শিরোনাম :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বালু গোদাগাড়ীতে মজুত করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের দৌঁড়-ঝাঁপ গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার!
মামলাবাজ সিন্ডিকেটে দিশেহারা মানুষ

মামলাবাজ সিন্ডিকেটে দিশেহারা মানুষ

মামলাবাজ সিন্ডিকেটে দিশেহারা মানুষ
মামলাবাজ সিন্ডিকেটে দিশেহারা মানুষ

অনলাইন ডেস্ক: বাদীর হদিস নেই, ঠিকানাও ভুয়া। ঘটনাও পুরোপুরি সাজানো। তবে মামলায় আসামির নাম-ঠিকানা সঠিক। এ ধরনের মামলার আসামিদের হয়রানির শেষ নেই।

এসব ভুয়া মামলায় আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করে। জামিন শুনানি বিলম্ব হলে আসামিকে কয়েক সপ্তাহ কারাগারে হাজতবাস করতে হয়।

শুধু তা-ই নয়, মাসের পর মাস কারান্তরে কাটানোর রেকর্ডও আছে। যদিও শেষ পর্যন্ত আদালতে এ ধরনের মামলার অসারত্বই প্রমাণ হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু হয়রানি নয়, জমিজমা ও বাড়ি দখল, অর্থ আদায়সহ নানা উদ্দেশ্য থাকে এসব ভুয়া মামলাবাজদের। এজাতীয় মামলার বাদী ভাড়াটে নারী-পুরুষ। কিছু দুষ্টলোকের পাশাপাশি অসৎ আইনজীবী ও দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তারা জড়িত এই সিন্ডিকেটে।

এমন দুটি পৃথক ঘটনায় দায়ের হওয়া ভুয়া মামলা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দুটির পেছনেই একই সিন্ডিকেট জড়িত। মাত্র চার হাজার টাকার বিনিময়ে মামলার এক সাক্ষী মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন, যা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

সম্প্রতি এমন কয়েকটি ঘটনা উচ্চ আদালতের নজরে এলে বেশকিছু নির্দেশনাও আসে। ৪৯টি ভুয়া মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চন নামে এক ব্যক্তি প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এখন থেকে আদালতে বা থানায় মামলা বা অভিযোগ (এফআইআর) করার ক্ষেত্রে বাদীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করাসহ পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন আদেশে। এছাড়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ৪৯টি মামলা তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেন।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিয়ে কথা হয় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিষয়টি শুনেছি। আমরা দেখছি ব্যাপারটা আসলে কী। তিনি বলেন, এসব মামলার একটা প্রক্রিয়া আছে। বাদীকে পাওয়া না গেলে, নিয়ম আছে ওই মামলা খারিজ হয়ে যাবে। এছাড়া যখন মামলাটি তদন্ত হয়, তখন যদি বাদী না থাকেন, বা পাওয়া না যায়, তখন তো এমনিতেই মামলাটা শেষ হওার কথা বা ফাইনাল (চূড়ান্ত) রিপোর্ট দেওয়ার কথা।

ভুয়া মামলায় আসামি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ গত বছরের ২০ আগস্ট মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনে একটি মামলা হয়। এতে প্রধান আসামি করা হয় মো. বদরুল ইসলামকে। বদরুল ঢাকার বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি এই কলেজের গভর্নিং বডি নির্বাচিত সদস্য। মামলাটি হওয়ার পর থেকে এর বাদী কুলছুমা আকতারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার নথিতে জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা বাদীর মোবাইল ফোন নম্বরও নেই। মামলাটিতে ৫ জন আসামি আছেন। এ মামলার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য শুরুতেই আদালত বিচারিক অনুসন্ধানের জন্য ওই বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকী-আল-ফারাবীকে দায়িত্ব দেন। ফারাবী ওই বছরের ২১ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে তিনি ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় ‘শ’ আদ্যাক্ষরের এক আইনজীবী সাক্ষীদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। মামলার বিবরণে দেখা যায়, বাদী ও সাক্ষীরা নিয়ম মেনে যথারীতি জবানবন্দি দিয়েছেন। একজন আইনজীবীও আছেন এ মামলার। এ প্রতিনিধি ওই আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাদীর মোবাইল ফোন নম্বর চেয়েছেন। বারবার বলার পরও তিনি মোবাইল ফোন নম্বর বা বাদীর কোনো সন্ধান দিতে পারেননি। এছাড়া মামলায় দেওয়া ঠিকানামতোও বাদীকে পাওয়া যায়নি। গত বছরের ১৮ নভেম্বর হঠাৎ আসামি বদরুল ইসলামের বাসায় পুলিশ যায়। তার অনুপস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরা তার স্ত্রীকে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনে একটি মামলার আসামি বদরুল।

চার হাজার টাকায় মিথ্যা সাক্ষ্য : চলতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরে এআইজি (ক্রাইম ইস্ট) বরাবর গোয়েন্দা শাখার ইনস্পেকটর (নিরস্ত্র) আকুল চন্দ্র বিশ্বাস এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে বলা হয়, ‘মামলার বাদী কুলসুমা আক্তারের মানিত ৬ নম্বর সাক্ষী শাহ আলমকে জিঞ্জাসাবাদকালে তিনি জানান, মামলার বাদীকে তিনি চিনতেন না। তাদের এলাকার পানের দোকানদার আবুল কাশেম ও মামলার নিযুক্ত আইনজীবীর সহকারী তার বাড়িতে এসে বিশ হাজার টাকার বিনিময়ে সাক্ষী দেওয়ার জন্য বলে।’ পরে শাহ আলমকে কোর্টে নিয়ে সাক্ষী দেওয়ায় এবং চার হাজার টাকা দেয়। এতে আরও বলা হয়, শিক্ষক প্রতিনিধিদের মধ্যে গ্রুপিং আছে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে বিভিন্নভাবে হয়রানির জন্য বিভিন্ন সময় কৌশল অবলম্বন করে আসছে। তদন্তকালে বাদী ও কতিপয় সাক্ষীর ঠিকানার বিষয় রহস্যজনক বলে প্রকাশ হয়েছে।

অধ্যাপক মো. বদরুল ইসলাম জানান, মামলায় উল্লিখিত অপরাধের সঙ্গে তার দূরতম কোনো সম্পর্কও নেই। তিনি জীবনে কখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যাননি। মামলার বাদী ও সাক্ষী কাউকেই তিনি চেনেন না। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেন। তিনি বলেন, আদালত থেকে আমাকে কোনো প্রকার সমন বা নোটিশ দেওয়া হয়নি। এর আগেই পুলিশ আমার বাসায় আসে। আমার সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ না করে বিচারিক অনুসন্ধানের প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

গায়েবি মামলাবাজ সিন্ডিকেট একই চক্র : অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানব পাচার মামলার পেছনে জড়িত চক্রটি একরামুল আহসান কাঞ্চনের মামলায়ও জড়িত। তার বিরুদ্ধে ৪৯টি ভুয়া মামলা দেওয়া হয়। মানব পাচার মামলার চার নম্বর আসামি আলতাফ হোসেনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানাধীন কুতুবপুর এলাকায়। এই আলতাফ হোসেন হচ্ছে ৪৯টি ভুয়া মামলার আসামি একরামুল আহসান কাঞ্চনের ডাইং ফ্যাক্টরির ভাড়াটিয়া। জানতে চাইলে একরামুল আহসান কাঞ্চন যুগান্তরকে বলেন, জনৈক শাকেরুল কবির ভাড়াটিয়া আলতাফ হোসেনকে কৌশলে হাতে নিয়ে তার ফ্যাক্টরির সব মালামাল নারায়ণগঞ্জের জনৈক শাহ আলমের ফ্যাক্টরিতে সরিয়েছে। এই চক্রটি আমাকে (কাঞ্চন) ঘায়েল করতে বেশকিছু মিথ্যা ও ভুয়া মামলা দিয়েছে।

অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ : ‘সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ভুয়া মামলায় নিরীহ মানুষকে আসামি করে হয়রানির মাধ্যমে তাদের সম্পত্তি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন’ নামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন দাখিল করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি)।

এতে বলা হয়, সারা দেশে ৫০-৬০ সদস্যের সিন্ডিকেট আছে। বেশির ভাগ মামলা মানব পাচার আইনে। সুপারিশের একটি হচ্ছে-দেশের বিভিন্ন থানায় মিথ্যা মামলা দায়েরে সিন্ডিকেটভুক্ত যেসব অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা সহায়তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা নিশ্চিত।

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আদালতে মামলা করার সময় বাদীকে অ্যাফিডেভিট করতে হয়। সেখানে যদি কেউ ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে, তাহলে সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনা যায়। এতে যদি কোনো আইনজীবীও জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply