরিমাণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পর্যালোচনা করে। এ গবেষণার অংশ হিসাবে ঢাকা শহরের ১০টি সংবেদনশীল, ২০টি আবাসিক, ১৫টি বাণিজ্যিক, ২০টি মিশ্র এবং পাঁচটি শিল্প এলাকার বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করা হয়। নমুনা হিসাবে বাছাই করা স্থানগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তর (শব্দদূষণ পর্যবেক্ষণে) ২০১৭ সালেও নির্ধারণ করে।
তিনি বলেন, প্রতিটি স্থান থেকে চারটি করে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। গৃহীত নমুনা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল ২০১৯ সালের সঙ্গে ২০২০ সালের বায়ুদূষণের পার্থক্য নির্ণয় করা হয়। এছাড়া ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের এলাকাভিত্তিক মানচিত্র তৈরি করা হয়। এ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ১১ সদস্যের একটি গবেষক দল কাজ করে।
অধ্যাপক মজুমদার বলেন, সামগ্রিকভাবে দেখা যায় যে, ২০২০ সালে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের গড় বস্তুকণা ২.৫ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫.৪ মাইক্রোগ্রাম। যা বস্তুকণা ২.৫-এর আদর্শমানের চেয়ে প্রায় ৫.২ গুণ বেশি। বস্তুকণা ২.৫-এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত জাতীয় আদর্শ বায়ুমান (দৈনিক) প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম।
তিনি বলেন, ফলাফল বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ভূমি ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে ২০২০ সালে পাঁচটি এলাকার বস্তুকণা ২.৫ গড়মান ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৩৩৫.৪ মাইক্রোগ্রাম। যা ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় ১০.২ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে বস্তুকণা ২.৫ গড়মান পাওয়া যায় প্রতি ঘনমিটারে ৩০৪.৩২ মাইক্রোগ্রাম। ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস কর্তৃক মনিটরিং প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দূষিত বায়ুর পরিমাণ প্রায় ১০.১ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর ৭০টি স্থানের মধ্যে বাণিজ্যিক এলাকার এলিফ্যান্ট রোডের সুবাস্তু আর্কেডের সামনে প্রতি ঘনমিটারে ৪৫৮ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০১৯ সালে ছিল ২৫০ মাইক্রোগ্রাম। অর্থাৎ এ পয়েন্টে বৃদ্ধির হার ৮৩ শতাংশ। মিশ্র এলাকার মধ্যে নিউমার্কেট মেইন গেটের সামনে প্রতি ঘনমিটারে ৪৫৬ মাইক্রোগ্রাম পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালে ছিল ১৫১ মাইক্রোগ্রাম। এখানে বেড়েছে ২০২ শতাংশ। আর শিল্প এলাকার মধ্যে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় প্রতি ঘনমিটারে ৪৫৫ মাইক্রোগ্রাম দূষণ পাওয়া গেছে। এটা ২০১৯ সালে ৪০৪ মাইক্রোগ্রাম ছিল। তবে শিল্প এলাকার মধ্যে বৃদ্ধির হার বেশি পলবীর সিরামিক রোডে প্রায় ৪৫ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০২০ সালে ৭০টি স্থানের মধ্যে সবচেয়ে কম দূষিত তিনটি স্থান হলো মিশ্র এলাকার মোহাম্মাদপুরের তাজমহল রোড (প্রতি ঘনমিটারে ২১৯ মাইক্রোগ্রাম), সংবেদনশীল এলাকার আগারগাঁওয়ের শিশু হাসপাতাল (প্রতি ঘনমিটারে ২২০ মাইক্রোগ্রাম) এবং আবাসিক এলাকার পলবীর ব্লক ডির রোড-২৩ (প্রতি ঘনমিটারে ২৩০ মাইক্রোগ্রাম)। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ঢাকা শহরের ৭০টি স্থানের মধ্যে মিশ্র এলাকার নিউমার্কেট মেইন গেটের সামনে প্রায় ২০২ শতাংশ, বাণিজ্যিক এলাকার এলিফ্যান্ট রোড সুবাস্তু আর্কেডের সামনে ৮৩.১ শতাংশ ও বাংলামোটর ভিআইপি রোডে ৭৮.৩ শতাংশ বায়ুদূষণ (বায়ুর গড় মান) বৃদ্ধি পেয়েছে।
অপরদিকে সংবেদনশীল এলাকার বাংলাদেশ সচিবালয়ের সামনে ৩১.৯ শতাংশ, মিশ্র এলাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এ ২৯.৫ শতাংশ এবং আবাসিক এলাকার তাঁতীবাজার, কোতোয়ালি, পুরান ঢাকায় ২৯.১ শতাংশ বায়ুদূষণ হ্রাস পেয়েছে।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মিশ্র এলাকার বায়ুদূষণ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে প্রায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে বায়ুদূষণ রোধে আটটি স্বল্পমেয়াদি, পাঁচটি মধ্যমেয়াদি ও চারটি দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয়েছে। যুগান্তর
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.