শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করতে হবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে

ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করতে হবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে

মতিহার বার্তা ডেস্ক : এখন থেকে সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করতে হবে। যার পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক হবে, তিনি চাকরির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন। পুলিশ, জনপ্রশাসন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কমচারীদের কেউ মাদক সেবন করেন—এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদক পরীক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের নেওয়া এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে জনপ্রশাসন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, দেশে বর্তমানে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপুলসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্যেও মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হচ্ছে ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। চিঠিতে বলা হয়, ডোপ টেস্টের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করলে যুবসমাজের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, কিছুদিন আগে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নিয়োগের সময় সন্দেহ হওয়ায় ডোপ টেস্ট করার পর ১৮ জনকে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। আরো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি ভয়ংকর। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে। নিয়োগের সময় এ পরীক্ষা করলে শিক্ষার্থীরা সচেতন হবে, ভীতি তৈরি হবে।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ মাঠপর্যায় থেকে প্রায়ই পাওয়া যায়। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, তাদেরও ডোপ টেস্ট করা হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতিবছর এসিআরের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার পাশাপাশি ডোপ টেস্টও বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই কর্মকর্তারা।

এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, উপসচিব, যুগ্ম সচিব পর্যায়ে এমন অভিযোগ প্রায়ই আসে, যদিও সংখ্যাটা খুব কম। সাধারণত তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয় না, কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তাদের নিয়োজিত করা হয়। নতুন যারা চাকরিতে আসবেন, তাদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হলে এ সমস্যা অনেক কমে আসবে।

এদিকে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম তার অধীন পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করালে বেশ কয়েকজনের মাদক সেবনের প্রমাণ পাওয়া যায়। জানতে চাইলে জায়েদুল আলম বলেন, ‘পুলিশ যদি মাদক সেবন করে, তবে তিনি মাদক বিক্রেতাকে সুযোগ-সুবিধা দেবেন—এই বিবেচনায় গত নভেম্বর প্রথম আমরা নিজেদের বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরীক্ষা করি। প্রথম দিনে পাঁচজনকে পাই। পরে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’

সন্দেহ হওয়ায় দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলমও পুলিশসহ মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের ডোপ টেস্ট করান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময় প্রায় দেড় হাজার পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষার নিয়ম জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় ক্লিনিক ইউরিন (মূত্র) সংগ্রহ করেছে প্রথমে। এরপর ডোপ টেস্টের ‘কিট’ (উপকরণ) দিয়ে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মারিজুয়ানা কোকেন আছে কি না টেস্ট করা হয়। এর মধ্য অনেকেই মাদকাসক্ত বলে চিহ্নিত হয়েছিলেন।

পুলিশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায় ও মাদক সেবনের অভিযোগে গত এক বছরে পুলিশের শতাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ছয় মাসেই কেবল ৬৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কনস্টেবল থেকে শুরু করে পুলিশ পরিদর্শক পদের সদস্যরাই মাদক ব্যবসা এবং মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া এএসপি থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন পর্যায়েও কিছু কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসায় সহায়তা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশের বেশ কয়েকটি নিয়োগের সময় অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগে। অনেকে চাকরি হারিয়েছেন।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও বিক্রির বিষয়টি উঠে এসেছে।

এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক চিকিৎসক নিয়মিত মাদক গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে চিকিত্সকদের মাদকাসক্ত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে।

সার্বিক বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘পুলিশের অনেকেই মাদকাসক্ত বলে আগে থেকেই তারা এ প্রস্তাব করে আসছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পেলে আমরা বলে দেব যেন ডোপ টেস্ট না করে কাউকে সরকারি চাকরিতে না নেওয়া হয়।’

মতিহার বার্তা ডট কম ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply