রাজশাহী চারঘাটে বেড়েই চলেছে অবৈধভাবে পুকুর খনন

রাজশাহী চারঘাটে বেড়েই চলেছে অবৈধভাবে পুকুর খনন

রাজশাহী চারঘাটে বেড়েই চলেছে অবৈধভাবে পুকুর খনন
রাজশাহী চারঘাটে বেড়েই চলেছে অবৈধভাবে পুকুর খনন

চারঘাট প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাট উপজেলায় গাণিতিক হারে বেড়েই চলেছে ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খননের কাজ করোনাকালীন সময়ে লকডাউনের সুযোগ নিয়ে উপজেলার প্রভাবশালী জমির মালিকগন দুই ফসলি ও তিন ফসলি জমিগুলো কোন তোয়াক্কা না করে সহজেই প্রায় শতাধিক পুকুর খননের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। ফলে দিন দিন কমছে ধানী জমিসহ অন্যান্য কৃষি ফসলী জমি।

এমন অবস্থায়, উপজেলা প্রশাসন এর বিভিন্ন মহল সহ দলীয় নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে। জেলা ও উপজেলা আইন শৃংখলা মিটিংয়ে বার বার পুকুর খনন বন্ধে আলোচনা হলেও তা বন্ধ হচ্ছে না বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম ।

গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চারঘাট ইউনিয়নের বামনিদহ বিলে এরশাদের ছেলে দেলু, আইয়ুব, শাহেদ ও ওহাবের জমিতে ও চৌধুরী পাড়ার পুরো বিলের জমি, ভায়ালক্ষিপুর ইউনিয়নের কাশেমের মোড়ে আজিজুলের জমি, সারদা ইউনিয়নের পাটিয়াকান্দিতে গোপাল মাস্টারের জমিতে, নিমপাড়া ইউনিয়নের বালাদিয়াড়ে আমিনুলের জমি, শলুয়া ইউনিয়নের হলিদাগাছি জাগিরপাড়ার জাহাঙ্গীর মাস্টারের জমিতে, ভেকু দিয়ে মাটি কেটে বড় বড় পুকুর খনন করছে।

অধিকাংশ এ সকল পুকুরগুলোর আশে পাশে রয়েছে আমের বাগান, ধানী জমি, সংযোগ সড়ক, বিলের পানি এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়ার সংযোগ সাঁকো। মাটি আনা নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ট্রাকটরগুলো চলাচলের ফলে বিস্তীর্ণ ফসলির জমিও নষ্ট হচ্ছে। এতে করে এসকল জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এক কৃষক পরানপুর বামনিদহ গ্রামের মাজেল। তিনি আরও বলেন অপরিকল্পিত পুকুর খননের ফলে বামনিদহ বিলের মাঝদিয়ে রাস্তায় দুইটি সাকোঁর উভয় মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করায় এ বিলে অধিকাংশ জমিতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফসলের জমি কমায় ও জলাবদ্ধতার কারনে কৃষি শ্রমিকরা গ্রামে কাজ হারাচ্ছেন। ফলে কাজের জন্য অধিকাংশ কৃষি শ্রমিকদের শহরে যেতে হয়।
মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত আফজাল এখন ৫ বিঘার জায়গা পুকুর খনন করে উত্তোলিত মাটি আশে পাশের বিভিন্ন ভাটায় বিক্রয় করছেন। প্রতি ট্রাক মাটি ৬’শ’ থেকে ৭ ’শ’ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন এ মাটি আনা নেয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ১৫-২০টি ট্রাকটর যার অধিকাংশই অনুমোদনহীন । পাশাপাশি গত একমাসের ব্যবধানে মাটি বহনকৃত ট্রাকটর দুর্ঘটনায় একজন মটরসাইকেল আরোহী ও একজন হেলপার মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সরকারী নিয়ম অনুযায়ী পুকুর, খাল-বিল, নদ-নদী, চরা পতিত ও আবাদী জমি থেকে মাটি কাটা নিষিদ্ধ। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে নির্মিত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীন সড়কগুলো ব্যবহার করে ভারি যানবাহন দিয়ে ইট ভাটার কাচাঁমাল আনা নেয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু এর কোন নিয়ম মানছেনা স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।

এলাকার একাধিক জমির মালিক জানান, পুকুর জমির মালিকগন স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে পুকুরগুলো খনন করছেন। এছাড়া পুকুরের মাটি আনা নেয়ায় ট্রাকটরগুলো বার বার আসা যাওয়ার ফলে ধুলোতে আমাদের ফসলি জমির ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। সেই সাথে পরিবেশের সাথে সাথে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাটও।

এই সকল বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সামিরা জানান, এখন পর্যন্ত কোন এ বিষয়ে অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভুমি) নিয়তি রানী কৈরি বলেন, ছুটি নেয়ায় আমি ঢাকায় আছি তবে কর্মস্থলে ফিরে তদন্ত স্বাপেক্ষে অবৈধ পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply