শিরোনাম :
প্রেমিকার বাড়ির সামনে বিষপানে প্রেমিকের মৃত্যু; বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘শাড়ি ক্যানসার’ কেন হয়? তার উপসর্গই বা কী? জানালেন চিকিৎসক ডায়াবেটিকেরাও ভাত খেতে পারেন, তবে মানতে হবে কিছু নিয়ম মল্লিকার সঙ্গে চুমু বিতর্ক, মুখ দেখাদেখি বন্ধ কুড়ি বছর, সাক্ষাৎ পেয়ে কী করলেন ইমরান? ক্যাটরিনার জন্যই সলমনের সঙ্গে সম্পর্কে দূরত্ব, ইদে স্বামীকে নিয়ে ভাইজানের বাড়িতে আলিয়া! রাজশাহী মহানগরীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ২৬ ১৬ মাসের মেয়েকে বাড়িতে একা রেখে ছুটি কাটাতে যান মা, না খেয়ে, জল না পেয়ে মৃত্যু! সাজা যাবজ্জীবন রাজশাহীতে ট্রাকে টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি, আটক ২ পুঠিয়ায় পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ৩ ঈদের সাথে যুক্ত হওয়া নববর্ষের উচ্ছ্বাসে বিনোদন স্পট পরিপূর্ণ
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর পদোন্নতি

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর পদোন্নতি

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর পদোন্নতি
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর পদোন্নতি

অনলাইন ডেস্ক: ২০১৯ সালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি সুপারশপ থেকে দুধ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছিলেন এক বেকার বাবা। একপর্যায়ে প্রকৃত ঘটনা জানতে পেরে ওই বাবাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম সোহাগ।

ওই বছরের ১১ মে ঘটনাটি নিজের ফেসবুক আইডিতে তুলে ধরেন জাহিদুল ইসলাম। পরে সেই পোস্টটি ভাইরাল হয়। দেশজুড়ে সহানুভূতির মধ্যে ওই বাবাকে চাকরি দেয় স্বপ্ন কর্তৃপক্ষ। ঠিক তখন থেকেই আলোচিত পুলিশ অফিসার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ।

২০১৯ সালের ৪ নভেম্বর খিলগাঁও থেকে বদলি হয়ে যান মতিঝিল জোনে। সেখানেও তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্বপালন করছেন। ২০১৯ সালে জাহিদুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদক পিপিএম সেবা পদক অর্জন করেন। তার সহধর্মিণীও একজন পুলিশ অফিসার।

রোববার (২ মে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পুলিশের ১০৫ জন সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদেরকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান। ওই তালিকায় একসঙ্গে পদোন্নতি পান জাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও তার সহধর্মিণী শামীমা আক্তার সুমী।

জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন, অন্যদিকে তার সহধর্মিণী শামীমা আক্তার সুমী সহকারী কমিশনার (এসি) হিসেবে স্পেশাল ব্রাঞ্চে (এসবি) দায়িত্বপালন করছেন। দু’জনেই ৩৩তম বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পান। বরগুনার ছেলে জাহিদ আর মাদারীপুরের মেয়ে সুমী।

জাহিদুল-সুমী দম্পতির স্বপ্ন ছিল পুলিশে চাকরি করার। এজন্য করেছেন কঠোর অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম। শেষপর্যন্ত স্বপ্নকে ছুঁতে পারেন। তবে তাদের এই সফলতায় ছিল কঠিনতর চ্যালেঞ্জ। আর সেসব চ্যালেঞ্জকে জয় করেই আজ তারা সফল মানুষ, সফল দম্পতি।

তাদের দু’জনের প্রথম দেখা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ৩৩তম বিসিএসের ফল প্রকাশের পর। এর কয়েকদিন পর শুরু হয় পেশাগত প্রশিক্ষণ। কঠোর নিয়মের মধ্যে থাকা সেই প্রশিক্ষণে সামান্যই দেখা হত তাদের। এভাবেই একটা সময় তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। তারপর প্রেম-ভালোবাসা।

সবশেষ পরিবারের সিদ্ধান্তে বসেন বিয়ের পিঁড়িতে। দিনটি ছিল ২০১৫ সালের ১৭ জুলাই। ছোট থেকেই বাবার স্বপ্ন পূরণে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ ছিলেন সুমী। ভাই-বোনদের মধ্যে সুমী ছিলেন সবার ছোট। সেই সুমীই পূরণ করেছেন বাবার স্বপ্ন। কারণ বাবা চাইতেন তার তিন সন্তানের মধ্যে কেউ একজন পুলিশে আসবে।

ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ হিসেবে পরিচিত জাহিদ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে সম্পন্ন করেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হওয়ার সুবাদে খুব সহজেই পেয়ে যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগ। সেখানে শিক্ষকতা করার সময়ই সফল হন বিসিএস-পুলিশ ক্যাডারে।

জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল পুলিশ হওয়ার। আমার স্বপ্নের সঙ্গে যদি বাস্তবে কিছু পেয়ে থাকি সেটা হলো বিসিএস-পুলিশ ক্যাডারে সফল হওয়ার বিষয়টি।

জীবনে মাত্র একদিন বেকার থেকেছেন জাহিদ। ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি অব্যাহতি দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদ থেকে। তার ঠিক একদিন পর ৭ আগস্ট যোগ দেন বাংলাদেশ পুলিশে। ট্রেনিংয়ে ১৪৭ জন কর্মকর্তাকে পেছনে ফেলে অর্জন করেন দ্বিতীয় স্থান।

বুঝতে শেখার পর থেকেই জাহিদের স্বপ্ন ছিল পুলিশের চাকরি করার। আর এজন্য করেছেন কঠোর অধ্যবসায়। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের মতো পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখায় কাজ করতে পেরে গর্বিত এ কর্মকর্তা।

চাকরির শুরুতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন জাহিদ। প্রথমে ডিএমপির প্রটেকশন ডিভিশন, পরবর্তীতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট, তারপরে খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার এবং সর্বশেষ মতিঝিল জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশের গুটিকয়েক কর্মকর্তার কারণে পুরো পুলিশ বিভাগের সুনামহানির বিষয়টা মোটেও মেনে নিতে পারেন না তিনি। বিশ্বাস করেন, পুলিশের অবস্থান এখন আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা সবকিছুতেই দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে পুলিশের দক্ষতা।

দু’জনেই যেহেতু পুলিশ অফিসার, সেহেতু বাইরে কাজ। সন্তান, সংসার কিভাবে সামলান? এমন প্রশ্নের জবাবে শামীমা আক্তার সুমী বলেন, যে কোনও সংসারেই বোঝাপড়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক সহযোগিতা আর নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার না থাকলে কোনো সম্পর্ককেই বেশিদূর টেনে নেয়া যায় না।

‘একটা সময় সম্পর্কের সূত্রটা ছিঁড়ে যাবেই। যেহেতু চাকরির ধরনের কারণে আমাদের দু’জনের ব্যস্ত থাকতে হয় তাই এর বাইরে পুরোটা সময় আমরা দু’জনের জন্য বরাদ্দ রাখি।’

তিনি বলেন, সত্যি কথা বলতে আমরা দু’জনে খুব পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। এজন্য ব্যস্ততার পরও দুই বাচ্চা আর সংসার সামলাতে এখন পর্যন্ত আমাদের খুব একটুও বেগ পেতে হয়নি। তবে এক্ষেত্রে আমাদের দু’জনের মা-বাবার অবদান অনস্বীকার্য। তাদের দেয়া ও সাপোর্ট ছাড়া সবকিছু এত ভালোভাবে সামলানো প্রায় অসম্ভব ছিল।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগ থেকে বিএসসি সম্পন্ন করা সুমী বাবার চাকরির সুবাদে এসএসসি পর্যন্ত পড়েছেন প্রায় ১১টি স্কুলে। ছোট থেকেই মেধাবী হওয়ায় ফলাফলের দিক দিয়ে সবসময় থাকতেন এগিয়ে। আর তাই বিসিএসের ক্ষেত্রেও ঘটেনি তার ব্যতিক্রম।

পদে পদে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও এ পেশাকে বেশ উপভোগ করেন সুমী। সংসারে বেশি সময় দিতে না পারলেও যে স্বল্প সময়টা পরিবার ও সন্তানকে দিতে পারেন সেটুকুই অনেক বেশি উপভোগ্য মনে হয় তার। সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়েন স্বামী-সন্তানের সঙ্গে।

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এ দম্পতি বলেন, আত্মবিশ্বাসটা প্রয়োজন সবার আগে। যে যেত বেশি আত্মবিশ্বাসী, সে ততবেশি এগিয়ে থাকবে এই প্রতিযোগিতায়। আর প্রয়োজন অধ্যবসায় এবং নিজের লক্ষ্যের প্রতি আনুগত্য। তাহলেই সফলতা আসবে।

ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র সব জায়গাতেই এ দম্পতির জন্য অপেক্ষা করে চ্যালেঞ্জ। আর সেসব চ্যালেঞ্জকে জয় করেই আজ তারা সফল মানুষ, সফল দম্পতি। কোনো বাধাকে বাধা মনে না করে সাহসীকতার সাথে মোকাবিলা করেন তারা।

একই পেশায় হওয়ায় একজন অন্যজনকে সহযোগিতাও করতে পারেন। পুলিশের চাকরিতে থাকার কারণে দু’জনকেই চ্যালেঞ্জিং এ পেশায় পেরুতে হয় নানা চড়াই-উৎরাই। সেখানে মজার মজার নানা অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাদের ঝুলিতে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply