মতিহার বার্তা ডেস্ক: যুবলীগের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একই সঙ্গে তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। ফলে তারা কোনো টাকা উত্তোলন বা স্থানান্তর করতে পারবেন না। আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১১৬ ধারার ক্ষমতাবলে সম্প্রতি এনবিআর এ আদেশ দিয়েছে।
একই তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লেক ভিউ প্রোপার্টিজ ও রাও কনস্ট্রাকশনের হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করেছে এনবিআর।
চিঠিতে তাদের বর্তমান ঠিকানা দেয়া হয়েছে ধানমন্ডির ৮ /এ সড়কের ইস্টার্ন হেরিটেজ, রমনার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের ৪৫ নম্বর বাসা ও চট্টগ্রামের রাউজানের সূত্রাপুর।
এর আগে ৩ অক্টোবর ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তার নামে থাকা সব হিসাবের লেনদেন তথ্য, বিবরণীসহ সব পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট।
সম্প্রতি যুবলীগের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও টেন্ডারবাজির অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর থেকে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর নামও উঠে আসে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার করা হয় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীমসহ অনেকেই। যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সম্পৃক্ততাও বেরিয়ে আসে।
তার আলোকে ইতিমধ্যেই ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা ছাড়াও তার বিদেশে যাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর পর থেকেই আড়ালে চলে যান ওমর ফারুক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাকে ছাড়াই সম্মেলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সংগঠনটি। তাকে ছাড়াই হয়েছে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভা।
অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। ঢাকা মহানগর ও দেশব্যাপী জেলা কমিটিগুলোও হয়েছেন তার পকেটের লোক দিয়ে।
নিজেকে তরুণ ভাবাপন্ন ৭১ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একক ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। শুরুতে সাবেক নেতাদের পরামর্শ ছাড়াই একটি ঢাউস কমিটি গঠন করেন তিনি। অভিযোগ আছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি অনেক নেতাকে কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। পদভেদে ১০ লাখ থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। ফ্রিডম পার্টি ও যুবদলের অনেকে টাকার বিনিময়ে ঠাঁই পেয়েছেন যুবলীগে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।
ওমর ফারুক চেয়ারম্যান হওয়ার পর যুবলীগে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন সুবিধাবাদী ও দুর্বৃত্তরা। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এক সময়কার পিয়ন কাজী আনিসুর রহমান কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক পদ পেয়ে যান ওমর ফারুকের কল্যাণে। পরবর্তীতে টাকার বিনিময়ে এমন অনেককে নেতা বানানোর ক্ষেত্রে যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের ভূমিকা রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। কাজী আনিস যুবলীগ অফিসের পিয়ন থেকে নেতা হন এবং এখন অনেক বিত্তবৈভবের মালিক। তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘কালেক্টর’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ৩০ লাখ থেকে কোটি টাকার বিনিময়ে আনিসের মাধ্যমে পদ পেয়েছেন অনেকেই। সুত্র: যুগান্তর
মতিহার বার্তা ডট কম – ২১ অক্টোবর ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.