শিরোনাম :
ফ্রিজ়ে রাখা দুধ গরম করলেই ছানা হয়ে যায়! ফেলে না দিয়ে বানিয়ে ফেলুন নতুন ৫ খাবার গোপন করেছিলেন বিয়ে, প্রেমে পড়েছিলেন সহ-অভিনেত্রীর, বহুকামিতা নিয়ে প্রচারে থাকেন বলি নায়িকা ‘আল্লার কাছে পাঠিয়ে দেব’, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্ডোগানের বার্তা রাশিয়ার পরে এ বার আইএসের হানা গৃহযুদ্ধ দীর্ণ সিরিয়ায়, বিস্ফোরণ, গুলিতে নিহত অন্তত ১১ রুয়েটের সাবেক ভিসি ও রেজিস্টারের বিরুদ্ধে মামলা করলো দুদক পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় মৃত ৬ বিশ্বসুন্দরীমঞ্চে এই প্রথম মুসলিমবিশ্বের প্রতিনিধি… দেখে নিন আপনি বুদ্ধিমান কী না! দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু কাজে যাওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু
কাশ্মীর ইস্যুতে কৌশলের লড়াইয়ে ইমরান খানের ‘জয়’

কাশ্মীর ইস্যুতে কৌশলের লড়াইয়ে ইমরান খানের ‘জয়’

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পাকিস্তান তাদের হাতে আটক ভারতীয় পাইলটকে ছেড়ে দেয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমবে বলে এখন ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে- গত কয়েক দিনের এই সংকটে মানুষ যা দেখল বা বুঝল, তাতে জিতল কোন পক্ষ? নরেন্দ্র মোদি আর ইমরান খানের মধ্যে কৌশলের লড়াইয়ে জিতলেন কে?

গত সপ্তাহে ২৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংসদে ঘোষণা করেন- পাকিস্তান ‘শান্তির বার্তা’ দিতে আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেবে।

ইমরান খানের এ ঘোষণার সময় দিল্লিতে বিজ্ঞানীদের একটি সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইমরান খানের ওই ঘোষণার কয়েক মুহূর্ত পরেই মোদি পাকিস্তানকে বিদ্রূপ করে মন্তব্য করেন, ‘পাইলট প্রজেক্ট শেষ হল’ এবং ‘এখন আমাদের আসল খেলায় নামতে হবে’ (পাইলট প্রজেক্ট বলে তিনি পাইলটের ঘটনাকে এক ধরনের পরীক্ষা বলে ইঙ্গিত করে থাকবেন।)

এ সময় তার সমর্থকরা এ বক্তব্যে উল্লাস প্রকাশ করেছে, কিন্তু অনেকেই তার এ মন্তব্যকে রুচিহীন ও উদ্ধত মনে করেছে।

মঙ্গলবার ২৬ তারিখে ভারতীয় জঙ্গিবিমান যখন পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢোকে এবং কথিত সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়, তখন মোদি বিশাল এক নির্বাচনী জনসভা শুরু করেন এই বলে- ‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যোগ্য নেতৃত্বের হাতে এই দেশ নিরাপদ।’ মনে রাখতে হবে ভারতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে আর কয়েক মাসের মধ্যে।

এর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পাকিস্তান ভারতীয় জঙ্গিবিমানটি গুলি করে ভূপাতিত করে পাকিস্তান প্রশাসিত কাশ্মীরে এবং বিমানের পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে বন্দি করে।

দুপক্ষের ওপর উত্তেজনা প্রশমনের জন্য প্রচুর চাপ ছিল। ইমরান খান এগিয়ে আসেন পাইলটকে মুক্ত করার প্রস্তাব নিয়ে।

ভারতের সাবেক কূটনীতিক এবং কৌশলগত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কেসি সিং বলেন, মোদির বিজেপি দলে যারা কট্টরপন্থী এবং ভারতীয় প্রশাসনের ‘ইমরান খানের কূটনৈতিক রিভার্স সুইংয়ের জবাব দেয়া কঠিন হবে।’ (ক্রিকেট খেলায় রিভার্স সুইং বল করার কৌশল হল ব্যাটসম্যানকে বুঝতে না দিয়ে বল আচমকা ব্যাটসম্যানকে লক্ষ্য করে ঘুরিয়ে দেয়া। ইমরান খান তার ক্রিকেট জীবনে বিশ্বের প্রথম সারির একজন খেলোয়াড় ছিলেন।)

নিরাপত্তা সংকট

২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি এমন একটি ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যে, তিনি তার বক্তব্য থেকে নড়েন না। আর তার জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তিকে আনুগত্যের সঙ্গে উজ্জীবিত রেখেছে স্থানীয় গণমাধ্যমে তার সমর্থক বড় একটি অংশ।

এ পটভূমিতে অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যখন তার দেশ একটি ক্রান্তিকালে এসে দাঁড়িয়েছে এবং পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারত আশু যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা এ ধরনের জল্পনা বাড়ছে, তখন মোদি নিজে কেন জাতির উদ্দেশে তার বক্তব্য না রেখে তার আমলা ও সেনাবাহিনীকে দিয়ে কথা বলাচ্ছেন।

ভারতের বড় বিরোধী দলগুলোর মধ্যে অন্তত ২১টি দল মোদির কড়া সমালোচনা করে বলেছে, তার শাসনকালে ভারতে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সংকট যখন চলছে, তখন মোদি তার নির্বাচনী জনসভা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড- এমনকি মোবাইলঅ্যাপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজিরা দেয়া থামাননি।

অনেকেই বলছেন, পাকিস্তান দ্রুত পাল্টা হামলা চালিয়ে ভারতের জঙ্গিবিমান ভূপাতিত করে এবং বিমানের পাইলটকে আটক করে মোদিকে কোণঠাসা করে দিয়েছে।

পাইলটকে বন্দি করার দুদিনের মধ্যেই ইমরান খান বৈরিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, শান্তির কথা বলেছেন এবং পাইলটকে মুক্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কেসি সিং বলছেন, পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নিজের ‘একটি সম্মানজনক ইমেজ তৈরি করেছেন এবং তিনি আলোচনার মাধ্যমে দুপক্ষের বিবাদ মীমাংসার জন্য তৈরি’ এমন ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন।

ইমরান খানের ভারতীয় পাইলটকে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করেছে। ইমরান খান তার দেশের জনগণের উদ্দেশে কথা বলেছেন, তার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং গণমাধ্যমকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করেছেন।

ভারতের অনেক বিশ্লেষক বলছেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন ‘গ্রহণযোগ্য নেতা’ হিসেবে প্রমাণ করেছেন, যিনি ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা না করে বৈরিতা বন্ধের একটি পথ প্রস্তাব করেছেন।

মোদি মনে হয়েছে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ঐতিহাসিক ও লেখক শ্রীনাথ রাঘাবান বলছেন, ‘আপনি যেভাবেই দেখার চেষ্টা করুন না কেন, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারত হতচকিত হয়ে পড়েছে।’

বিবেচনার বিষয়টি হলো- ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় রাতের অন্ধকারে। পাকিস্তান জবাব দেয় দ্রুত এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে পরের দিনই একেবারে প্রকাশ্য দিবালোকে।

‘প্রতিশোধ সঠিক কৌশল নয়’

ভারতীয় পাইলট ধরা পড়ার ঘটনা যেহেতু ছিল অপ্রত্যাশিত, তাই এর পর মোদি ও তার সরকারকে দেখা যায় ভিন্ন সুরে কথা বলতে। তখন তাদের কাছে মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়- পাইলটকে ভারতে ফিরিয়ে আনা। পাকিস্তানের পাল্টা হামলার পর সেনাবাহিনী তাদের ব্রিফিং দেয় ৩০ ঘণ্টা পর। মোদি ও তার সরকারের ব্যাখ্যা দেয়ার জায়গাটা স্পষ্টতই ছিল খুবই সীমিত।

পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উসকানি থেকে একটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া ভারতে নতুন কোনো ঘটনা নয়। মোদির আগে অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং মনমোহন সিংকেও একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। যেখানে আক্রমণ চালানোর সামরিক ক্ষমতা থাকলেও হিসাব করে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, যাতে উত্তেজনার পারদ না চড়ে যায়। রাঘাবান বলছেন, ‘প্রতিশোধ কখনই কৌশলগত লক্ষ্য হতে পারে না। আবেগতাড়িত হয়ে কৌশল ঠিক করলে তা ব্যর্থ হওয়ার বড় ধরনের সম্ভাবা থাকে।’

ভারতের গণমাধ্যমগুলোর একটি বড় অংশ ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেয়ার ঘটনাকে মোদির বিজয় হিসেবে তুলে ধরেছে। খুব কমজনই প্রশ্ন তুলছেন- পুলওয়ামার হামলা গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপক ব্যর্থতার কারণে ঘটেছিল কিনা কিংবা পাকিস্তান প্রকাশ্য দিবালোকে ভারতের প্রতিরক্ষা দুর্গ ভেদ করল কীভাবে?

এ ছাড়া পাকিস্তানের ভেতর সন্ত্রাসীদের কথিত প্রশিক্ষণ শিবিরে ভারতীয় জেট হামলা চালিয়ে কতটা ক্ষতি করতে পেরেছে সে চিত্রও এখনও স্পষ্ট নয়। ওই আক্রমণে ঠিক কতজন মারা গেছে, সে বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনও পরিষ্কার করে কিছু জানাতে পারেনি। যদিও গণমাধ্যমের একাংশ খোলাখুলিভাবে প্রায় ৩০০ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে।

কাজেই এসব কঠিন প্রশ্ন নিয়ে মোদির ভাবার সময় এসেছে এবং তার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে কিনা তা নিয়েও তার মাথাব্যথার কারণে তৈরি হয়েছে।সূত্র: যুগান্তর।

যদিও কেউ কেউ বলছেন ইমরান খান হয়তো তার দেশবাসীর কাছে, এমনকি ভারতেও বহু মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের লড়াইয়ে জিতে গেছেন, কিন্তু ভারতে নিজের ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে মোদি যে পুরো হেরে গেছেন তেমনটি এখনই বলা যাবে না।

মতিহার বার্তা ডট কম ০৪মার্চ ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply