শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?
রাবির আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে উপ-উপাচার্যের দরকষাকষি

রাবির আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে উপ-উপাচার্যের দরকষাকষি

রাবির আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে উপ-উপাচার্যের দরকষাকষি
ছবি সংগৃহিত

রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে একজন আবেদনকারীকে অর্থের বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। আবেদনকারীর স্ত্রীর সঙ্গে দর-কষাকষির ওই অডিওতে উপ-উপাচার্য জানতে চেয়েছেন কত টাকা দিতে তারা (চাকরিপ্রার্থী ও তার স্ত্রী) প্রস্তুত আছে।

আবেদনকারী নুরুল হুদার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত। এ নিয়ে আমি কোন কথা বলবো না।’ তবে নুরুল হুদার স্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

দর-কষাকষির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘এসব সাজানো। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবো না। আমি আজ থেকে ফোনে কোন কথা বলব না।’

তবে এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তিনি প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি বিবৃতি দেন। নুরুল হুদার পরিচয় উল্লেখ করে সেখানে তিনি বলেন, ‘নুরুল হুদার ছাত্রজীবন থেকেই স্থানীয় অভিভাবক হিসেবে তার দেখভাল করছি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারি, সে অসাধু কিছু ব্যক্তির কবলে পড়ে আর্থিক লেনদেনে জাড়িয়ে পড়েছে। ফোনালাপটি অসাধুব্যাক্তিদের সম্পর্কে একটি অধিকতর অনুসন্ধানী প্রয়াস ছিল। আর এই ফোনালাপটি এডিটিং করা হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ৮তারিখে রাবির আইন বিভাগে তিনটি ‘সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক’ পদের জন্য প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে মোট ৪১ জন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে সিজিপিএ ৩.৫০ বা এর উর্ধ্বে ফল রয়েছে।

অন্যদিকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৩৩ জন আবেদনকারী ফল ৩.৫০ বা এর উর্ধ্বে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৭ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগ অনুমোদিত হয় এবং এর পরদিন ১৮ নভেম্বর নিয়োগপ্রাপ্তরা বিভাগে যোগদান করেন।

এতে নুরুল হুদাও আবেদন করেন। তিনি ওই বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৬৫, স্নাতকোত্তরে ৩.৬০ এবং আইন অনুষদে সেরা হওয়ায় ২০১৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক অর্জন করেন ওই আবেদনকারী। তার বাড়ি উপ-উপাচার্য জাকারিয়ার এলাকা লালমনিরহাটে। স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক পেলেও আইন বিভাগে প্রভাষক পদে তার নিয়োগ হয়নি।

নিয়োগ বোর্ডে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়াও ছিলেন উল্লেখ করে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য রুস্তম আলী ও বিভাগের সভাপতি হিসেবে আমি উপস্থিত ছিলাম। এছাড়া বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মন্ডল ছিলেন।’

এদিকে, এ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও ‘সাজানো নাটক’ বলছেন খোদ নিয়োগ বোর্ডের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যরা। নিয়োগের নির্বাচনী বোর্ডের সদস্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শাহজাহান মন্ডল বলেন, ‘আমি যখন নির্বাচনী বোর্ডে অংশ নিতে সেখানে যায়, তখন ওই বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক আমাকে সতর্ক করেছিলেন। এই নিয়োগে আর্থিক লেনদেন হতে পারে বলে তারা আমাকে জানিয়েছিলেন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, ‘আইন বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগ সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হওয়ার সময় আমি ছিলাম। এ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ ও অস্বচ্ছ। আমার কাছে সবই সাজানো নাটক মনে হয়েছে। আগে থেকে সবই নির্ধারিত ছিলো কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন বিভাগের এক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, ‘প্রভাষক নিয়োগে ৩০-৪০ লাখ টাকা লেনদেনের একটি তথ্য তখন আমার কাছে এসেছিলো। যেদিন নিয়োগ বোর্ড বসে, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যপন্থী এক শিক্ষক এক আবেদনকারীকে নির্বাচন বোর্ডে পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছিলেন। কিন্তু একাডেমিক ফল খারাপ হওয়ায় সে প্রার্থীর নিয়োগ হয় নি।’

প্রশ্নবিদ্ধ এ নিয়োগ বাতিলের সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আছে কিনা জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলেন, ‘সিন্ডিকেটে নিয়োগ বাতিল করার প্রক্রিয়া জটিল। কারো নিয়োগ বাতিল করতে হলে কিছু অযোগ্যতা বিবেচনায় আনা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ ধরণের পরিস্থিতি আগে কখনও সৃষ্টি হয়নি। তাই এখন নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়ার দিকে যেতে চাইলে করণীয় কি হবে তা নিশ্চিত নই।

মতিহার বার্তা ডট কম – ০১ অক্টোবর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply