মতিহার বার্তা ডেস্ক : পরনে কয়েদির পোশাক, হাতে হাতকড়া পরে বিচারকের সামনে সে দিন হাসিমুখে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল সেন্ট্রাল ক্রাইস্টচার্চের নুর ও লিনউড মসজিদে হামলার অন্যতম চক্রী ব্রেন্টন হ্যারিসন ট্যারান্ট।
১৮ বছরের অস্ট্রেলীয় এই যুবকের মুখে গণহত্যার লেশমাত্র অনুতাপ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে দ্বিতীয় বারের জন্য ব্রেন্টনকে আদালতে তোলা হয়, তার মুখে উদ্বেগের ছাপ ছিল স্পষ্ট। মসজিদ হামলার এই মূল চক্রীর বিরুদ্ধে ৮৯ দফা অভিযোগ আনতে চলেছে নিউজিল্যান্ডের পুলিশ। জানানো হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ৫০টি খুন ও ৩৯টি খুনের চেষ্টার মামলাও আনা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, গণহত্যা, নাশকতা-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ব্রেন্টনের বিরুদ্ধে। প্রথমে একটি হত্যার মামলা দায়ের করা হবে এমন কথা উঠলেও, পরে সেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়। আগামিকাল ফের এই হামলার শুনানি হবে। বর্তমানে কড়া নিরাপত্তায় ব্রেন্টনকে অকল্যান্ডের একটি জেলে রাখা হয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আদালতে না এনে বরং জেলের ভিতর থেকেই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে শুনানি হতে পারে।
গত ১৫ মার্চ, শুক্রবারের সাপ্তাহিক নমাজ চলার সময় নুর ও লিনউড মসজিদে পালা করে হামলা চালিয়ে ৫০ জনকে হত্যা করে ব্রেন্টন। জখম হন অন্তত ৪৮ জন। হামলা চালানোর আগে হেলমেট লাগানো ক্যামেরায় ১৭ মিনিটের ভিডিও তুলে লাইভ স্ট্রিমিং করেছিল ব্রেন্টন। তাতে দেখা গিয়েছিল, সেনার পোশাক পরে গাড়ি থেকে নামছে আততায়ী।
হাতে অত্যাধুনিক মেশিনগান তাতে লেখা অতিদক্ষিণপন্থী শ্বেতাঙ্গ জঙ্গিদের নাম, চোখে হিংস্র দৃষ্টি। প্রথমে আল নুর মসজিদে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করে মন্দিরে নমাজ পড়াতে বহু মানুষকে। গুলি আর মানুষের আর্তনাদ ছাপিয়েও শোনা যায় ব্রেন্টনের বিদ্বেষমূলক উক্তি। নুর মসজিদে হত্যালীলার পরে ব্রেন্টন বাহিনী পৌঁছয় ছ’কিলোমিটার দূরের লিনউড মসজিদে। সেখানেও অবাধে চলে হত্যালীলা।
অতি দক্ষিণপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী ব্রেন্টন হামলার আগে ৭৩ পাতার, সাড়ে ষোলো হাজার শব্দের ‘ম্যানিফেস্টো’ টুইটারে পোস্ট করেছিল। তাতে বার বার নরওয়ের শ্বেত সন্ত্রাসবাদী অ্যান্ডের্স বেরিং ব্রেইভিকের উল্লেখ করেছিল সে। এ দিকে, ক্রাইস্টচার্চে গণহত্যার জেরে দেশে অস্ত্র আইন পাল্টানোর দাবিও জোরালো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অস্ত্র আইন সংস্কার হবে। সরকারি আবেদনে সাড়া দিয়ে কাজটা শুরু করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষও।
প্রধানমন্ত্রীর মানবিক মুখও নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে। জেসিন্ডার কথায়, ‘‘লোকটি সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে অনেক কিছু দেখাতে চেয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, কুখ্যাত হওয়ার বাসনা।’’ বিশ্বের সব মুসলিমদের প্রতি তাঁর বার্তা, শান্তি, “ক্ষমা আর আল্লার আশীর্বাদ আপনাদের সঙ্গে থাকুক।”
মতিহার বার্তা ডট কম ০৫ এপ্রিল ২০১৯
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.