মতিহার বার্তা ডেস্ক: র্যাবের অভিযানে গ্রেফতার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বরের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি-গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ থেকে মিজান এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে র্যাবের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
শুক্রবার রাতে মিজানের মোহাম্মদপুরের বাসভবনে অভিযান শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা কয়েকদিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজানকে আটকের চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। গ্রেফতার হতে পারেন টের পেয়ে গত দু-তিনদিন আগে ঢাকা থেকে পালিয়ে যান। শুক্রবার ভোরে শ্রীমঙ্গলের কলেজ গেট এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। বাসাটি তার বান্ধবীর বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে।’
‘আটকের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন ও নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রথমে মিজানের কাউন্সিলর অফিসে পরে মোহাম্মদপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।’
ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘বাসা তল্লাশি করে ছয় কোটি ৭৭ লাখ টাকার বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, এক কোটি টাকার এফডিআরের কাগজ উদ্ধার করা হয়। এসব টাকার কোনো উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। মাসিক বেতন অথবা দৃশ্যত তার কোনো ব্যবসার খোঁজ পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘১৫ বছর আগে তার ইটভাটার একটি ব্যবসা ছিল কিন্তু এখন সেটি নেই। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য মিজান প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে গত দুদিনে ৬৮ লাখ টাকা তোলেন। কিন্তু সেই টাকা কোথায় রেখেছেন, এখনও আমরা জানতে পারিনি। তদন্ত হয়তো জিনিসটি বের হয়ে আসবে।’
র্যাবের এ ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘গ্রেফতার মিজানের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসাসহ সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজির ছাড়া জমিদখলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।’
মিজানের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলে মামলা
কাউন্সিলর মিজানকে যেহেতু অবৈধ অস্ত্রসহ শ্রীমঙ্গল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেহেতু তার নামে শ্রীমঙ্গল থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা হবে। এছাড়া আয় বহির্ভূত অবৈধ অর্থ উপার্জনের কারণে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হবে।
কাউন্সিলর মিজানের দেশের বাইরে দুটি বাড়ি ও দামি গাড়ি আছে জানিয়েছে র্যাব। এর মধ্যে একটি আমেরিকায় এবং আরেকটি অস্ট্রেলিয়ায়। এসব সম্পদ তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ থেকে করেছেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং মামলা হবে। তদন্তে যদি তার বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ আসে তাহলে আরও মামলা হবে। আমরা তাকে এখন শ্রীমঙ্গল নিয়ে যাচ্ছি, সেখানে মামলা হবে, বলেন র্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট।
ধারণা করা হচ্ছে তিনি দেশ থেকে টাকা পাচার করে একসঙ্গে বাড়ি কিনেছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার আলম বলেন, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় তাকে আমরা গ্রেফতার করেছি। শুধু কাউন্সিলর নয় দেশের যেকোনো নাগরিক অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করলে তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এরই অংশ হিসেবে কাউন্সিলর মিজানকে আমরা গ্রেফতার করেছি।
‘ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার জন্য যে হামলা করা হয়েছিল ওই ঘটনার সঙ্গে মিজান ও তার ভাই সংশ্লিষ্ট। তার ভাই এবং তিনি একসময় ফ্রিডম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এগুলোও তদন্তে গুরুত্বসহকারে দেখা হবে’- যোগ করেন সারওয়ার আলম।
মতিহার বার্তা ডট কম – ১১ অক্টোবর ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.