নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর মাঠে মাঠে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা-মাড়াই। ধান মেপে ঘরে তুলে চাষিরা বলছেন, ধানের ফলন ভাল। আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর বোরো ধান চাষের পুরোটা সময়জুড়েই ছিল খরা। তাই ধানের ফলনও ভাল। সেচ দিতে সমস্যা হলেও বোরো ধানের জন্য খরাই ভাল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ সপ্তাহের শুরুর দিকে মাঠে মাঠে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৯১০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। মাঠে আছে ১৪ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমির পাকাধান। জেলায় এ বছর মোট ৬৬ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামে শ্রমিকদের দিয়ে নিজের জমির ধান কাটাচ্ছিলেন আনিসুজ্জামান হিটলার। তিনি বলেন, ধান খারাপ হয়নি। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২২ মণ ধান হবে বলেই মনে হচ্ছে। মাড়াই শেষে ওজন করলে বোঝা যাবে।
তানোরের মুন্ডুমালা এলাকার চাষি কুরবান আলী জানান, দুদিন আগে তাঁর জমির ধান কাটা-মাড়াই শেষ। প্রতি আড়াই মণ ধানের জন্য শ্রমিকদের ২০ কেজি করে ধান দিয়েও বিঘাপ্রতি তিনি ২১ মণ ফলন পেয়েছেন। বাজারে এখন ধানের দামও ভাল। প্রতিমণ নতুন ধান ১ হাজার ৩০ থেকে ১ হাজার ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধান বেচে তাঁর লাভ হবে বলেই জানান কুরবান।
কৃষি বিভাগ বলছে, যে ধানের যত বেশি ফলন সেই ধান সবার পরে পাকে। এখন শুধু ব্রি-২৮ জাতের ধান কাটা চলছে। কয়েকদিন পর পাকবে ব্রি-৮১, ৮৪ ও ২৯ জাতের ধান। এসব ধানের ফলন আরও ভাল হবে। এখন পর্যন্ত ব্রি-২৮ জাতের ধানে বিঘাপ্রতি গড় ফলন পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ২০ মণ। চালের হিসাব ধরলে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৪ দশমিক ১ মেট্রিক টন। এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কেজেএম আব্দুল আউয়াল বলেন, খরা বেশি হলে সেচের সমস্যা হয়, এটা সত্য। কিন্তু খরায় পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় কম। তাই ফলন ভাল হয়। এবার দীর্ঘ সময় ধরে খরা থাকায় ধানের ফলন ভাল হচ্ছে। সব ধান কাটা শেষ হলে গড় ফলন আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, পানির সংকট হলে যে ফলন ভাল হবে সে রকম কোন বিষয় নেই। বরং আমন মৌসুমে বৃষ্টি হয়। ধানগাছ প্রচুর পানি পায়। সে কারণে পোকামাকড়ের উপদ্রবও বেশি হয়। হিসাব করলে দেখা যায়, আমনের ফলন বোরোর চেয়ে অর্ধেক। রাজশাহীতে এ বছর লু হাওয়ার হিটশকে ২৮ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ফলন ভাল হওয়ায় জেলার মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছেন কৃষিবিদ কেজেএম আব্দুল আউয়াল।
তিনি বলেন, যেসব চাষির ধান নষ্ট হয়েছে তাঁরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেনই। কিন্তু জেলার মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় কোন প্রভাব পড়বে না। বরং লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। জেলায় এ বছর ২ লাখ ৮৪ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
এদিকে এ বছর রাজশাহীতে ৮ হাজার ১৯৯ মেট্রিক টন ধান কিনবে সরকার। প্রতিকেজি ২৭ টাকা দরে ধান কেনা হবে। সে হিসাবে প্রতিমণ ধানের দাম আসে ১ হাজার ৮০ টাকা, যা ধানের বর্তমান বাজারের চেয়ে ৫০ টাকা বেশি। কোন কোন কৃষক সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দেবেন সেই তালিকাও চূড়ান্ত করছে কৃষিবিভাগ। প্রত্যেক কৃষক সর্বোচ্চ তিন টন ধান দিতে পারবেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং আহরণ ও ব্যয়ন কর্মকর্তা সাহিদার রহমান জানান, রাজশাহী মহানগর ছাড়া ৯ উপজেলায় সরকারিভাবে ধান কেনা হবে। এর মধ্যে গোদাগাড়ীতে ১ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন, পবায় ৫৪০ টন, তানোরে ১ হাজার ৬১২ টন, মোহনপুরে ৮২৩ টন, বাগমারায় ২ হাজার ৪৪১ টন, দুর্গাপুরে ৪৭১ টন, পুঠিয়ায় ৩৩২ টন, চারঘাটে ৩৭ টন এবং বাঘায় ৯৩ মেট্রিক টন ধান কেনা হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান সংগ্রহ শুরু হলেও রাজশাহীতে হয়নি। কৃষিবিভাগের তালিকা প্রস্তুত হলেই ধান নেয়া শুরু হবে।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.