শিরোনাম :
গোদাগাড়ীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান কর্তন রাজশাহীতে বালু মজুদ করতে ১০ একর জমির কাঁচা ধান সাবাড় বিশ্বের দীর্ঘতম গাড়িতে রয়েছে সুইমিং পুল, হেলিপ্যাডও ছুটির দিনে হেঁশেলে খুব বেশি সময় কাটাতে চান না? রবিবারে পেটপুজো হোক তেহারি দিয়েই দাম দিয়ে ছেঁড়া, রংচটা জিন্‌স কিনবেন কেন? উপায় জানা থাকলে নিজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন উন্মুক্ত বক্ষখাঁজ, খোলামেলা পিঠ, ভূমির মতো ব্লাউজ় পরেই ভিড়ের মাঝে নজরে আসতে পারেন আপনিও স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য বাড়িতেই স্ক্রাব তৈরি করে ফেলতে পারেন, কিন্তু কতটা চালের গুঁড়ো দেবেন? গরমে শরীর তো ঠান্ডা করবেই সঙ্গে ত্বকেরও যত্ন নেবে বেলের পানা, কী ভাবে বানাবেন? গাজ়া এবং ইরানে হামলা চালাতে ইজ়রায়েলকে ফের ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্রসাহায্য আমেরিকার! ইজ়রায়েলকে জবাব দিতে সর্বোচ্চ নেতার ফতোয়ার কথাও ভুলতে চায় ইরান, এ বার কি পরমাণু যুদ্ধ?

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?
কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?

মতিহার বার্তা ডেস্ক: বাংলাদেশের রহস্যময় ব্যক্তিদের মধ্যে ‘আজিজ মোহাম্মদ ভাই’ আলোচিত একটি নাম। যাকে নিয়ে রহস্য আর রোমাঞ্চের কোনো শেষ নেই! নামের মধ্যেও লুকিয়ে আছে রহস্যের গন্ধ। তবে তিনি চলচ্চিত্র জগতের নারী ও হত্যাকে কেন্দ্র করে আলোচনার চূড়ান্ত সীমায় উঠে আসেন। তবে এসব গল্পের কতটুকু সত্য আর কতটুকু মুখরোচক বা মিথ্যা সে নিয়েও আছে নানা মত।এবার জেনে নেয়া যাক রহস্যময় ‘আজিজ মোহাম্মদ ভাই’ সম্পর্কে আদ্যোপান্ত।

আজিজ মোহাম্মেদের নামের শেষাংশে ‘ভাই’ শব্দটি থাকার কারণে অনেকেই তাকে মনে করেন গডফাদার। ধারণা করা হয় সেজন্যই তাকে ভাই বলা হয়। সাধারণত মাফিয়া ডন বা গডফাদারদের ভাই ডাকে তাদের অনুগতরা। কিন্তু আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের নামে ‘ভাই’ শব্দটি মূলত তাদের বংশপদবী। তাদের পরিবারের সকলেরই নামের শেষে ভাই পদবি আছে। এমনকি তার বংশের নারীদের নামের শেষেও ‘ভাই’ ব্যবহার করা হয়। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ভাই। মায়ের নাম খাদিজা মোহাম্মদ ভাই।

জানা যায়, ১৯৪৭ এ ভারত ভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। তারা ‘বাহাইয়ান’ সম্প্রদায়ের লোক। বাহাইয়ানকে সংক্ষেপে ‘বাহাই’ বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এই ‘বাহাই’ পরবর্তীতে ‘ভাই’ হয়ে যায়।

ধর্ণাঢ্য এই পরিবার বাংলাদেশে এসে পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় ঢাকার আরমানিটোলায়।

পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও জড়িয়ে পড়েন ব্যবসায়ে। ব্যবসা ভালো হওয়ায় দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার অর্থ-সম্পদ। অলিম্পিক ব্যাটারি, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। আবার মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত থাকারও প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য। কথিত আছে, ভারতের পলাতক ডন দাউদ ইব্রাহিমের সাথে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

সফল এই ব্যবসায়ী তার ব্যবসার পাশাপাশি ৯০ এর দশকে এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে নাকি, নায়িকাদের রূপের মোহে, নাকি কালো টাকা সাদা করতে, নাকি শুধুই ব্যবসায়িক মানসিকতায় অথবা মিডিয়ার মনযোগ কাড়তে প্রযোজনায় আসলেন- এ নিয়ে রয়েছে নানা মত।

তবে চলচ্চিত্রে এসেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেললেন শক্তিমান এই ব্যবসায়ী। তাকে সমীহ করে চলতেন পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা। ৫০টির মতো চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্লামার আনতেও তার ভূমিকা ছিল অনন্য। নিজের প্রতিষ্ঠান অলিম্পিক ব্যাটারির ‘আলো আলো বেশি আলো’ বিজ্ঞাপনে মিতা নূরের ঝলমলে উপস্থিতি তখন বেশ নজর কেড়েছিল।

এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেফতার হন। প্রচলিত আছে এক নারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই এরশাদ তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। এরশাদ এক নারীকে পছন্দ করেন, একই নারীর প্রতি আকাঙ্ক্ষা ছিল আজিজেরও। অবশ্য দ্রুতই প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই।

এরই মধ্যে ছড়াতে থাকে চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সাথে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প। একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে কিন্তু সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করা হয়।

তবে তিনি ১৯৯৭ সালে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন চিত্রনায়ক সালমান শাহয়ের মৃত্যুর পর। সে সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সেটাকে আত্নহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও সালমান শাহের পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হত্যাকাণ্ড।নানা আলামতেও এটাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই মনে হয়। আবার আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের মতো সালমানের স্ত্রী সামিরারও থাইল্যান্ডে বসবাস সন্দেহকে বাড়িয়েই দেয়।

কথিতে আছে, সালমান শাহ নিহত হওয়ার আগে একটি পার্টিতে সালমানের স্ত্রী সামিরাকে চুমু দেয় আজিজ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সকলের সামনে আজিজকে চড় মারে সালমান। এটাকে মোটিভ হিসেবে ধরেন অনেকেই। যদিও হত্যাকাণ্ডের সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন আজিজ। সালমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে। কিন্তু কোনো প্রমাণ না মেলায় ছেড়ে দেয়া হয় তাকে।

এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় আরেক চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সে সময় সোহেল চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ছিল ঢাকার ডিশ ব্যবসা। এই ব্যবসা নিজেদের কব্জায় নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয় বলে ধারণা।

তবে বারবারই প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছেন আজিজ এবং আজিজ মোহাম্মদ ভাই দাবি করার সুযোগ পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন, মিডিয়াই তাকে ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে বারবার।

২০১২ সালে মাদক ব্যবসার অপরাধে আজিজের ভাতিজা, ইয়াবা সম্রাট বলে খ্যাত আমিন হুদার ৭৯ বছরের জেল হয়েছে।

আজিজের বর্তমান সম্পর্কে যা জানা যায়- বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি। আনন্দ-ফুর্তি করে সময় কাটাতে পছন্দ করা এই লোককে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পার্টিতে, ক্লাবে নারীদের সাথে ফুর্তিরত অবস্থায় দেখা যায়। তার স্ত্রী নওরিন মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে ব্যবসা দেখেন। পরিবারে আর আছে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে।

আর উইকিপিডিয়া বলছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাই একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তিনি হত্যা ও মাদক পাচারসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, রবিবার (২৭ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাসায় অভিযান চালায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। অভিযানে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ ও ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। বাসার ছাদে একটি মিনি বারের সন্ধানও পাওয়া গেছে। এ সময় আটক করা হয়েছে বাড়ির দুই তত্ত্বাবধায়ককে। সুত্র; দৈনিক অধিকার

মতিহার বার্তা ডট কম – ২৭ অক্টোবর ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply