স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে প্রতিবছরই সরিষা ক্ষেতে বাড়ছে মৌচাষির সংখ্যা। এতে একদিকে যেমন সরিষার ফলন বাড়ছে, অন্যদিকে মধু বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হচ্ছে। এবছর রাজশাহীতে সরিষা ক্ষেতে মধু সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ১২ টন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌমাছি পালন করলে এবং এলাকায় পর্যাপ্ত সহায়ক গাছ-পালা থাকলে একটি বাক্স থেকে মধু (শীতকালে) ৭/৮ কেজি এবং বছরে ১৫/২০ কেজি খাটি মধু সংগ্রহ করা যায়। উৎপাদিত ১৫ কেজি মধু প্রতি কেজি ৩ শ টাকা হিসেবে দাম লাগে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে মৌমাছির বাক্সের দাম ৭ শ টাকা, মৌমাছির দাম ৭ শ টাকা, কৃত্রিম খাদ্য ও অন্যান্য ১ শ টাকা মোট ১৫ শ টাকা বাদ দিলে লাভ থাকে ৩ হাজার টাকা। বাক্স ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী একবার ক্রয় করলে প্রায় ১০ বছর তা ব্যবহার করা যায়।
মৌচাকের মোম মোমবাতি, প্রসাধন (কোল্ড ক্রিম, সেভিং ক্রিম, স্নো ইত্যাদি) ওষুধ (বিভিন্ন মলম) তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে। মধু ও মোম বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সংস্থানের মাধমে পারিবারিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি করে যা সার্বিকভাবে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য দূরীকরণে সাহায্য করে। ফুলের পরাগায়নের মাধ্যমে কৃষিজ, ফলদ ও বনজ গাছ-পালার ফলন ও গুণগতমান বৃদ্ধি করে ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
চারঘাট উপজেলার কাসিনি গঙ্গারামপুর গ্রামের মৌচাষি ষষ্ঠী পাহাড়িয়া জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর যাবত ১২টি বাক্সে দেশিয় সেরেনা মাছির মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করেন। দেশি জাতের হওয়ায় তার মধুর চাহিদা ও দাম বেশি। তার এলাকার অনেকেই মৌচাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, কৃষি বিভাগ সরিষা ক্ষেতেমৌচাষ করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে। সরিষা ক্ষেতে মৌচাষ করলে চাষিদের দুটি লাভ। এক মৌমাছির কারণে সরিষা ফুলে সুষ্ঠু পরাগায়নের ফলে সরিষার ফলন প্রায় ২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়, দুই চাষিরা মৌ-বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা মেটায় ও বিক্রি করে বাড়তি আয় করে। এরপরে চাষিরা লিচু থেকে মধু সংগ্রহ করবে।
বাংলাদেশে মৌমাছি চাষের উপযুক্ত আবহাওয়া, গাছ-পালা ও পরিবেশ বিদ্যমান। তাই সকলে মৌমাছির চাষ বাড়িয়ে খাটি মধু ও মোম উৎপাদনসহ ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ও পরিবেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এবছর রাজশাহীতে সরিষার আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ১ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ৯৬৮টি মৌ-বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে ১২ হাজার ৫২ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.