শিরোনাম :
তরমুজ শুধু খেলে হবে না, গরমে মাখতেও পারেন লজ্জা ঢাকতে শেষমেশ গদি জড়িয়ে ছুটলেন উরফি! ভিডিয়ো ফাঁস হতেই চার দিকে শুরু শোরগোল কাফতান পরা মানেই কি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে সিলমোহর? প্রশ্ন তুললেন পরিণীতি চোপড়া অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করে শ্রেণি বৈষম্য করেছে রাবি প্রশাসন! তানোর ইউএনও’র বিরুদ্ধে শিক্ষকের মামলা, তোলপাড় তরুণী সন্ধ্যা রানী হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন; সৎ ভাই ও তার বন্ধু গ্রেফতার রাজশাহী বিভাগীয় তায়কোয়ানদো এসোসিয়েশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল- ২০২৪ রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২১ মহানগরীর ছোটবনগ্রামে লোন দেওয়ার নামে প্রতারণা, প্রতারক তাওহীদ খান আটক নৌবাহিনীর প্রধানের সাথে রাসিক মেয়রের সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়
কাশ্মীরে বেড়াতে আসুন নির্ভয়ে, জুলফিকার

কাশ্মীরে বেড়াতে আসুন নির্ভয়ে, জুলফিকার

কাশ্মীরে বেড়াতে আসুন নির্ভয়ে, জুলফিকার
কাশ্মীরে বেড়াতে আসুন নির্ভয়ে, জুলফিকার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রথমেই আমি একটা কথা বলব, কাশ্মীরে এখন যা পরিস্থিতি, সেই তুলনায় এখানে হিংসা অনেক কম এই বার। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে যে পরিমাণ প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, স্টোন পেল্টিং হতে পারত বলে আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, ততটা হয়নি বলা যায়। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা অবশ্যই ঘটেছে। তবে সেটাকে কাশ্মীরের হিংসার ছবি বলা যায় না।

গত কয়েক দিনের জঙ্গি হানার ঘটনায় আমরা ব্যথিত। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর যাতে কোনও হামলা না হয় সে বিষয়েও জোরদার চেষ্টা চলছে আমাদের তরফে। সিআরপিএফ, আর্মি, কাশ্মীর পুলিশ—প্রত্যেকে একসঙ্গে লড়ছে। আমরা যে কোনও কিছুর জন্য প্রস্তুত। এবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি। পর্যটকদের জন্য, বিশেষ করে বাঙালি পর্যটকদের জন্য আমি নিজে বলছি, ভয় পাবেন না। কাশ্মীর বড় সুন্দর জায়গা। এতটাই সুন্দর, যে তাকে আমরা ভূস্বর্গ বলি। এই ভূস্বর্গকে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে বিচার করবেন না।

কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ কখনও কোনও পর্যটকের ক্ষতি করেছেন, কাউকে হেনস্থা করেছেন, এমনটা ঘটেছে বলে শোনা যায় না। কাশ্মীরের নামকরা ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতেও কোনও হামলা হয় না চট করে। আমি বলছি, একটুও ভয় না পেয়ে পর্যটকেরা আসুন। কাশ্মীরের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভেবে আসুন এখানে বেড়াতে। আমরা তো আছিই। যে কোনও অসুবিধায় আমাদের টোল ফ্রি হেল্পলাইন নম্বরে কল করুন: ১৪৪১১। এ ছাড়াও জেনে রাখুন, সাধারণ মানুষও আপনাদের আগলে রাখবে। এঁদের আতিথেয়তা কিন্তু মনে রাখার মতো।

কাশ্মীর শান্ত হোক, এটাই আমাদের চাওয়া। আমরা চেষ্টা করছি। আমি তো স্থানীয় মানুষদেরও কৃতিত্ব দেব, অধৈর্য না হওয়ার জন্য, পর্যটকদের প্রতি এত মানবিক আচরণ করার জন্য। শুধু পর্যটক কেন, এই বার এই অবস্থাতেও কোনও সেনা আহত হননি পাথর বা অন্য কোনও আঘাতে। মারা যাওয়া তো দূরের কথা। কাশ্মীরের জঙ্গি পরিস্থিতি বা আইন শৃঙ্খলা—দুইই এখন ঠিক আছে বলে মনে করছি আমরা। আমি ২০১৬ সাল থেকে কাশ্মীরে পোস্টেড। এর আগে দীর্ঘদিন কলকাতায় থেকেছি। ওখানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। ছত্তীসগড়ে যখন পোস্টেড ছিলাম, তখন মাওবাদী হানার ঘটনা রোজকার ব্যাপার ছিল সেখানে। কিন্তু এসবের পরেও কাশ্মীর অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ।

সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে অন্য কোনও সমস্যার তুলনা হয় না। আমি নিজে কাশ্মীরে তিন বছর থেকে বলছি, সোপিয়ানে যেটা ঘটল, বাইরের ট্রাক চালকদের মেরে ফেলা হল, এটা কাশ্মীরের জন্য লজ্জা। এত ঘটনা এর আগে ঘটেছে, বাইরের মানুষকে খুন করা হয়েছে বলে শুনিনি আমরা। কিন্তু এই বার জঙ্গিরা কোনও দিক থেকে সুবিধা করতে না পেরে এটা করল। সোপিয়ানের আপেল ব্যবসাটা টার্গেট করল ওরা। কোনও কিছুর মধ্যে নেই, নিছক পেটের দায়ে বাইরে থেকে কাজ করতে এসেছে এরকম তিন তিনটে মানুষকে মারল। এই জঙ্গিদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগ স্পষ্ট। কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষরাও এই ঘটনা মোটেও মেনে নিচ্ছেন না। সন্ত্রাসবাদ দমনে আমাদের সাহায্য করছেন ওঁরা।

আমরা ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছি। মূল চক্রীদেরও চিহ্নিত করেছি। গোটা এলাকায় অপারেশন চলছে, খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে এই নিকৃষ্ট হামলার মাথা। তবে আমি একটা কথা বলব, কাশ্মীরের ৯৯ শতাংশ মানুষ জঙ্গিদের সঙ্গে না থাকলেও, এক শতাংশ হলেও কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে আছেন। নইলে সোপিয়ানের এতটা ভিতরে ঢুকে তিনটে মানুষকে খুন করতে পারত না জঙ্গিরা। সোপিয়ান জুড়ে যে কড়া প্রহরা তা গলে বাইরে থেকে গিয়ে এই কাণ্ড ঘটানো অসম্ভব। টাকার লোভে হোক বা প্রাণের ভয়ে, কিছু মানুষ এখনও জঙ্গিদের সাহায্য করে চলেছে।

গরিব মানুষকে ভয় দেখিয়ে বা টাকা দিয়ে খারাপ কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে জঙ্গিরা। গোটা এলাকায় সার্চ অপারেশন চলছে। ঘরে ঘরে ঢুকে খোঁজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। আগে এই নিয়ে অনেক ক্ষোভ ছিল। রাগ ছিল। অভিযোগ উঠত সেনা অত্যাচারের। এখন কিন্তু সেসব অনেক কমে গেছে। সন্ত্রাসবাদের আক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে চাইছে সাধারণ মানুষও। সেনা যে তাদের পাশে আছে, তা-ও বুঝেছে অনেকে। আমরা নিজেরা এ কথা মানি যে, রাতবিরেতে একদল সেনা হঠাৎ ঘরে ঢুকে সার্চ করলে তা কারও ভাল লাগবে না। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে হেনস্থা করা নয়। যদি এমন অভিযোগ আসে, কোথাও অকারণে কোনও স্থানীয় মানুষকে হেনস্থা করেছেন কোনও সিআরপি জওয়ান, আমরা কিন্তু সেই অভিযোগেরও খতিয়ে তদন্ত করি।

৩৭০ ধারা নিয়ে বিলোপ করা নিয়ে ব্যক্তিগত মত আমি প্রকাশ করব না। তবে সারা দেশের মানুষের সমান সুবিধা কাশ্মীরের মানুষরা পাবেন, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরি—সমস্ত পরিষেবা অনেক ভাল হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমার মনে হয়, সাধারণ মানুষ ৩৭০ ঠিক কী জিনিস, সংবিধান শব্দের অর্থই বা কী—এসব  বোঝেন না। ওঁরা বোঝেন ওঁদের অবস্থা কেমন থাকছে, সেটুকুই। ফলে ৩৭০ উঠে যাওয়ার পরে মানুষের জীবনযাত্রার মান যদি সত্যিই উন্নত হয়, সরকারি প্রতিশ্রুতিগুলি যদি সত্যিই রক্ষিত হয়, আমার মনে হয় না এই ক্ষোভ এবং হতাশা বজায় থাকবে।

হ্যাঁ, মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। যে কোনও পরিবর্তনেই এই সময়টা জরুরি। কিন্তু সে সময়টা পার করে নিজের ভালটা মানুষ অবশ্যই বুঝবে। একটা জায়গায় বাঙালি আর কাশ্মীরিদের খুব মিল আছে। নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জাতিসত্তা বজায় রাখার জন্য এই দুই জাতেরই জান কবুল। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন আমায় আজও অবাক করে। বাঙালি ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনও জাতের পক্ষে শুধু ভাষার জন্য এই লড়াই করা সম্ভব হত বলে আমার মনে হয় না। কাশ্মীরিরাও তাঁদের নিজস্বতাকে সবচেয়ে বেশি সম্মান করেন। সংস্কার, ঐতিহ্য, ইতিহাস কিছুতেই সমর্পণ করতে রাজি নন এঁরা। এঁদের কাছে সবচেয়ে বেশি দামি হল ‘কাশ্মীরিয়ৎ’।

আমার মনে হয়, সরকার এই সব কিছু মাথায় রেখেই যা করার করবে। উন্নয়নের কোপে নিশ্চয় নিজস্বতা ছেঁটে ফেলা হবে না। বাংলায় তো এত মানুষ বাইরে থেকে এসে ব্যবসা করেছেন। বাঙালিয়ানা কি নষ্ট করতে পেরেছে কেউ? এখানেও তেমনটা হবে না। বাইরের ব্যবসায়ী যতই আসুক, এদের নিজস্বতাকে নিশ্চয় সম্মান করা হবে। রাজনৈতিক ভাবেও যদি ধরি, এঁদের নেতৃত্ব তো স্থানীয় মানুষরাই দেবেন। বাইরে থেকে কেউ এসে তো নেতা হবেন না। ফলে সেই নেতা বা নেত্রীও নিশ্চয় কাশ্মীরের নিজস্ব সেন্টিমেন্টকে আঘাত করবেন না।

মতিহার বার্তা ডট কম: ১৯ অক্টোবর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply